শনিবার, ৯ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

কঠোর নিরাপত্তায় থাকবে দেশ

ঈদে জঙ্গি হামলার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না : ডিএমপি কমিশনার

সাখাওয়াত কাওসার

ঈদুল আজহা সামনে রেখে রাজধানীসহ দেশব্যাপী নিরাপত্তার ব্যাপক আয়োজন করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। নিরাপত্তা নি-িদ্র করতে র‌্যাব-পুলিশের পাশাপাশি মাঠে সার্বক্ষণিকভাবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে আনসার ও ফায়ার সার্ভিস সদস্যদের। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চামড়া-সন্ত্রাস ও পশুর হাটে চাঁদাবাজিসহ সব ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে নজরদারি বাড়াতে অস্থায়ী কন্ট্রোল রুম স্থাপনসহ বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বাণিজ্যিক ও আবাসিক এলাকাগুলোতে টহল বাড়ানোরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যে কোনো জরুরি প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট কন্ট্রোল রুম, থানা কিংবা ৯৯৯-এর সহযোগিতা নিতেও নাগরিকদের অনুরোধ জানানো হয়েছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেছেন, ‘পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে জাতীয় ঈদগাহে থাকবে নি-িদ্র নিরাপত্তা। তবে ঈদের জামাতকে কেন্দ্র করে জঙ্গি হামলার আশঙ্কা নেই এমন বলা যাচ্ছে না। অনলাইনে জঙ্গিদের তৎপরতা লক্ষ্য করা গেছে। তবে আমরাও সার্বক্ষণিকভাবে সাইবার পেট্রোলিং করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। শপিং মল ও স্বর্ণের দোকানের নিরাপত্তার জন্য ১৫ দিন আগে থেকেই মার্কেটের নিরাপত্তাকর্মীদের তথ্য নেওয়া হয়েছে, যাতে অপরাধ করে কেউ পালিয়ে থাকতে না পারে। কারণ বিভিন্ন চুরির ঘটনার সঙ্গে অনেক নিরাপত্তাকর্মীর যোগসাজশ থাকে।’ গতকাল বেলা ১১টায় জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে   নিরাপত্তাব্যবস্থা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।

পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, চলমান এই সময়ে সুনির্দিষ্টভাবে হামলার আশঙ্কা না থাকলেও শোলাকিয়া ঈদের জামাতে হামলার বিষয়টি মাথায় রেখে এবারও দেশজুড়ে নিরাপত্তাব্যবস্থা সাজানো হয়েছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য ছাড়াও সবগুলো গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা মাঠে দায়িত্ব পালন করবেন। বুধবার শেষ হওয়া ত্রৈমাসিক অপরাধ সভায় অংশ নেওয়া কর্মকর্তাদের ঈদকেন্দ্রিক বিশেষ বার্তা দিয়েছেন আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ। তিনি বলেছেন, স্থানীয় পর্যায় ঈদের জামাত ঘিরে সর্বোচ্চ নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ঈদ ঘিরে পশু পরিবহন, পশুর হাট, মার্কেট ও ঈদ জামাতের নিরাপত্তা দিতে বলা হয়েছে। পদ্মা সেতু ঘিরে থাকছে বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থা। কারণ এবার সবচেয়ে বেশি মানুষ পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা ছাড়বেন। তাই সেতুকে কেন্দ্র করে বিশেষ অনলাইন মনিটরিং টিম ও স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকছে।

সূত্র জানায়, চাঁদাবাজি রোধসহ ঈদে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে পুলিশের বিভিন্ন শাখা কাজ করছে। এই সময়ে খোলাবাজারে ছুরি, চাপাতিসহ বেশ কিছু ধারালো জিনিস বিক্রি হয়। এটাতে বাধা দেওয়ার উপায় থাকে না। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে এসব স্থানে মনিটারিং বাড়ানো হয়েছে। কারা কিনছে, কাদের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে, কোথায় নেওয়া হচ্ছে সবকিছুই মনিটরিংয়ে রয়েছে। পশু জবাইয়ের ছুরি বাদে অন্য ছুরি বা ধারালো জিনিস যেন বের না করা হয় সেদিকেও নজর রাখা হচ্ছে।

র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপস্) কর্নেল কামরুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ঈদের জামাতকেন্দ্রিক কোনো নাশকতার তথ্য নেই। তবু আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক। সারা দেশে র‌্যাবের প্রতিটি ব্যাটালিয়নকে সতর্ক অবস্থানে রাখা হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে বিশেষ ফোর্স। যে কোনো উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় র‌্যাব তৈরি আছে। পদ্মা সেতু ঘিরে একটি টহল টিম থাকবে। গোয়েন্দা নজরদারির পাশাপাশি র‌্যাবের সাইবার মনিটরিং থাকছে।’

ডিএমপি সূত্র বলছে, নিরাপত্তার জন্য পুলিশের অধিকাংশ সদস্যের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। অনলাইন মনিটারিং বাড়ানো হয়েছে। ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে ৭৫ শতাংশ পুলিশ সদস্যকে স্ট্যান্ডবাই রাখা হচ্ছে। আর ২৫ শতাংশ সদস্যকে ছুটি দিচ্ছে ডিএমপি। এবারের নিরাপত্তায় এটাকে বিশেষ শক্তি হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রতিবারের মতো এবারও রাজধানীজুড়ে সাদা পোশাকের গোয়েন্দাসহ তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ঢাকার প্রতিটি পয়েন্টে পুলিশের টহল জোরদার করার পাশাপাশি অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। নিরাপত্তার বিষয়ে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। সাদা পোশাকে সদস্যসহ ডিবির টিম, সিটিটিসি, এটিইউ ও স্কোয়াড সদস্যদের সতর্ক অবস্থানে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন একাধিক কর্মকর্তা।

ডিএমপি কমিশনার বলেছেন, ‘অনলাইনে জঙ্গিদের তৎপরতা লক্ষ্য করা গেছে। ঢাকার আশপাশ থেকে ইতোমধ্যে কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে জঙ্গিরা সব সময় হামলার সুযোগ খোঁজে। আমরাও তৎপর আছি। তাই পীরসাহেবদের মাজার এবং শিয়াদের ঈদগাহগুলোতে বেশি নিরাপত্তা দেওয়া হবে।’

পুলিশ সদর দফতরের উপমহাপরিদর্শক হায়দার আলী খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ঈদকে কেন্দ্র করে কোনো ধরনের নাশকতার তথ্য নেই। এর পরও সারা দেশে পুলিশের পক্ষ থেকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অবস্থার ওপর নির্ভর করে বিভিন্ন সংস্থাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে নিরাপত্তা বজায় রাখতে।

ডিএমপির এক নির্দেশনায় বলা হয়, ডিএমপিতে জনবল স্বল্পতা থাকা সত্ত্বেও ঈদের ছুটির সময়ে পুলিশি টহল বৃদ্ধিসহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে চেকপোস্ট স্থাপন ও গোয়েন্দা কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই রোধে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এ ছাড়া নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সিকিউরিটি গার্ডের ডিউটি জোরদার করা, অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধে দিবারাত্রি নজরদারির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর পরিচালক (অপারেশন) ড. সাইফুর রহমান বলেন, ‘অতীতের মতোই ব্যাটালিয়ন আনসার দেশের বিভিন্ন ঘাট, বাস টার্মিনালসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় দায়িত্ব পালন করবে। অতীতের মতোই এবারের ঈদেও নিরাপত্তার প্রশ্নে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে আমাদের প্রতিটি সদস্যকে।’

সিটিটিসি সূত্র বলছে, জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরীরের কিছু বিষয় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তারা সম্প্রতি অনলাইনে কিছু কার্যক্রম চালাচ্ছে বলে নজরে এসেছে। তাদের কার্যক্রমকে সার্বক্ষণিক বিশেষ মনিটরিং করা হচ্ছে। নজরদারিতে রাখা হচ্ছে তাদের। জঙ্গিদের পক্ষ থেকে দেশের জন্য বড় ধরনের কোনো হুমকি নেই। তাদের ছোটখাটো যেসব কার্যক্রম আছে, সেসব মনিটরিংয়ে রয়েছে।

সর্বশেষ খবর