শুক্রবার, ১৫ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

শুল্ক সুবিধার পরও বাণিজ্য বাড়েনি চীনে

কারণ খতিয়ে দেখছে সরকার

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

শুল্ক সুবিধার পরও বাণিজ্য বাড়েনি চীনে

চীনে শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধা পেলেও দেশটিতে বাংলাদেশের বাণিজ্য বাড়েনি। সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে দেশটিতে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৬৮ দশমিক ৩৪ কোটি মার্কিন ডলার। আগের অর্থবছরের তুলনায় এটি ১ শতাংশের চেয়েও কম। ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশটিতে বাংলাদেশের রপ্তানি পরিমাণ ছিল ৬৮ দশমিক ০৬ মার্কিন ডলার। দেখা যাচ্ছে শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধা পাওয়ার পরও দেশটিতে রপ্তানি যা ছিল প্রায় তাই আছে।

বাংলাদেশের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার এ দেশটিতে রপ্তানি না বাড়ার কারণ খতিয়ে দেখছে সরকার। এরই মধ্যে এ বিষয়ে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোকে রিপোর্ট দিতে বলেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের এফটিএ (মুক্ত বাণিজ্য) বিভাগকে চীনের বাণিজ্য সুবিধা নিয়ে একটি অবস্থানপত্র তৈরির নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বড় বাণিজ্য অংশীদারদের মধ্যে বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশে এবার আমাদের রপ্তানি বেড়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৪৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। ভারতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫৫ শতাংশ। সে তুলনায় বাণিজ্য সুবিধা পাওয়ার পরও চীনে রপ্তানি ১ শতাংশও বাড়েনি। এটা কেন হয়েছে এ বিষয়ে এফটিএ বিভাগকে পর্যালোচনা করে একটি অবস্থানপত্র দিতে বলা হয়েছে। পণ্য রপ্তানিতে কোনো ধরনের সমস্যা থাকলে সেটি উভয় পক্ষের সরকার ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধান করা হবে বলেও জানান তিনি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানায়, ২০২০ সালের ১৬ জুন বাংলাদেশকে ৯৭ শতাংশ পণ্যে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা দেওয়ার ঘোষণা দেয় চীন সরকার। ওই বছরের ১ জুলাই থেকে এ সুবিধা কার্যকর হয়। এ সুবিধায় বাংলাদেশ প্রায় ৮ হাজার ৫৪৯টি পণ্য শুল্ক ছাড়া রপ্তানির সুবিধা পায়। শুল্ক সুবিধার বিষয়টি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে। ওই তালিকায় দেখা যায়, দেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাকসহ, ওষুধ, প্লাস্টিক পণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য, মাছ, চামড়া ও  চামড়াজাত পণ্য, জুতা, সিমেন্ট, হোম টেক্সটাইলের মতো পণ্য রয়েছে যেগুলো চীনে শুল্ক ছাড়াই রপ্তানি করা যাবে। 

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানায়, আগে থেকেই এশিয়া প্যাসিফিক ট্রেড এগ্রিমেন্ট বা আপটার আওতায় ৩ হাজার ৯৫টি পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা ভোগ করে আসছিল বাংলাদেশ। এরপর ২০২০ সালে আরও ৫ হাজার ১৬১টি পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিয়েছে চীন। সব মিলিয়ে ৮ হাজার ২৫৬টি পণ্যে অর্থাৎ প্রায় ৯৭ শতাংশ পণ্যে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দেয় দেশটি।

কর্মকর্তারা জানান, ওই তালিকা অনুযায়ী পোশাক খাতের প্রায় সব আইটেম শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা পাওয়ার কথা। এ ছাড়া পাট ও পাটজাত পণ্যে ১টি, মাছে ১০টি, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যে ১০টি, জুতায় ১৯টি এবং হোম টেক্সটাইলে ৫৫টি নতুন এইচএস কোড যুক্ত হয়েছে শুল্কমুক্ত সুবিধাপ্রাপ্ত তালিকায়। এর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের টয়লেট্রিজ পণ্য, সাবান, সার, পশম, কৃত্রিম পশমের তৈরি পণ্য, খনিজ জ্বালানি ও তেল, বিটুমিন, রাসায়নিক পণ্য, জৈব রাসায়নিক, জীবন্ত গরু, ছাগল, মহিষ, ঘোড়া, হাঁস, মুরগি, সাপ, কুঁচিয়া, দুগ্ধজাত পণ্য সবজি, কফি, চা, মসলা, দানাজাতীয় শস্য, বিভিন্ন মিলের বর্জ্য, বেভারেজ, স্পিরিট, ভিনেগার, তামাক, চিনি, লবণ, সালফার, পাথর ইত্যাদি রয়েছে। এত পণ্যে বাণিজ্য সুবিধা পেলেও সেটি কাজে লাগেনি।

এ বিষয়ে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)-এর ভাইস চেয়ারম্যান ও সিইও এ এইচ এম আহসান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, মূলত করোনা মহামারির কারণে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা চীনে পণ্য রপ্তানিতে বাণিজ্য সুবিধার বিষয়টি কাজে লাগাতে পারেননি।

গত দুই বছর ধরে দেশটির অনেক শহরে লকডাউন চলছে। এখনো অনেক শহর লকডাউন ঘোষণা করেছে। দেশটির ব্যবসায়ীরা যেমন অন্য কোনো দেশে যেতে পারছেন না, তেমনি বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরাও সেখানে যেতে পারছেন না। এখন পর্যন্ত চীনে গেলে দুই সপ্তাহ কোয়ারেন্টাইন করতে হয়। এ ছাড়া দেশটিতে বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য চিংড়ি মাছ, ইল ফিশ ও কাঁকড়া রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। এর ফলে চীনে রপ্তানির পরিমাণ খুব একটা বাড়েনি। তবে করোনা কমে যাওয়ায় আগামী অর্থবছরে দেশটিতে বাণিজ্যের সুফল মিলবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর