বুধবার, ১৩ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

ত্যাগের মহিমায় ঈদুল আজহা উদ্‌যাপিত

নিজস্ব প্রতিবেদক

ত্যাগের মহিমায় ঈদুল আজহা উদ্‌যাপিত

ঈদ শেষে প্রথম কর্মদিবসে অফিসে কোলাকুলি ও শুভেচ্ছা বিনিময়। গতকাল কমলাপুরে ঢাকায় ফেরা মানুষ -বাংলাদেশ প্রতিদিন

কোরবানির ত্যাগের মহিমায় উজ্জীবিত হয়ে রবিবার দেশব্যাপী উদ্‌যাপিত হয় মুসলিম উম্মাহর দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা। ঈদ জামাত শেষে আল্লাহর দরবারে বন্যা ও করোনা মহামারি থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করা হয়। মহান আল্লাহর অপার অনুগ্রহ লাভের আশায় ঈদের জামাত শেষে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা সামর্থ্য অনুয়ায়ী পশু কোরবানি দিয়েছেন। ঈদের পরবর্তী দুই দিনও অনেকে কোরবানি দেন।

করোনা সংক্রমণের কারণে টানা দুই বছর বন্ধ থাকার পর এবার জাতীয় ঈদগাহে ঈদুল আজহার প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে এবারও ঈদুল আজহার পাঁচটি জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন মসজিদ ও ঈদগাহ ময়দানে স্থানীয়ভাবে নির্ধারিত সময় অনুযায়ী ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়। নতুন করে আবার করোনা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়। তবে সামাজিক দূরত্ব রক্ষা স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে শিথিলতা লক্ষ্য করা যায়।

ঈদের নামাজ শেষে অনেক মুসল্লি বিভিন্ন কবরস্থানে গিয়ে আল্লাহর দরবারে নিজেদের পিতা-মাতা, আত্মীয়-পরিজনদের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে অশ্রুসজল চোখে এই আনন্দের দিনে তাদের স্মরণ ও রুহের মাগফিরাত কামনা করেন।

শিথিলভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে গত রবিবার রাজধানীর জাতীয় ঈদগাহে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল ৮টায়। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে সকাল ৭টা থেকে একে একে পাঁচটি জামাত অনুষ্ঠিত হয়। পঞ্চম ও সর্বশেষ জামাত অনুষ্ঠিত হয় বেলা পৌনে ১১টায়।

করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় দুই বছর পর দিনাজপুরের গোর-এ শহীদ বড় ময়দানে সকাল সাড়ে ৮টায় পবিত্র ঈদুল আজহার সবচেয়ে বড় জামাত অনুষ্ঠিত হয়। একইভাবে দেশের সবচেয়ে প্রাচীন ও দ্বিতীয় বৃহত্তম ঈদগাহ কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া মাঠে জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল ৯টায়।

নামাজ শেষে দোয়া ও মোনাজাতে অংশ নিয়ে নিজেদের গুনাহর জন্য আল্লাহর দরবারে ক্ষমা চেয়ে মুসল্লিরা অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। এ সময় করোনা মহামারিসহ সব ধরনের বালা-মুসিবত থেকে মুক্তির জন্যও আল্লাহর দরবারে সাহায্য চেয়ে দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। একই সঙ্গে দেশ, জাতি ও জনগণের কল্যাণে প্রার্থনা, মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ও সমৃদ্ধি কামনা করে দোয়া করা হয়।

নতুন করে করোনা সংক্রমণ বাড়তে থাকায় এ বছর আগে থেকেই ধর্ম মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদের জামাতে অংশ নেওয়ার অনুরোধ করা হয়। সে অনুযায়ী অনেক মুসল্লি মুখে মাস্ক পরে ঈদের নামাজে অংশ নেন। তবে ঈদের নামাজের পর অনেকে কোলাকুলি করা থেকে বিরত থাকলেও শিশু-তরুণ-যুবক-বৃদ্ধ অনেককেই পরস্পর কোলাকুলি করে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করতে দেখা গেছে। অনেকে হাতে হাত মিলিয়ে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। তবে করোনা নিয়ে উৎকণ্ঠা আর অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা থাকলেও মানুষের মাঝে ঈদের উচ্ছ্বাসে কোনো কমতি দেখা যায়নি।

ঈদের নামাজ থেকে ফিরে এসে সামর্থ্যবান ও ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা মহান রব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য পশু কোরবানি করেছেন। এরপর ইসলামের বিধান অনুযায়ী কোরবানির গোস্ত আত্মীয়স্বজন ও গরিব দুস্থদের মাঝে বিলি করেছেন।

প্রতিবারের মতো এবারও দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয় কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে। এটি ছিল এই ঈদগাহর ১৯২তম ঈদ জামাত। এদিকে উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় ঈদগাহ ময়দান দিনাজপুরের গোরা শহীদ ময়দানে প্রায় ৪ লাখ মুসল্লি ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করেন বলে দাবি করেছেন আয়োজকরা।

সর্বশেষ খবর