শুক্রবার, ৮ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা
মহামারি অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় ব্যর্থতাসহ নানা কেলেঙ্কারি

সরে যেতেই হলো ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীকে

প্রতিদিন ডেস্ক

সরে যেতেই হলো ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীকে

পদত্যাগের ঘোষণা বরিস জনসনের। উৎসুক জনতার ভিড় -এএফপি

নানান নাটকীয়তার পর যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির প্রধানের পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী পদ থেকেও পদত্যাগের।  সরকার ও দলের অভ্যন্তরে নজিরবিহীন চাপ ও দেশের অর্থনৈতিক সংকটে তিনি এই পদত্যাগের ঘোষণা দিলেন। আপাতত পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী নিয়োগের আগ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে যাবেন বরিস জনসন।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, বরিস জনসন নেতৃত্বাধীন সরকার ঘিরে কয়েক মাসের রাজনৈতিক অস্থিরতা গত মঙ্গলবার নতুন মাত্রা পায়। এদিন মাত্র ১০ মিনিটের ব্যবধানে অর্থমন্ত্রী ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী পদত্যাগ করেন। এরপর জুনিয়র মন্ত্রী ও এমপিদের পদত্যাগ এবং অনাস্থা জানানোর হিড়িক শুরু হয়। বুধবার রীতিমতো পদত্যাগের বন্যা বয়ে যায়। চলে গভীর রাত পর্যন্ত। ২৪ ঘণ্টায় ৪০ জনের বেশি মন্ত্রী ও সহযোগী পদত্যাগ করেন। গতকাল সকাল নাগাদ তা প্রায় অর্ধশত জনে গিয়ে ঠেকে। এর আগে বুধবার সন্ধ্যায় জ্যেষ্ঠ মন্ত্রীদের একটি দল ডাউনিং স্ট্রিটে যান প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগে রাজি করাতে। তবে পদত্যাগ না করার বিষয়ে অনড় থাকেন বরিস জনসন। গত নির্বাচনে ভোটারদের ‘বিপুল ম্যান্ডেট’ পাওয়ায় তাঁর পদত্যাগের কোনো ইচ্ছা নেই বলে জানান। পার্লামেন্টের অধিবেশনেও একই ইঙ্গিত দেন তিনি। কিন্তু গতকাল মন্ত্রিসভা ও দল থেকে পদত্যাগের ধারা অব্যাহত থাকে। তাঁরা অনেকেই প্রধানমন্ত্রীর ওপর অনাস্থা জানিয়ে পদত্যাগের ঘোষণা দেন। অব্যাহত চাপের মুখে শেষ পর্যন্ত নতিস্বীকার করেন বরিস। বিবিসি জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটের বাইরে জনসন তার পদত্যাগের ভাষণে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির নেতৃত্ব ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রিত্বও হারাচ্ছেন তিনি। তবে জনসন বলেছেন, কনজারভেটিভরা নতুন নেতা ঠিক করার আগ পর্যন্ত তিনি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব চালিয়ে যাবেন। কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য জনসন নতুন একটি মন্ত্রিসভাও নিয়োগ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন। আর নতুন প্রধানমন্ত্রী বাছাইয়ের প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার এখন স্পষ্টতই কনজারভেটিভ এমপিদের ইচ্ছার ওপর নির্ভর করছে। এই নতুন নেতা বেছে নেওয়ার প্রক্রিয়া এখনই শুরু হওয়া উচিত এবং এর সময়সীমা আগামী সপ্তাহে ঘোষণা করা হবে বলে জানান জনসন। এ প্রক্রিয়ায় লেগে যেতে পারে কয়েক সপ্তাহ কিংবা কয়েক মাসও। জনসন বলেন, রাজনীতিতে আদৌ কেউই অপরিহার্য নয়। আমাদের চমৎকার ব্যবস্থায় আরেকজন নেতা তৈরি হয়ে যাবেন। নতুন নেতাকে যতটা সম্ভব সমর্থন করার আশ্বাস দেন তিনি। নেতৃত্ব থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে এতদিন দেরি হলো কেন সে ব্যাখ্যায় জনসন বলেছেন, ভোটাররা যে বিপুল রায় দিয়ে তাকে ক্ষমতায় পাঠিয়েছিল, তাদের সেবা দিয়ে যেতে আগ্রহী ছিলেন তিনি। নেতৃত্বে থেকে কাজ করে যাওয়া এবং ভোটারদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ করাকে তিনি তার দায়িত্ব এবং কর্তব্য বলে মনে করেছেন। জনসন এই বিবৃতি দেওয়ার সময় তার পদত্যাগের ঐতিহাসিক ঘোষণা শুনতে ডাউনিং স্ট্রিটের বাইরে সমবেত হয় জনতা। তবে কনজারভেটিভ পার্টির আরও বেশিসংখ্যক এমপি এখন বলছেন, নতুন একজন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়া পর্যন্তও অপেক্ষা করে না থেকে জনসনের এক্ষুনি বিদায় নেওয়া উচিত। বিরোধী দল লেবার পার্র্টি বলছে, জনসন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে থেকে যেতে পারেন না। থাকলে তারা পার্লামেন্টে তার বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোট আনতে চেষ্টা করবেন। অনেকেই বলছেন, জনসন নিজ দলে আস্থা হারানোয় তার উচিত এক্ষুনি তার উপপ্রধান ডমিনিক রাবের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। জনসন দলীয় প্রধানের পদ থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়ায় এখন কনজারভেটিভ পার্টিতে নেতৃত্বের লড়াই শুরু হবে। দলটির ১ লাখ সদস্যের সিদ্ধান্তে নতুন নেতা ঠিক হবে। নতুন নেতা ঠিক হলে জনসন তার পদত্যাগপত্র রানিকে দেবেন। রানি এলিজাবেথ ক্ষমতাসীন দলের নেতাকে ডেকে পাঠাবেন, যিনি পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হবেন, গড়বেন নতুন সরকার। আগামী অক্টোবরে দলীয় সম্মেলনে দায়িত্ব নেওয়া নতুন নেতারই প্রধানমন্ত্রী পদে জনসনের স্থলাভিষিক্ত হওযার কথা রয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে পরিচালিত ইউগভ জরিপে দেখা গেছে, জনসনের উত্তরসূরি হিসেবে প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেসকেই পছন্দ করছেন কনজারভেটিভ পার্টির সদস্যরা। এরপর তালিকায় আছেন, জুনিয়র বাণিজ্যমন্ত্রী পেনি মোরডান্ট এবং সাবেক র্অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাক। তিন বছরেরও কম সময় আগে সাধারণ নির্বাচনে বিপুল জয় পেয়ে প্রধানমন্ত্রী হন বরিস। কিন্তু সাম্প্রতিক মাসগুলোতে তিনি নানা বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। এর মধ্যে রয়েছে করোনাভাইরাস মহামারিতে আরোপিত লকডাউনের বিধিনিষেধ ভেঙে পার্টি আয়োজন ও জরিমানা প্রদান। এর মধ্যে একজন কনজারভেটিভ পার্লামেন্ট সদস্যের (এমপি) বিরুদ্ধে ওঠা যৌন হয়রানির অভিযোগ প্রধানমন্ত্রী আমলে না নেওয়ায় অসন্তোষ তীব্র হয়। এর সঙ্গে যুক্ত হয় অর্থনৈতিক সংকট ও তীব্র মূল্যস্ফীতি। চলতি বছরে এই মুদ্রাস্ফীতি বেড়েছে দ্রুতগতিতে। বর্তমানে তা শতকরা ৯.১ ভাগ। এর মধ্যে বেশির ভাগ কারণ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। উদাহরণ হিসেবে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের কারণে তেলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। স্বভাবতই তাতে খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এক্ষেত্রে সরকার কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। যেমন জ্বালানিখাতে প্রতি লিটারের জন্য ৫ পেন্স করে শুল্কহার কমিয়েছে। এপ্রিলে এসে ট্যাক্স বৃদ্ধি করা হয়। ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স বেড়ে যায় প্রতি পাউন্ডে ১.২৫ পেন্স। এ অবস্থায় বিরোধী লেবার দলের প্রধান স্যার কিয়ের স্টরমার বলেন, কয়েক দশকের মধ্যে এখন জীবনমানের খবর সবচেয়ে বাজে অবস্থায়।

সর্বশেষ খবর