শুক্রবার, ১৫ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

সুশাসন না থাকায় সংকটে পড়েছে শ্রীলঙ্কার মানুষ

জিন্নাতুন নূর

সুশাসন না থাকায়  সংকটে পড়েছে শ্রীলঙ্কার মানুষ

হুমায়ুন কবির

শ্রীলঙ্কায় ১৫ থেকে ২০ বছর ধরে সত্যিকার অর্থে সুশাসন না থাকার কারণেই মানুষ এ সংকটে পড়েছে। এখন দেশটির মানুষগুলো এ অবস্থা আর সহ্য করতে রাজি নন। আর এর প্রমাণ গত কয়েক দিনে আমরা দেখেছি। শ্রীলঙ্কার রাজনীতিবিদসহ অন্য যারা আছেন, এ সমস্যার দ্রুত সমাধানের জন্য এখনই তাদের সবার উদ্যোগী হওয়া দরকার। এটা নিয়ে বসে থাকলে সংকট আরও জটিল ও সহিংস আকার ধারণ করবে। আর এমন হলে তা যেমন শ্রীলঙ্কার জন্য ভালো হবে না, তেমনি আমরা যারা দক্ষিণ এশিয়ায় দেশটির বন্ধুরাষ্ট্র তাদের জন্যও বিষয়টি মঙ্গল বয়ে আনবে না। সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, শ্রীলঙ্কায় কয়েক মাস ধরে যে সমস্যাগুলো ধীরে ধীরে ঘনীভূত হচ্ছিল গত এক সপ্তাহে এসে সেই সমস্যাগুলোর এক ধরনের বিস্ফোরণ ঘটতে দেখেছি। সেখানে অর্থনৈতিক অবস্থা কয়েক মাস ধরে খারাপ অবস্থায় পৌঁছে গেছে। অবস্থা দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। সেখানে গ্যাস, খাদ্য, ওষুধপত্র নেই। এমনকি পরীক্ষা নেওয়ার জন্য কাগজ পর্যন্ত নেই। এ ধরনের অবস্থাকে যে কোনো দেশের জন্য খারাপ অবস্থা হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। এর মধ্যে এক সপ্তাহ ধরে রাজনৈতিক সমস্যা যোগ হয়েছে। আমরা বাইরে থেকে যতটুকু বুঝতে পারছি, গবেষকরা যা বলছেন, তা হচ্ছে শ্রীলঙ্কার গোটা শাসনব্যবস্থার প্রতি জনগণের একটা বড় ধরনের অনাস্থা তৈরি হয়েছে। তারা মনে করেন না এ অবস্থার মধ্য দিয়ে শুধু প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী সরিয়ে বর্তমান অর্থনৈতিক সংকট দূর করা যাবে। সেখানে বড় ধরনের সংকট ঘনীভূত হয়ে আছে। এখন এটি নেতিবাচক স্থিতাবস্থার মধ্যে আছে। ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে সামরিক বাহিনীকে দায়িত্ব নেওয়ার জন্য বলেছেন। কারফিউ দেওয়া হয়েছে, দেশটিতে জরুরি অবস্থা চলছে। এ পরিস্থিতিতে সামরিক বাহিনী ও বিক্ষোভকারীরা সামনাসামনি এসে যদি সহিংসতায় জড়িয়ে পড়ে তাহলে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের যে লক্ষ্য, তাতে বাধা আসতে পারে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। এ অবস্থায় বিক্ষোভকারীরা সরকারি যেসব সম্পত্তি দখল করে নিয়েছিলেন সে জায়গা থেকে আজ চলে গেছেন। একে আমি ইতিবাচক বলে মনে করছি। রনিল বিক্রমাসিংহে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন। কিন্তু তার প্রতি মানুষের আস্থা নেই সেটাও মোটামুটি প্রতীয়মান। পার্লামেন্ট আজ বসার কথা ছিল পরবর্তী ক্ষমতা কীভাবে নির্ধারণ করা হবে সে জন্য। কিন্তু সেটিও স্থগিত করা হয়েছে। এ বিষয়ে আগামী দু-এক দিনের মধ্যে জানানো হবে।

সামগ্রিকভাবেই শ্রীলঙ্কায় নেতিবাচক স্থিতাবস্থা হয়ে আছে। হুমায়ুন কবির বলেন, এ মুহূর্তে অর্থনৈতিক সংকট অধিকতরভাবে ঘনীভূত হচ্ছে। এর কারণ হলো, একটি গ্রহণযোগ্য এবং আপাতত যে সরকারের প্রতি জনগণের সমর্থন আছে তা যদি না আসে তখন এ অর্থনৈতিক সংকট থেকে বেরোনোর জন্য যে আলাপ-আলোচনা আইএমএফসহ অন্য দেশগুলোর সঙ্গে চলছে, সে আলোচনা কিন্তু অগ্রসর হচ্ছে না। আর এমনটি না হলে দেশটিতে যে অর্থনৈতিক দুরবস্থা চলছে তা আরও খারাপের দিকে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ বলছেন, সে ক্ষেত্রে দেশটিতে দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে। কারণ দেশটিতে এখন খাদ্যদ্রব্য আমদানি হচ্ছে না। সেখানে জ্বালানি নেই।

সবকিছুই বড় ধরনের আকাল অবস্থার মধ্যে পড়ছে। এ সংকট গত কয়েক মাসে ঘনীভূত হয়েছে। তা এখন এসে নেতিবাচক স্থিতাবস্থার মধ্যে আছে। আমরা বন্ধুদেশ হিসেবে আশা করব, শ্রীলঙ্কার সব পক্ষই গভীরভাবে বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করবে। সেখানে শান্তিপূর্ণ অবস্থানের মধ্য দিয়েই জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি সরকার প্রতিষ্ঠা করে এ অবস্থা থেকে বের হওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এ মুহূর্তে অর্থনৈতিক সংকট থেকে বের হওয়ার জন্য যে যে উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন তা দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারের নেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর