রবিবার, ১৭ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

সড়কে ঝরল ২৯ প্রাণ

নিজস্ব প্রতিবেদক

সড়কে ঝরল ২৯ প্রাণ

বগুড়ায় দুমড়েমুচড়ে গেছে গাড়ি -বাংলাদেশ প্রতিদিন

দেশের ১০ জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় এক দিনে ২৯ জনের প্রাণহানি হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও অর্ধশতাধিক। এর মধ্যে টাঙ্গাইলে একই পরিবারের তিনজনসহ আটজন নিহত হয়েছেন। ময়মনসিংহের ত্রিশালে ট্রাকচাপায় একই পরিবারের তিনজন নিহত হয়েছেন। বগুড়ায় পিতা-পুত্রসহ চারজন নিহত হয়েছেন। সিরাজগঞ্জের তাড়াশে নিহত হয়েছেন চারজন। এ ছাড়া হবিগঞ্জে তিনজন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুজন, গাজীপুরে দুজন, ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে একজন, দিনাজপুরের খানসামায় একজন এবং চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে একজনের মৃত্যু হয়েছে।

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের পাকুল্যা এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় মা-ছেলে ও মেয়ে নিহতের প্রতিবাদে এলাকাবাসী সড়ক অবরোধ করে -বাংলাদেশ প্রতিদিন

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি জানান, টাঙ্গাইলে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় একই পরিবারের তিনজনসহ আটজন নিহত ও কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়েছেন। বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্বপাড়ে এবং ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের মির্জাপুর উপজেলার পাকুল্যা ও দুল্যা মনসুর এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতদের মধ্যে চারজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন- মির্জাপুর উপজেলার বাঁশতৈল এলাকার পারভিন আক্তার (২৭), তার মেয়ে সাদিয়া (৯) ও ছেলে সুমন (৭) এবং কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার দফাদারপাড়া এলাকার আমির উদ্দিনের ছেলে মঞ্জুরুল ইসলাম (৪৮)। বাকিদের নাম-পরিচয় পাওয়া যায়নি। শনিবার দুপুরে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের মির্জাপুর উপজেলার পাকুল্যা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বাসের চাপায় মা-ছেলে ও মেয়ে নিহত হয়েছেন। এ দুর্ঘটনার পর মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে স্থানীয়রা। পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, উপজেলার পাকুল্যা এলাকায় রাস্তা পার হচ্ছিল মা, ছেলে ও মেয়ে। এ সময় ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা টাঙ্গাইলগামী একটি বাস তাদের চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই শিশু মেয়ে নিহত হয়। গুরুতর আহত হয় দুজন। পরে তাদের টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহতরা হলেন মির্জাপুর বাঁশতৈল এলাকার পারভিন আক্তার, তার মেয়ে সাদিয়া ও ছেলে সুমন (৭)। এদিকে এ দুর্ঘটনার পর মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে স্থানীয়রা। এর ফলে মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। এতে মহাসড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়। টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) লুৎফর রহমান বলেন, পাকুল্যার সড়ক দুর্ঘটনায় দুজনকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল। হাসপাতালে আসার আগেই তাদের মৃত্যু হয়েছে।

অপরদিকে ভোরে একই উপজেলার ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের দুল্যা মনসুর এলাকায় দাঁড়িয়ে থাকা বালুবোঝাই ট্রাককে যাত্রীবাহী বাস ও মাইক্রোবাসের সংঘর্ষে চারজন নিহত হয়। এ দুর্ঘটনায় কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়। এ দুর্ঘটনার পর মহাসড়কে ঢাকার দিকে যান চলাচল বন্ধ থাকে। যানজটে আটকা পড়ে কর্মস্থলগামী মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। পরে পুলিশ রেকারের সাহায্যে দুর্ঘটনাকবলিত বাসটি সরিয়ে নিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। এ ব্যাপারে গোড়াই হাইওয়ে থানার (ওসি) মোল্লা টুটুল বলেন, ঢাকাগামী থেমে থাকা বালুভর্তি একটি ট্রাককে পেছন দিক থেকে বিনিময় পরিবহনের যাত্রীবাহী একটি বাস ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই বাসের তিনজন মারা যায়। আহতদের উদ্ধার করে কুমুদিনী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পৌনে ১০টার দিকে একজনের মৃত্যু হয়েছে।

অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্বপাড়ে সড়ক পার হওয়ার সময় মঞ্জুরুল ইসলাম নিহত হন। তিনি বাসে ঢাকায় যাচ্ছিলেন। বঙ্গবন্ধু সেতু পার হয়ে পূর্বপাড়ে পৌঁছালে টয়লেট সারতে বাস থেকে নেমে সড়ক পার হচ্ছিলেন। এ সময় একটি বাস তাকে চাপা দিয়ে চলে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান।

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি জানান, ময়মনসিংহের ত্রিশালে ট্রাকচাপায় একই পরিবারের তিনজন নিহত হয়েছেন। নিহত হওয়ার সময় সন্তান প্রসব করেছেন অন্তঃসত্ত্বা নারী। শনিবার দুপুর আড়াইটার দিকে উপজেলার ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের কোর্ট ভবন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হচ্ছেন- জাহাঙ্গীর আলম (৩৫), তার স্ত্রী রত্না বেগম (২৬) ও তাদের আড়াই বছরের সন্তান জান্নাত। তারা মঠবাড়ি ইউনিয়নের রায়মনি গ্রামের বাসিন্দা।

বগুড়া থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, বগুড়ায় প্রাইভেট কার ও মিনি ট্রাক মুখোমুখি সংঘর্ষে পিতা-পুত্রসহ চারজন নিহত হয়েছেন। শনিবার কাহালুর দরগাহহাট এলাকার সজল ফ্যাক্টরির সামনে বগুড়া-নওগাঁ মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন- নওগাঁর ধামুরহাটের তানছের আলী (৬০), তার ছেলে টগর আলী (৩৫), মফিজ উদ্দিনের ছেলে আবদুর রহমান (৩৫) এবং প্রাইভেট কার চালক পত্নীতলা এলাকার মান্নুর ছেলে সুমন (৩০)। এতে শাকিল (২০) নামে আরও এক যুবক গুরুতর আহত হয়েছেন। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। কাহালু থানার ওসি আমবার হোসেন জানান, এ ঘটনায় চারজন নিহত হয়েছেন। তবে ট্রাকচালক পলাতক থাকায় তাদের আটক করা যায়নি। ট্রাকটি পুলিশ জব্দ করেছে।

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, সিরাজগঞ্জের তাড়াশে যাত্রীবাহী বাস উল্টো লেনে এসে পরপর দুটি ট্রাকের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় চারজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন দুজন। শনিবার দুপুরে হাঁটিকুমরুল-বনপাড়া মহাসড়কে তাড়াশ উপজেলার খালকুলা এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত চারজনের মধ্যে দুজনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে। অপর দুজনের নাম-পরিচয় পাওয়া যায়নি। নিহতরা হলেন- রাজশাহীর বাঘা থানার আবদুল আজিজ (৪৫) ও পাবনার ঈশ্বরদীর কাদিমপাড়া গ্রামের মনছের আলীর ছেলে মেরাজুল (৩২)। হাঁটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লুৎফর রহমান জানান, নিহতদের মরদেহ ও দুর্ঘনাকবলিত বাস-ট্রাক থানা হেফাজতে রাখা হয়েছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও প্রাইভেট কারের মুখোমুখি সংঘর্ষে দুজন নিহত হয়েছেন। দুর্ঘটনায় এক পুলিশসহ অটোরিকশার আরও চার যাত্রী আহত হয়েছেন। সদর উপজেলার উজানিসার এলাকায় গতকাল সকালে এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন- সদর উপজেলার মজলিশপুর ইউনিয়নের মজলিশপুর গ্রামের বাসিন্দা অটোরিকশা চালক চান মিয়া (৫০) ও অটোরিকশা যাত্রী কসবা উপজেলার খাড়েরা গ্রামের বাসিন্দা বিল্লাল হোসেন (৪৫)। এ সময় নিহত বিল্লালের ভাতিজা শাকিল মিয়া (৩১), শাকিলের স্ত্রী মিতু বেগম (২৪) ও মা শিরিন বেগম আহত এবং অটোরিকশা যাত্রী পুলিশ কনস্টেবল হাসিবুল হোসেন আহত হয়েছেন।

গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, গাজীপুরের পুবাইলে দুটি পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় দুজন নিহত হয়েছেন। এসব ঘটনায় চালকসহ নয়জন আহত হয়েছেন। শনিবার মহানগরীর পুবাইল থানাধীন শুকুন্দিরবাগ ও পুবাইল কলেজ গেট এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন- শেরপুর জেলা সদর থানার মাঝপাড়া গ্রামের গোলাম রাব্বানীর ছেলে মনিরুজ্জামান মনির (৩৮) ও নরসিংদীর মনোহরদী থানার কেরানীনগর গ্রামের মৃত ইদ্রিস আলীর ছেলে ইব্রাহিম হোসেন (৩৩)।

কুমিল্লা প্রতিনিধি জানান, কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলায় বাসচাপায় মনির হোসেন নামের এক বাঁশি বাদক নিহত হয়েছেন। শনিবার উপজেলার হরিশ্চর এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন প্যাড বাদক বোরহান উদ্দিন। নিহত মনির হোসেন জেলার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার ধান্যদৌল গ্রামের তোতা মিয়ার ছেলে।

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি জানান, ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে ট্রাকের ধাক্কায় এক কৃষক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও চারজন। শনিবার সকালে ঝিনাইদহ-যশোর মহাসড়কের কালীগঞ্জ উপজেলার পিরোজপুর নামক স্থানে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

দিনাজপুর প্রতিনিধি জানান, দিনাজপুরের খানসামায় ট্রাকের ধাক্কায় জাকির হোসেন নামে এক মোটরসাইকেল চালক নিহত হয়েছে। নিহত মোটরসাইকেল চালক জাকির হোসেন (২৬) খানসামা উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামের একরামুল মেম্বার পাড়ার তফসের আলীর ছেলে ও আমতলী বাজারের ব্যবসায়ী। গতকাল বেলা ১টার দিকে খানসামা ব্র্যাক শাখা অফিসের সামনের পাকা সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

চট্টগ্রাম থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি উপজেলার নারায়ণহাট ইউনিয়নের ভুজপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। এ সময় তিনজন আহত হয়েছেন। নিহতের নাম হচ্ছে শারমিন আক্তার (২৮)। তিনি ভুজপুর উত্তর শৈলকূপা এলাকার আবু তাহেরের স্ত্রী। আহতরা হলেন শারমিন আক্তারের ছেলে মোবারক হোসেন (৯) ও বোনের মেয়ে শম্পা কলি (১২)। তবে অটোরিকশা চালকের নাম জানা যায়নি। গতকাল উপজেলার মির্জারহাটের দক্ষিণে কোর্টবাড়িয়া এলাকায় গহিরা-হেঁয়াকো সড়কে পিকআপ ও সিএনজি অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে এ দুর্ঘটনা ঘটে। 

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের রুস্তমপুর টোলপ্লাজার সামনে বাসচাপায় সিএনজি-অটোরিকশা চালক ও এক নারীসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। শনিবার বিকাল ৫টায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনায় বসুন্ধরা গ্রুপের এলপি গ্যাসের হবিগঞ্জের প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার আতিকুর রহমানসহ দুজন গুরুতর আহত হয়েছেন। আতিকুর রহমানকে প্রথমে নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তার অবস্থার অবনতি হলে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় সিলেট ইবনেসিনা প্রাইভেট হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সিলেটগামী মিতালী পরিবহনের যাত্রীবাহী একটি বাস (ঢাকা মেট্রো ব-১৫-৭৪৮৯) ও একটি সিএনজির (হবিগঞ্জ থ-১১-২০০৬) মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। মুখোমুখি এ সংঘর্ষের ঘটনায় সিএনজি চালক উপজেলার আউশকান্দি ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামের কাঁচা মিয়ার পুত্র রব্বান মিয়া (৫০) ও যাত্রী বেতাপুর গ্রামের মৃত আবুল মিয়ার স্ত্রী বকুল বেগম (৫০) ঘটনাস্থলেই নিহত হন। গুরুতর আহত অবস্থায় বেতাপুর গ্রামের কচি মিয়ার ছেলে ছাত্রদল নেতা ইয়াহিয়া আহমেদ চৌধুরী জাবেদুরকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে দ্রুত সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠালে পথিমধ্যে তার মৃত্যু হয়। দুর্ঘটনা ও তিনজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন শেরপুর হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ পরিমল দেব। তিনি জানান, নিহতদের লাশ উদ্ধার ও দুর্ঘটনা কবলিত গাড়ি আটক করে শেরপুর হাইওয়ে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। এ সময় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে প্রায় এক ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ ছিল। পরে হাইওয়ে পুলিশ ও নবীগঞ্জ থানা পুলিশ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর