বৃহস্পতিবার, ৭ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

বিশ্বকে দেখিয়েছি আমরা পারি

লোডশেডিংয়ের রুটিন তৈরি করতে হবে, আলোকসজ্জা না করার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিশ্বকে দেখিয়েছি আমরা পারি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পদ্মা সেতুর মতো স্থাপনা নিজেদের অর্থায়নে করতে পেরে আমরা বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছি, আমরা পারি, বাংলাদেশ পারে। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণেও আমরা সেটা প্রমাণ করছি। গতকাল সকালে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। একই সঙ্গে শেখ জামাল ও রোজী জামালের নামে দুটি পৃথক ডরমেটরিও উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন তিনি। অনুষ্ঠানে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক স্বাগত বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন আইসিটি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, করোনার কারণে আমাদের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নানা সমস্যায় পড়েছি। এরপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ আরও সমস্যা তৈরি করেছে। রাশিয়ার ওপর আমেরিকা ও ইউরোপের স্যাংশন সংকট আরও ঘনীভূত করেছে। এর প্রভাব সারা বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশেও পড়েছে। এগুলো মোকাবিলা করেই আমাদের এগোতে হচ্ছে। তিনি বলেন, যুদ্ধের কারণে তেল, ডিজেল, এলএনজি সবকিছুর দাম অনেক বেড়ে গেছে। এখন বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালিয়ে রাখা কষ্টকর হয়ে গেছে।

এই সরকার ডিজিটাল প্রযুক্তির ওপর বেশি গুরুত্ব দিয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা প্রযুক্তি তৃণমূল পর্যন্ত ছড়িয়ে দিয়েছি। ডিজিটাল বাংলাদেশে সেই গ্রামে বসেও তরুণরা আজ অর্থ উপার্জন করতে পারছে। তরুণদের ডিজিটাল জ্ঞান বাড়াতে আমরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান করে দিচ্ছি। বিশ্বের নাম করা প্রতিষ্ঠানগুলো আমাদের এখানে ব্যবসা করছে। আইসিটিকে আমরা এগিয়ে নিচ্ছি যেন আমাদের ছেলেমেয়েরা অন্য দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারে। আমাদের এটাই লক্ষ্য, বাংলাদেশ একটা আধুনিক দেশ হবে।

বিশ্বের অনেক উন্নত দেশের চেয়ে করোনার ভ্যাকসিন কার্যক্রমে বাংলাদেশ এগিয়ে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, কোনো উন্নত দেশ একটা ভ্যাকসিনও বিনা পয়সায় দেয়নি। বিনা পয়সায় টেস্ট হয়নি। কিন্তু আমরা বিনা পয়সায় করেছি। ডাক্তার নিয়োগ, নার্স নিয়োগ, ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা বিনা পয়সায় করে দিয়েছি।

চলতি বছরে নতুন করে ২ হাজার ৭১৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় উভয় বিভাগের আওতায় ২ হাজার ৭১৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করবে সেই ঘোষণা আমি দিচ্ছি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় যদি আজকেই এই ঘোষণাটা দিতে পারে, তাহলে দেশের মানুষের খুবই উপকার হবে।

মানুষের কষ্ট লাঘবে লোডশেডিংয়ের রুটিন তৈরি করতে হবে : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের এখন একটাই উপায়, কখন, কোন এলাকায় বিদ্যুতের লোডশেডিং হবে সেটার একটা রুটিন তৈরি করা। যাতে মানুষ প্রস্তুত থাকতে পারে। মানুষের কষ্টটা যেন আমরা লাঘব করতে পারি। শেখ হাসিনা বলেন, আমি আশা করি দেশবাসী আমাদের সহযোগিতা করবেন। সবাইকে আহ্বান করছি, প্রত্যেককে নিজ নিজ সঞ্চয় বাড়াতে হবে। খরচের ক্ষেত্রে মিতব্যয়ী হতে হবে। যতটুকু পারা যায় বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হতে হবে। সরকারপ্রধান বলেন, আমি আপনাদের জানাতে চাই বিদ্যুতে মোট ভর্তুকি দিতে হচ্ছে ২৮ হাজার কোটি টাকা। গ্যাসের চাহিদা পূরণের জন্য এবং ইন্ডাস্ট্রি চালু রাখা এবং বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু রাখার জন্য যে এলএনজি আমদানি করছি, সেক্ষেত্রে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে ২৫ হাজার কোটি টাকা। তিনি বলেন, প্রতি কিউবেক মিটার এলএনজি কিনতে সরকারের ব্যয় ৫৯ দশমিক ৬০ টাকা। কিন্তু আমরা সেটা গ্রাহকদের কাছে আগে বিক্রি করেছি মাত্র ৯ দশমিক ৬৯ টাকায়। যেটা সম্প্রতি বাড়িয়ে ১১ টাকা করা হয়েছে। তারপরও বিশাল অঙ্কের ভর্তুকি রয়ে গেছে সেখানে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদেশেও সবকিছুর দাম বেড়ে যাচ্ছে। যেগুলো আমাদের কিনে আনতে হয়। ভোজ্য তেলও আমাদের আনতে হচ্ছে। শেখ হাসিনা বলেন, সবকিছুর দাম এমনভাবে বেড়ে গেছে যে, এখন বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো চালিয়ে রাখা ব্যয়বহুল ও কষ্টকর ব্যাপার হয়ে গেছে। তাই আমাদের নিজস্ব যেটুকু গ্যাস আছে তা দিয়েই চালিয়ে রাখতে হচ্ছে। তিনি বলেন, সেই বিষয়টাও আপনাদের আমি জানাতে চাই। কারণ এখানে যে ফার্নেস অয়েল, যার মূল্য ছিল মাত্র ৭০৮ টাকা। সেটা ইউক্রেন যুদ্ধের পর হয়ে গেছে ১ হাজার ৮০ টাকা। অর্থাৎ ৩৩২ টাকা বা ৫২ শতাংশ বেড়েছে। এলএনজি যেটা মাত্র ১০ মার্কিন ডলারে কেনা যেত, যুদ্ধের ফলে এখন তা ৩৮ মার্কিন ডলার হয়েছে। অর্থাৎ দাম বেড়েছে ২৮০ শতাংশ। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের কয়লাও ১৮৭ মার্কিন ডলার ছিল, এখন তা ২৭৮ মার্কিন ডলার হয়েছে। প্রায় ৬১ শতাংশ বেড়েছে। ডিজেল লিটার যেটা ৮০ মার্কিন ডলার ছিল, এখন ১৩০ ডলার হয়ে গেছে। শোনা যাচ্ছে দাম ৩০০ ডলার পর্যন্ত বাড়তে পারে। অর্থাৎ সারা বিশ্ব এখন একটা ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা ডিজেলের ওপর অনেক নির্ভরশীল। সেই ডিজেলের দাম আরও বাড়বে। প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এই নিষেধাজ্ঞা যদি না হতো তাহলে কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থাকলেও তাদের থেকে তেল, সার, গম এগুলোর সরবরাহ ঠিক থাকত। যদিও জাতিসংঘ মহাসচিবের উদ্যোগে একটা চ্যাম্পিয়ন গ্রুপ হয়েছে। তাতে আমি সদস্য হিসেবে আছি।

অনুষ্ঠান-প্রতিষ্ঠানে আলোকসজ্জা না করার আহ্বান : বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে সামাজিক অনুষ্ঠান, কমিউনিটি সেন্টার ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আলোকসজ্জা না করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বার্তায় এ আহ্বানের কথা জানানো হয়। এতে বলা হয়, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং যুক্তরাষ্ট্র-ইউরোপের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার (ইকোনমিক স্যাংশন) বাস্তবতায় বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের লক্ষ্যে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান, কমিউনিটি সেন্টার, বিপনিবিতান, দোকানপাট, অফিস-আদালত এবং বাড়িঘরে আলোকসজ্জা না করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সর্বশেষ খবর