শনিবার, ১৬ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

এবারও ইসির সংলাপে যাচ্ছে না বিএনপিসহ অনেক দল

শামীম আহমেদ

আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করতে ১৭ জুলাই থেকে আবারও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে আগের বারের মতো এবারও বিএনপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল অংশ নিচ্ছে না সংলাপে। এ ছাড়া সংলাপে যাওয়ার ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্তহীন অন্তত অর্ধডজন দল। এর আগে ইভিএম বিষয়ক সংলাপ বর্জন করেছিল বিএনপিসহ ১১ দল।

নিবন্ধিত ৩৯টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপের জন্য আগামী ১৭ জুলাই থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করেছে ইসি। এর মধ্যে জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলোচনার জন্য দুই ঘণ্টা করে সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। বাকি ৩৭টি দলকে দেওয়া হয়েছে এক ঘণ্টা করে। ১৭ জুলাই সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) সঙ্গে সংলাপের মধ্য দিয়ে শুরু হবে এ সিরিজ আলোচনা। শেষ হবে ৩১ জুলাই আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলোচনা দিয়ে। এর আগে ইসির ইভিএম বিষয়ক সংলাপ বর্জন করেছিল ১১টি দল। নিবন্ধিত ৩৯ দলকে ইভিএম দেখা ও আলোচনার আমন্ত্রণ জানানো হলেও অংশ নেয় ২৮ দল। সংলাপে অংশ নেওয়া ২৮টি দলের মধ্যে ১৪টি দল ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে কথা বলেছে। বাকি ১৪টি দল ইভিএম ব্যবহারের বিপক্ষে অবস্থান নেয়। যে ১১ দল সংলাপে আসেনি তারাও ইভিএমের বিপক্ষে সব সময় কথা বলে আসছে। আগের বারের সংলাপে অংশ না নেওয়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যোগাযোগ করলে কিছু দল এবারের সংলাপেও অংশ নিতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেছে। সিদ্ধান্তহীনতায় রয়েছে বড় একটি অংশ।

ইসির আগামী সংলাপে অংশগ্রহণ নিয়ে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, আমরা চাই নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের সব বিষয় আমরা প্রত্যাখ্যান করেছি। তাই ইসির সংলাপে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না।

লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ বলেছেন, ইসির সঙ্গে সংলাপ করে লাভ নেই। রাষ্ট্রপতির সংলাপেও তো লাভ নেই। তার তো ক্ষমতা নেই। সেখানে ইসি কী করবে? আমরা চাই নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার। এর আগে অন্য আলোচনায় যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা বোধ করছি না।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) কার্যকরী সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন বলেছেন, রাষ্ট্রপতির সংলাপে যেহেতু যাইনি, ইসির সংলাপে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। এই সংলাপ অর্থহীন ও সময়ের অপচয়। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন নিয়ে আলোচনায় আমরা আগ্রহী নই। আর ইসি তো এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দিতে পারবে না।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেছেন, আগের সংলাপে যাওয়ার প্রয়োজন বোধ করিনি। এবারের সংলাপে মনে করেছিলাম সুনির্দিষ্ট এজেন্ডা দিয়ে ডাকবে। কিন্তু, ইসির চিঠিতে তেমন কিছুু পেলাম না। চিঠি পড়ে মনে হয়েছে উনারা (ইসি) সবকিছু ঠিক করে ফেলেছেন। সংলাপে যাওয়ার বিষয় নিয়ে আমরা বসব। প্রয়োজন মনে না করলে অযথা গিয়ে আমাদের সময়ও নষ্ট করব না, তাদের সময়ও নষ্ট করব না।

কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম বলেছেন, গতবার তো কোনো সংলাপ ছিল না। ইভিএম দেখাতে ডেকেছিল। এবার যাব কি যাব না এখনো ঠিক হয়নি। বৃহস্পতিবার চিঠি পেয়েছি। আগামী রবিবার সবাইকে নিয়ে বসে সিদ্ধান্ত নেব।

বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পাটির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেছেন, গত সংলাপে যাইনি। তবে আমাদের বক্তব্য জানিয়েছি। আমরা দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের পক্ষে না। ২০১৮ সালের মতো প্রচারসর্বস্ব সংলাপে লাভ নেই। সরকারের পদত্যাগ ও কীভাবে নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার হবে এটা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। এবার যাওয়ার ব্যাপারে দলীয় ফোরামে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। যা বলার গিয়েই বলব। তবুও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের আগে আরেকবার বসব।

বাংলাদেশ মুসলিম লীগের মহাসচিব (বিএমএল) আলহাজ কাজী আবুল খায়ের বলেন, গত সংলাপে আমরা গিয়েছি। তবে বিএনপির সঙ্গে আরেকটি বিএমএল আছে। তারা সংলাপে যায়নি। ওই দলের নামগন্ধ নেই।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রচার সম্পাদক মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ুম বলেছেন, গত সংলাপে ইভিএম বিষয়ে  ডেকেছিল। আমরা প্রত্যাখ্যান করেছি। এবার নির্বাচনী সংলাপ। দলীয় ফোরামে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত জানাব।

বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সহকারী সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন গত বৃহস্পতিবার বলেন, আমরা সংলাপে যাওয়ার বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নিইনি। এটা নিয়ে  কেন্দ্রীয় কমিটিতে বসব। তারপর সিদ্ধান্ত জানাব। ঈদের আগে দলের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেছিলেন, ইভিএম নিয়ে আলোচনায় যাইনি, তবে চিঠি দিয়ে আমাদের অবস্থান জানিয়েছি। কুমিল্লা নির্বাচনে ইভিএম কাজ করেনি সেটা সবাই দেখেছে। নির্বাচন ব্যবস্থার ওপর আস্থা না আসলে আলোচনা করে কি হবে?

বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জে. (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেছেন, সংলাপে যাব কি না এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিলে জানাব।

এ ছাড়া গত সংলাপে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) অংশ নেয়নি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর