বৃহস্পতিবার, ৭ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা
গ্রামীণ টেলিকম

কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি-সম্পাদক গ্রেফতার

নিজস্ব প্রতিবেদক

শতাধিক মামলা প্রত্যাহার ও চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নেওয়ার শর্তে গ্রামীণ টেলিকমের চাকরিচ্যুত ১৭৬ শ্রমিকের সঙ্গে ৪৩৭ কোটি টাকায় সমঝোতা করার আগে করা হয় নানা অপপ্রচার। গ্রামীণ টেলিকম কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের মধ্যে গুজব ছড়িয়ে দেয়, বাংলাদেশের পরিস্থিতি শ্রীলঙ্কার মতো নাজুক হতে চলেছে। বর্তমান সরকার উৎখাত হয়ে, দেশের প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন গ্রামীণ টেলিকমের মালিক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং রাষ্ট্রপতি হতে যাচ্ছেন ড. কামাল হোসেন। তখন শ্রমিকদের এসব মামলা ধোপে টিকবে না, কোনো ক্ষতিপূরণও তারা পাবে না। বিপরীতে তাদের চাকরি হারানো, জেল খাটাসহ অন্যান্য নির্যাতনের মুখে পড়তে হবে। এই ভয় ছড়িয়ে দিয়ে আত্মসাৎ করা হয় শ্রমিকদের ২৬ কোটি ২২ লাখ টাকা। এই টাকা আত্মসাতের সঙ্গে জড়িত গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে গ্রেফতারের পর তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- সভাপতি কামরুজ্জামান ও সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ মাহমুদ। মঙ্গলবার ভোরে রাজধানীর সেগুনবাগিচার আকরাম টাওয়ারের পাশ থেকে তাদের গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) গুলশান বিভাগ। গতকাল তাদের আদালতে তোলা হলে আদালত সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে গত ২৩ মে ১১০টি মামলা প্রত্যাহারের শর্তে গ্রামীণ টেলিকমের চাকরিচ্যুত ১৭৬ জন শ্রমিকের পাওনা বাবদ ৪৩৭ কোটি টাকায় সমঝোতা করে গ্রামীণ টেলিকম। তারও আগে গত ৭ ফেব্রুয়ারি গ্রামীণ টেলিকমের অবসায়ন চেয়ে হাই কোর্টে আবেদন করা হয়। গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের পক্ষে এ আবেদন করা হয়। সর্বশেষ গত ৪ জুলাই গ্রামীণ টেলিকম কর্মচারী এবং টেলিকম ইউনিয়নের অর্থ সম্পাদক মোহাম্মদ আকতারুজ্জামান মিরপুর মডেল থানায় ২৬ কোটি টাকারও বেশি আত্মসাতের বিষয়ে মামলা দায়ের করেন। গতকাল নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিবি কর্মকর্তা হারুন বলেন, গ্রামীণ টেলিকমের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের যোগসাজশে শ্রমিকদের পাওনা টাকা আত্মসাতের অভিযোগে গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি, বিভিন্ন সময় গ্রামীণ টেলিকমের বিরুদ্ধে শ্রমিকরা পাওনা আদায়, দাবি-দাওয়াসহ মোট ১৯০টি মামলা করে। এসব মামলা তুলে নেওয়ার জন্য আইনজীবীর মাধ্যমে মোটা অঙ্কের টাকার অফার দেয় টেলিকম কর্তৃপক্ষ। একটা পর্যায়ে মামলা তুলে নেবে, কোম্পানিকে দায়মুক্তি দেবে, নিজেরা চাকরিতে ইস্তফা দেবে এবং ইউনিয়ন বিলুপ্ত করবে, এর বিনিময়ে শ্রমিকরা ৪৩৭ কোটি টাকা পাবে মর্মে চুক্তি হয় শ্রমিক ও গ্রামীণ টেলিকমের মধ্যে। কিন্তু সেই টাকার বড় একটি অংশ নামে-বেনামে আত্মসাৎ হয়েছে। তিনি আরও জানান, গ্রামীণ টেলিকমের সাবেক ও বর্তমান এমডি এই ২৬ কোটি টাকা আত্মসাতের সঙ্গে জড়িত। মধ্যস্থতার জন্য আইনজীবী ১৬ কোটি টাকা নিয়েছেন বলেও প্রমাণ পেয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ।

ডিবির গুলশান বিভাগের এডিসি এস এম রেজাউল হক জানান, গ্রেফতারকৃতদের সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। আত্মসাতের টাকা তারা কোথায় রেখেছেন বা কী কাজে ব্যবহার করেছেন সে বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।

মিরপুর মডেল থানায় দায়ের হওয়া মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারীদের স্থায়ী না করে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ ক্রমাগত নবায়ন করে। বিভিন্ন দাবি-দাওয়ার কারণে গত ২০২০ সালের ২৫ অক্টোবর গ্রামীণ টেলিকম কর্তৃপক্ষ বেআইনিভাবে একসঙ্গে ৯৯ জন শ্রমিককে ছাঁটাই করে।

১২ কোটি টাকা ফি নেওয়ার ঘটনায় রিট : নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ টেলিকমের চাকরিচ্যুতদের আইনজীবীকে ১২ কোটি টাকা দিয়ে সমঝোতার বিষয়ে তদন্ত চেয়ে হাই কোর্টে রিট করা হয়েছে। রিটে এই পরিমাণ টাকা ফি নেওয়া হয়েছে কি না, বা  নেওয়া হয়ে থাকলে তার আইনি বৈধতা কী, তা তদন্তের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। গতকাল সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার আশরাফুল ইসলাম আশরাফ এ রিটটি করেন। এতে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ও সচিব এবং আইনজীবী ইউসুফ আলীকে বিবাদী করা হয়েছে। আজ বিচারপতি খিজির হায়াত ও বিচারপতি আক্তারুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চে শুনানি হবে বলে জানান আইনজীবী ব্যারিস্টার আশরাফুল ইসলাম আশরাফ।

সর্বশেষ খবর