শনিবার, ১৬ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

চার টার্গেটে মাঠে আওয়ামী লীগ

♦ ডিসেম্বরের মধ্যে ৩৪ জেলা সম্মেলন, গাজীপুর ও রংপুর সিটিতে বিজয় ♦ ২ কোটি নতুন সদস্য সংগ্রহ, অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসন

রফিকুল ইসলাম রনি

চার টার্গেটে মাঠে আওয়ামী লীগ

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ঘর গোছাতে চায় আওয়ামী লীগ। দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলকে সংগঠিত করার নির্দেশ দিয়েছেন। তাই চার প্রধান টার্গেট সামনে রেখে মাঠে নামছে আওয়ামী লীগ।

আওয়ামী লীগের টার্গেটের মধ্যে রয়েছে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ ৩৪ জেলা সম্মেলন, গাজীপুর ও রংপুর সিটিতে বিজয়, ২ কোটি নতুন সদস্য সংগ্রহ এবং অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসন। দলের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। দলীয় সূত্র জানায়, আগামী ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলন হওয়ার কথা রয়েছে। এ সম্মেলনের আগেই মেয়াদ শেষ হওয়া ৩৪ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন শেষ করার তাগিদ দিয়েছেন দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে যেসব জায়গায় অভ্যন্তরীণ কোন্দল রয়েছে তা মিটিয়ে ফেলারও নির্দেশ আছে দলীয় সভানেত্রীর। সে লক্ষ্যে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা মাঠে নেমেছেন। চলতি বছরের শেষে অথবা আগামী বছরের প্রথম দিকে গাজীপুর ও রংপুর সিটিতে ভোট হওয়ার কথা রয়েছে। ঢাকার অদূরে গাজীপুরে জয়ের ধারাবাহিকতা এবং রংপুরে জাতীয় পার্টির দুর্গে জয় চায় আওয়ামী লীগ। সে লক্ষ্যে এখন থেকেই যোগ্য প্রার্থীর সন্ধান করা হচ্ছে। একইভাবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন ২ কোটি ভোটার বানানোর জন্য মাঠে নামছে আওয়ামী লীগ।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সামনে আগস্ট মাস। এ মাসের ধারাবাহিক কর্মসূচি ঠিক করতে চলতি মাসেই দলের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ বৈঠক থেকে ধারাবাহিক কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। এর মধ্যে কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়া জেলা সম্মেলন শেষ করা, মেয়াদোত্তীর্ণ সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন সম্মেলন শেষ করা, আসন্ন গাজীপুর ও রংপুর সিটিতে যোগ্য প্রার্থী খোঁজ করা হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের আরেকটি টার্গেট হচ্ছে প্রায় ২ কোটি নতুন ভোটারদের সদস্য করা। এ ছাড়া যেখানে অভ্যন্তরীণ কোন্দল আছে সেগুলো মিটানো।’

সূত্রমতে, অতীতের নির্বাচনের চাইতে আগামী নির্বাচন বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে এবং কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হবে, দলের একাধিক বৈঠকে সে বার্তাও দিয়েছেন দলীয় প্রধান। তাই আগামী নির্বাচনে জনগণের কাছে যাদের গ্রহণযোগ্যতা বেশি, বিপদে যারা মানুষের সঙ্গে ছিলেন এমন লোককে খুঁজে বের করতে দলীয় নেতাদের কাজ করার তাগিদ দিয়েছেন তিনি।

আর স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে যেসব নেতা দলের নির্দেশনা অমান্য করে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে লড়াই করেছেন তাদের বিষয়ে কঠোর নির্দেশনার কথা দলীয় ফোরামে আবারও উঠে এসেছে। দলের সিদ্ধান্ত অমান্যকারীরা দলের জন্য বিপজ্জনক বলেও মনে করেন কোনো কোনো নেতা। তাই দলীয় সভানেত্রীর কঠোর বার্তা, বিদ্রোহীদের কোনো ছাড় নয় বরং তাদের কোনো পদ-পদবিতে না রাখার জন্য বলা হয়েছে।

দলের জাতীয় কাউন্সিলের আগেই সব বিবাদ মিটিয়ে দলকে নির্বাচনী দৌড়ের জন্য প্রস্তুত করার কথা বলা হয়েছে। এসব কর্মসূচি বাস্তবায়নের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্র আপডেট করার কাজও শুরু করতে বলা হয়েছে। একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে দেওয়া ইশতেহারের আলোকে নতুন করে ইশতেহার প্রণয়ন করতে কাজ শুরু করবে আওয়ামী লীগ। তা ছাড়া আগামী নির্বাচনে বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক পক্ষগুলোকে নির্বাচনমুখী করতে সব ধরনের ছাড় দিতে চায় দলটি। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আওয়ামী লীগ নির্বাচনমুখী দল। একটি নির্বাচন শেষ হলে আরেকটি নির্বাচন নিয়ে কাজ করে। দলকে নির্বাচনমুখী করতে যা যা প্রয়োজন তাই করা হচ্ছে। তৃণমূলে সম্মেলন, সদস্য সংগ্রহ, অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসনসহ যাবতীয় কাজ দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা করে চলেছেন। সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে আমরা এখন থেকে মাঠে নামব।’

আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা জানান, এর আগে বারবার দলের সদস্য সংগ্রহের বিষয়টি ঘোষণার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকেছে। ঘটা করে উদ্বোধন করা হলেও সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কার্যক্রম শেষ পর্যন্ত গতি হারিয়ে ফেলে। সংশ্লিষ্ট নেতারা জানান, দলের কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তিন বছর পর পর সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন করা হয়। সদস্য পদ নবায়ন করা না থাকলে দলের কোনো কমিটিতে স্থান পাওয়া যায় না। নতুন সদস্য ও নবায়ন মিলে কখনোই ৪০ লাখের বেশি ফরম পূরণ হয়নি। অনেক সক্রিয় নেতা-কর্মীও ফরম পূরণ করেন না। সে ক্ষেত্রে দলের বাইরের সরকারি উপকারভোগী প্রায় ১ কোটি মানুষকে নতুন সদস্য হিসেবে দলে অন্তর্ভুক্ত করার এ কার্যক্রম কতটা বাস্তবায়ন হবে তা নিয়ে সংশ্লিষ্টদের মধ্যেই সন্দেহ আছে।

সরকারের অর্থ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, দেশে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় ১২৩টি কর্মসূচি রয়েছে। এসব কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে ২৪টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। এর মধ্যে আটটি কর্মসূচি নগদ ভাতার আর ১১টি খাদ্য সহায়তার। আগামী বাজেটে নতুন করে ১১ লাখ উপকারভোগীকে সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় আনা হচ্ছে। এতে সব মিলে ১ কোটির কিছু কম বা বেশি মানুষ সরাসরি সরকারের উপকারভোগীর তালিকায় আসবে। এদের মধ্যে মুজিববর্ষে ঘর পাওয়া দেড় লাখ পরিবারও আছে। এ উপকারভোগীদের আওয়ামী লীগের সদস্য করার জন্য তৃণমূলের নেতাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অবশ্য উপকারভোগীর প্রকৃত সংখ্যা নিয়েও নানা মত আছে। অর্থ বিভাগের তথ্যে দেখা যায়, বর্তমানে বয়স্ক ভাতা পান ৫৭ লাখ মানুষ। বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা ভাতা পান ২৪ লাখ ৭৫ হাজার। মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী পান ২ লাখ বীর মক্তিযোদ্ধা। প্রতিবন্ধী ভাতা পান ২১ লাখ ৮ হাজার। সব মিলে ১ কোটি ৪ লাখের বেশি মানুষ ভাতার আওতায় আছে। এ ছাড়া জেলে, বেদে, রূপান্তরিত মানুষ সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীতে আছেন। তবে একই ব্যক্তি একাধিক ভাতাসহ নানা সুবিধা পাওয়ার অভিযোগও আছে। সে কারণে এ সংখ্যা নিয়েও বিভ্রান্তি আছে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আওয়ামী লীগ নির্বাচনমুখী দল, নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগ সব সময় প্রস্তুত। আওয়ামী লীগের ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে মিটিং হচ্ছে, উপজেলায় মিটিং হচ্ছে, জেলায় মিটিং হচ্ছে, বিভিন্ন দিবস পালন করা হচ্ছে, আমাদের কার্যক্রম বন্ধ নেই। তিনি বলেন, নির্বাচনে জয়লাভের জন্য আমাদের সব সময় প্রস্তুতি থাকে। টার্গেট নিয়েই আওয়ামী লীগ কাজ করে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর