মঙ্গলবার, ১৯ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়নের ইতিহাস গড়ল বসুন্ধরা কিংস

রাশেদুর রহমান, মুন্সীগঞ্জ থেকে

হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়নের ইতিহাস গড়ল বসুন্ধরা কিংস

শিরোপা নিশ্চিত হওয়ার পর কিংস ফুটবলারদের উৎসব। মুন্সীগঞ্জে কিংস ২-০ গোলে হারায় সাইফকে -রোহেত রাজীব

খেলা শেষ হওয়ার আরও কিছুক্ষণ বাকি। কিন্তু মুন্সিগঞ্জের বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লে. মতিউর রহমান স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে থাকা বসুন্ধরা কিংসের কয়েক হাজার সমর্থকের ধৈর্য্যরে সব বাঁধ ভেঙে গেল। বাদ্য-বাজনা বাজিয়ে নেচে-গেয়ে তারা বিজয়োৎসব শুরু করে দিল। ম্যাচ শেষের বাঁশিতে ফুঁ পড়তেই বুনো উল্লাসে ফেটে পড়ল তারা। ডাগ আউটে অস্কার ব্রুজোনকে একে একে জড়িয়ে ধরলেন বসুন্ধরা কিংসের অফিশিয়াল ও ফুটবলাররা। সবাই গায়ে জড়ালেন ‘চ্যাম্পিয়ন’ লেখা জার্সি। ১০ জনের দল নিয়েও সাইফ স্পোর্টিংকে ২-০ গোলে হারিয়ে প্রিমিয়ার লিগ ফুটবলের শিরোপা নিশ্চিত করেছে বসুন্ধরা কিংস। অভিষেকের পর থেকে টানা তিনবার লিগ শিরোপা জিতে ইতিহাস গড়ল অস্কার ব্রুজোনের দল। ২০১৮-১৯ ও ২০২১ সালের পর এবার জয় করল ২০২১-২২ মৌসুমের লিগ শিরোপাও।

গতকাল ম্যাচের শুরুতেই বসুন্ধরা কিংসের সমর্থকরা কিছুটা চমকে গিয়েছিল। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ম্যাচে নেই রবসন রবিনহো! ইনজুরির কারণে তাকে বিশ্রামে রেখেছেন কোচ অস্কার ব্রুজোন। মৌসুমজুড়ে রবসনের কাঁধেই ছিল কিংসকে এগিয়ে নেওয়ার গুরু দায়িত্ব। লিগে ১৩টা গোল করে তিনিই ছিলেন দলের শীর্ষ গোলদাতা। রবসনকে ছাড়া কেমন করবে বসুন্ধরা কিংস! এই বিস্ময়ের জবাব ম্যাচ শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যেই দিয়ে দেন মতিন মিয়া। ২৮তম মিনিটে গোল করেন তিনি। ডি বক্সের বাম পাশ থেকে ব্রাজিলিয়ান ফুটবলার মিগেল ফিগেইরার পাসে ডি বক্সের ভিতরে বল পান মতিন মিয়া। বল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ডান পায়ের জোরাল শটে বল জালে জড়ান তিনি। মতিন মিয়ার ঠাণ্ডা মাথার এমন দারুণ গোল দেখে ডাগ আউটে উল্লাসে ফেটে পড়েন বসুন্ধরা কিংসের স্প্যানিশ কোচ অস্কার ব্রুজোন। ম্যাচের ৮১তম মিনিটে বিপলু আহমেদের গোল কিংসের টানা তিন লিগ শিরোপা নিশ্চিত করে দেয়। বিপলু মতিন মিয়ার পরিবর্তে মাঠে নামেন ৭৯ মিনিটে। এর দুই মিনিট পরই বল জালে জড়ান তিনি। ডি বক্সের লাইনে সাইফের ডিফেন্ডার ও বসুন্ধরার নুহা মারঙের মধ্যে বল নিয়ে কাড়াকাড়ির এক পর্যায়ে বল নিয়ন্ত্রণে নেন বিপলু। কিছুটা সামনে এগিয়ে বাম পায়ের শটে বল জালে জড়ান তিনি।

দারুণ একটা ম্যাচ দেখল ফুটবলপ্রেমীরা। ম্যাচের ৩৭তম মিনিটে দ্বিতীয় হলুদ কার্ডের পর লাল কার্ডের ইশারায় বসুন্ধরা কিংসের ডিফেন্ডার ইয়াসিন আরাফাত মাঠ ছাড়েন। কিন্তু বসুন্ধরা কিংসের খেলায় একজন ফুটবলার কম থাকার কোনো প্রভাবই পড়েনি। দারুণ সব গোলের সুযোগ তৈরি করে দলটা। প্রতিপক্ষের ডিফেন্সে চাপ ধরে রাখে ম্যাচের শেষ পর্যন্ত। ম্যাচের পর অস্কার ব্রুজোন বললেন, ‘ম্যাচটা কঠিন ছিল। সাইফ স্পোর্টিং প্লেসিং ফুটবল খেলার চেষ্টা করেছে। তবে আমরা নিজেদের সেরাটা খেলার চেষ্টা করেছি। সবাই কঠোর পরিশ্রম করেছে। ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টাতেই সফল হয়েছি আমরা।’

ইয়াসিন আরাফাতের লাল কার্ডের পর দ্বিতীয়ার্ধ্বে মাঠে নামেন ইরানি ডিফেন্ডার খালেদ শাফি। ফাহাদ, বিশ্বনাথ আর তারিক কাজীকে সঙ্গে নিয়ে ডিফেন্স সামাল দেন দারুণভাবে। সাইফের ফরোয়ার্ড লাইনকে খুব একটা কাছে ঘেঁষতে দেয়নি বসুন্ধরার কিংসের ডিফেন্ডাররা। সানডে উদোহ, আমেরি আর গফুরভরা যে কয়বার কিংসের গোলমুখে শট নিয়েছেন ততোবারই তা রুখে দিয়েছেন জিকো। গোলমুখে গতকালও তিনি ছিলেন অতন্দ্র প্রহরী। মৌসুম জুড়ে লিগে আটটা ম্যাচে কিংসের গোলবার অক্ষত রেখেছেন জিকো।

ইতিহাসের পাতায় বসুন্ধরা কিংসের সঙ্গে নাম লেখাল মুন্সিগঞ্জের বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লে. মতিউর রহমান স্টেডিয়ামও। অভিষেকের পর টানা তিন লিগ শিরোপা জয়ের উৎসবটা অস্কারের দল করল এই মাঠের সবুজ ঘাসের ওপরেই। অবশ্য বসুন্ধরা কিংসের মূল উৎসব হবে নিজেদের মাঠে। ২৫ জুলাই বসুন্ধরা কিংস অ্যারিনায় আবাহনী লিমিটেডের মুখোমুখি হবেন রবসন রবিনহোরা। লিগের শেষ ম্যাচ কিংস খেলবে ৩১ জুলাই শেখ জামালের বিপক্ষে।

সর্বশেষ খবর