শনিবার, ১৬ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

কে হচ্ছেন শ্রীলঙ্কার পরবর্তী প্রেসিডেন্ট

অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট হিসেবে রনিল বিক্রমাসিংহের শপথ সর্বদলীয় সরকার ও স্থিতিশীলতা নিয়ে আলোচনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

কে হচ্ছেন শ্রীলঙ্কার পরবর্তী প্রেসিডেন্ট

শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের পর আনন্দের মিষ্টি পুলিশের মাঝেও বিতরণ করা হয় -এএফপি

গোতাবায়া রাজাপক্ষের দেশ ছেড়ে পলায়ন ও পদত্যাগের কারণে শ্রীলঙ্কার ইতিহাসে দ্বিতীয়বারের মতো মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে প্রেসিডেন্ট পদ শূন্য হলো। দেশটির প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে গতকাল অন্তর্বর্তীকালীন ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রধান বিচারপতি জয়ন্থা জয়াসুরিয়ার কাছে শপথ নিয়েছেন। ২০ জুলাই পার্লামেন্ট সদস্যদের গোপন ভোটে শ্রীলঙ্কার পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন। তিনিই বাকি মেয়াদে দায়িত্ব পালন করবেন। কিন্তু কে হচ্ছেন পরবর্তী প্রেসিডেন্ট? কে নিতে যাচ্ছেন ভঙ্গুর অর্থনীতির বিপর্যস্ত দেশটিকে পুনর্গঠনের দায়িত্ব? এ নিয়ে বিশ্বজুড়ে শুরু হয়েছে জল্পনা। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, শ্রীলঙ্কার আগামী প্রেসিডেন্ট হিসেবে কয়েকদিন ধরেই ঘুরেফিরে তিনটি নাম সামনে আসছে। তারা হলেন- বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে, শ্রীলঙ্কার প্রধান বিরোধী দল সামাগি জনা বালাওয়েগায়ার (এসজেবি) নেতা সাজিথ প্রেমাদাসা ও এসএলপিপির সিনিয়র আইনপ্রণেতা ডালেস আলাহাপেরুমা। এ ছাড়া দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট ও শ্রীলঙ্কা ফ্রিডম পার্টির (এসএলএফপি) নেতা মাইথ্রিপালা শ্রীসেনা ও স্পিকার মাহিন্দা ইয়াপা আবেবর্ধনের নামও শোনা যাচ্ছে সম্ভাব্য প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে। ১৯ জুলাই পার্লামেন্টে মনোনয়নপত্র জমা দেবেন আগ্রহীরা। ২০ জুলাই ভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। পার্লামেন্টের ২২৫ জন সদস্য নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য ভোট দেবেন। যিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন, তাকে একদিকে যেমন পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত করতে হবে, অন্যদিকে শ্রীলঙ্কার বিক্ষুব্ধ জনগণের আস্থা অর্জন করতে হবে। জানা গেছে, রনিল বিক্রমাসিংহে বাকি মেয়াদে প্রেসিডেন্ট থাকতে চান। তাঁর প্রতি ক্ষমতাসীন দল শ্রীলঙ্কা পোডুজানা পেরামুনা (এসএলপিপি) এবং গোতাবায়ার ভাই বাসিল রাজাপক্ষের সমর্থন রয়েছে। তবে এসএলপিপির একটি অংশ তাঁকে রুখে দিতে বদ্ধপরিকর। এসএলপিপির আরেকটি অংশ আবার ডালেস আলাহাপেরুমার প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেছে। এসজেবি তাদের প্রার্থী হিসেবে সাজিথ প্রেমাদাসার নাম ঘোষণা করেছে। ব্যাপক জনবিক্ষোভের মুখে গোতাবায়া রাজাপক্ষে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকেই কার্যত ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করছেন ৭৩ বছর বয়সী রনিল। গতকাল পার্লামেন্টে স্পিকার প্রেসিডেন্ট হিসেবে গোতাবায়ার পদত্যাগপত্র গ্রহণের ঘোষণা দেওয়ার পর আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ নেন তিনি। স্পিকার মাহিন্দা ইয়াপা আবেবর্ধনে সাত দিনের মধ্যে নতুন প্রেসিডেন্ট নিয়োগের কাজ শেষ করার ইচ্ছা প্রকাশ করে বলেন, ‘শ্রীলঙ্কার সংবিধানের ৩৮.১ (বি) ধারা অনুযায়ী আমি প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছি। ঘোষণা অনুযায়ী, ১৪ জুলাই ২০২২ থেকে এ পদত্যাগপত্র কার্যকর হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে নতুন প্রেসিডেন্ট নিয়োগ দেওয়ার সাংবিধানিক প্রক্রিয়া শুরু হবে। এ সাংবিধানিক প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী প্রেসিডেন্টের কার্যক্রম ও দায়িত্বগুলো পালন করবেন।

প্রেসিডেন্ট পদের দৌড়ে শুরু থেকে আলোচনায় থাকা তিন ব্যক্তির মধ্যে একজন ছয়বার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, একজন প্রধান বিরোধীদলীয় নেতা এবং অপরজন সাংবাদিক থেকে রাজনীতিবিদ হয়ে উঠেছেন।

রনিল বিক্রমাসিংহে : বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করছেন। গত মে মাসে ষষ্ঠবারের মতো শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। বর্তমান পার্লামেন্টে রনিল বিক্রমাসিংহের দল ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টির একটি মাত্র আসন রয়েছে। তার প্রতি ক্ষমতাসীন দল এসএলপিপি এবং গোতাবায়ার ভাই বাসিল রাজাপক্ষের সমর্থন রয়েছে। তবে ৭৩ বছর বয়সী এ রাজনীতিবিদ শ্রীলঙ্কার বিক্ষুব্ধ জনতার কাছে অজনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন। বিক্ষোভকারীরা তাঁর পদত্যাগ দাবি করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ভিতরে প্রবেশ করে উল্লাস করেছে।

সাজিথ প্রেমাদাসা : শ্রীলঙ্কার প্রধান বিরোধী দল সামাগি জনা বালাওয়েগায়ার (এসজেবি) নেতা সাজিথ প্রেমাদাসা। তাঁর বয়স ৫৫ এবং তিনি একজন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী। পার্লামেন্টে তাঁর দলের ৫০ জন আইনপ্রণেতা রয়েছেন। প্রেসিডেন্ট হওয়ার লড়াইয়ের জন্য তাঁকে দ্বিদলীয় সমর্থন গড়ে তুলতে হবে। ১৯৯৩ সালে একটি আত্মঘাতী বোমা হামলায় তাঁর বাবা প্রেসিডেন্ট রানাসিংহে প্রেমাদাসা নিহত হওয়ার পর তিনি সক্রিয় রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। ২০০০ সালে প্রথমবারের মতো শ্রীলঙ্কার পার্লামেন্টে প্রবেশ করেন। পরে উপস্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৮ সালে তিনি আবাসন নির্মাণ ও সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী নিযুক্ত হন।

ডালেস আলাহাপেরুমা : এসএলপিপির একজন সিনিয়র আইনপ্রণেতা হিসেবে নিজ দলের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় ৬৩ বছর বয়সী ডালেস আলাহাপেরুমা। রাজনীতিতে প্রবেশ করার আগে তিনি ছিলেন সাংবাদিক। এসএলপিপির আরেক আইনপ্রণেতা চারিথা হেরাথ বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট পদে ডালেসের মতো যোগ্য ব্যক্তিকে পাওয়া কঠিন হবে।’ ডালেস আলাহাপেরুমা ১৯৯৪ সালে শ্রীলঙ্কার পার্লামেন্টে প্রবেশ করেন। তারপর গণমাধ্যমমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। গত এপ্রিলে বিক্ষোভকারীরা গোতাবায়া রাজাপক্ষের বাসভবন ঘেরাও করার পর মন্ত্রিসভা ভেঙে দিলে তিনি পদত্যাগ করেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর