শনিবার, ১৬ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

বিএনপির সামনে তিন চ্যালেঞ্জ

খালেদা জিয়ার মুক্তি, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায় ও জোরালো আন্দোলন

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

বিএনপির সামনে তিন চ্যালেঞ্জ

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিরোধী দল বিএনপির সামনে এখন কঠিন তিন চ্যালেঞ্জ। প্রথমত, দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি নিশ্চিত করা, দ্বিতীয়ত, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার গঠনের দাবি আদায় এবং সর্বশেষ দল পুনর্গঠনের লক্ষ্যে জাতীয় কাউন্সিল করে একটি জোরালো আন্দোলন গড়ে তোলা। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি এসব কঠিন চ্যালেঞ্জ কীভাবে মোকাবিলা করবে তার কৌশল নির্ধারণ করছেন দলের নীতিনির্ধারকরা। জানতে চাইলে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী সংসদ নির্বাচন আদায়ের জন্য আমাদের প্রধান মাধ্যম রাজপথ। রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করেই বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে।’

নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত আছে বিএনপির। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও বলা হচ্ছে, বর্তমান সরকারের অধীনেই হবে আগামী জাতীয় নির্বাচন। এ অবস্থায় দাবি আদায়ে রাজপথে সমাধান খুঁজছে বিএনপি। এ লক্ষ্যে নিজ দলের নেতা-কর্মীদের মনোবল দৃঢ় করাসহ জোটের শরিকদের পাশাপাশি অন্যান্য রাজনৈতিক দলকে সঙ্গে নিয়ে সরকারবিরোধী বৃহত্তর ঐক্য গড়ার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে দলটি। সব দলের সঙ্গে সংলাপ শেষে যেসব প্রস্তাব আসবে তার সমন্বয়ে তৈরি হবে রাজপথের আন্দোলনের রূপরেখা।

বিএনপির দায়িত্বশীলরা বলছেন, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগ যেভাবে আগেভাগেই হামলা ও মামলার পথে হাঁটছে, তাতে মাঠপর্যায়ে শক্ত অবস্থান নেওয়া ছাড়া সমাধান হবে না। সব সমস্যার সমাধান হবে রাজপথের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। সেটা মাথায় রেখেই প্রস্তুতি নিচ্ছেন দলের নেতা-কর্মীরা। এজন্য জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নেতা-কর্মীদের চাঙা করতে শক্ত অবস্থান নিয়েছে দলটি। রাজনীতির মাঠে কোণঠাসা বিএনপির নেতা-কর্মীরা সক্রিয় হতে শুরু করেছেন রাজপথে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান লন্ডন থেকে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত কথা বলছেন। অঙ্গসংগঠনগুলোকেও সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করা হচ্ছে। আগামী মাসের মধ্যেই দল ও অঙ্গসংগঠনের সর্বস্তরের কমিটি গঠন-পুনর্গঠনের কাজ সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছেন দলীয় হাইকমান্ড। আন্তর্জাতিক পর্যায়েও যোগাযোগ ও তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার বিষয়ে তাঁরা পরিষ্কার মত ব্যক্ত করেছেন।

জানা গেছে, বিএনপির নীতিনির্ধারকরা এখনই সরকারি দলের হামলার পাল্টা অবস্থান নিতে চাইছেন না। এখন নানা কর্মসূচির মাধ্যমে বিএনপিসহ সব অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনকে মাঠে নামানোর জন্য প্রস্তুত করার লক্ষ্যে কাজ চলছে। পাশাপাশি বিরোধী দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করার যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, তা দ্রুত এগিয়ে নেওয়ার কার্যক্রম চলবে। বিএনপির দায়িত্বশীলরা বলেন, ছাত্রদলের ওপর ছাত্রলীগের হামলা নেহাত কোনো তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ার জের নয়। এর লক্ষ্য আগামী সংসদ নির্বাচন। এর মধ্য দিয়ে সরকারি দল এ বার্তা দিচ্ছে, নির্বাচন নিয়ে কোনো সমঝোতা নয়। তাদের লক্ষ্য বর্তমান অবস্থান বজায় রেখেই ২০২৩ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন করা। বিএনপি সরকারবিরোধী একটি বৃহত্তর ঐক্যের লক্ষ্যে যে কাজ করছে তাতে বিঘ্ন ঘটানো।

এ ব্যাপারে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, বিএনপি এবার আর আওয়ামী লীগের প্রতারণার (নির্বাচনী) ফাঁদে পা দেবে না। আবার দলীয় সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হতেও দেবে না। সুতরাং এবারের নির্বাচন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনেই হতে হবে। আর এসব হামলা-নির্যাতন করে আন্দোলন দমানো যাবে না। সরকারকে বিদায় নিতেই হবে। রাজপথেই এবার ফয়সালা হবে।

বিএনপির দায়িত্বশীলরা বলেন, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বিএনপিকে কোণঠাসা করে রাখার নানা কৌশল নিয়ে এগোচ্ছে। বিশেষ করে নির্বাচনকেন্দ্রিক বিকল্প জোট দাঁড় করানো। বিএনপির মধ্যে ভাঙন ধরানো। বিএনপির মিত্রদের কাছে টানার কৌশল নিয়েছে আওয়ামী লীগ। এ ছাড়া বিরোধী নেতা-কর্মীদের ভয় দেখাতে হামলা-মামলার পথে হাঁটা, সব মিলিয়ে বিএনপিকে দুর্বল অবস্থায় রাখতে চায় ক্ষমতাসীনরা। এসব কারণে মাঠের আন্দোলনে যেমন সতর্ক বিএনপি, তেমনি নিজের জোট অটুট রেখে বড় জোট গঠন ও দলের নেতা-কর্মীদের মনোবল চাঙা করার দিকে মনোযোগ দিয়েছে দলটি।

সামগ্রিক প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে আমরা আন্দোলন করছি, করব এবং জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন আরও বেগবান করব। সময় হলেই আমরা আরও শক্তভাবে রাজপথে নামব।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর