পশ্চিমবঙ্গে শিক্ষক নিয়োগ (এসএসসি স্ক্যাম) দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার হলেন রাজ্যের সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ও বর্তমান শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে টানা ২৫ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর গতকাল তাকে গ্রেফতার করে ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-এর কর্মকর্তারা।

গতকাল বিকালে তাকে আদালতে তোলা হলে দুই দিনের রিমান্ডে পাঠান বিচারক। সূত্রের খবর, তদন্তে সহযোগিতা না করার অভিযোগেই তাকে গ্রেফতার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয় তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী অর্পিতা মুখার্জিকে। শুক্রবার রাতেই অর্পিতা মুখার্জির টালিগঞ্জের একটি বহুতল আবাসনের ফ্ল্যাট থেকে বিপুল অর্থ উদ্ধার হয়। উদ্ধার করা ওই রুপির মধ্যে ছিল প্যাকেটে মোড়া ২০০০ ও ৫০০ রুপির নোট। রুপি গুনতে অর্পিতার বাড়িতে ক্যাশ কাউন্টিং মেশিন নিয়ে যান ব্যাংক কর্মকর্তারা। ইডি সূত্রের খবর, ওই অর্থের মোট পরিমাণ ২১ কোটি রুপিরও বেশি। রুপি ছাড়াও অর্পিতার বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় ২০টি মোবাইল। তল্লাশি অভিযানে সোনা ও বৈদেশিক মুদ্রাও উদ্ধার করা হয়।

এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য পার্থ চট্টোপাধ্যায়। শুক্রবার সকালেই পার্থের দক্ষিণ কলকাতার নাকতলার বাড়িতে যান ইডির তদন্ত কর্মকর্তারা। টানা জেরায় অসুস্থ হয়ে পড়েন পার্থ। এ সময় তার পারিবারিক চিকিৎসককে ডেকে এনে চিকিৎসা করানো হয়। শুক্রবারের পর গতকাল সকাল থেকেও চলে টানা জেরা। পার্থর বাড়ি ঘিরে ফেলা হয় কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী দিয়ে। বাড়ির ভিতরে অপরিচিতদের প্রবেশের ক্ষেত্রেও কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। অর্পিতার কাছ থেকে উদ্ধার করা রুপির সঙ্গে পার্থের কোনো যোগসূত্র রয়েছে কি না, এই দুর্নীতিতে আর কারা জড়িত এসব বিষয় জানতে চায় ইডি। কিন্তু সন্তোষজনক উত্তর না মেলায় গ্রেফতার করা হয় পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে। এর আগেও মে মাসে পার্থকে কয়েক দফা জেরা করেন সিবিআইর তদন্ত কর্মকর্তারা। এদিন গ্রেফতারের পরই তাকে নিয়ে যাওয়া হয় জোকার ইএসআই হাসপাতালে। সেখানে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের শারীরিক পরীক্ষা করা হয়। এরপর এদিন বিকালে তাকে ব্যাঙ্কশাল আদালতে তোলা হয়। সেখানে মন্ত্রীকে দুই দিনের জন্য ইডির হেফাজতে পাঠায় বিচারক। সেক্ষেত্রে আগামীকাল ফের পার্থকে আদালতে তোলা হবে। ইডির হেফাজতে থাকাকালীন তাকে জেরা করে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেতে চায় ইডি। এদিন আদালতে ইডির আইনজীবীরা জানান, আর্পিতা মুখার্জির সঙ্গে সরাসরি যোগসাজশ ছিল পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের। কিছু রুপি সরানো হয়েছে আর্পিতার ফ্ল্যাটে। এ ছাড়া প্রচুর সম্পত্তি কেনা হয়েছে ওই রুপি দিয়ে। এর রসিদ পাওয়া গেছে বলে দাবি ইডির আইনজীবীদের।

অন্যদিকে গতকালও নতুন করে অর্পিতার টালিগঞ্জের করুণাময়ী এলাকায় ডায়মন্ড সিটি আবাসনে এসে দফায় দফায় জেরা করা হয়। নিরাপত্তারক্ষীরা জানান, ওই ফ্ল্যাটে মাঝেমধ্যেই আসতেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়।

এদিকে পার্থ চট্টোপাধ্যায় ছাড়াও পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী পরেশ অধিকারী, তৃণমূল বিধায়ক ও পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সাবেক সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ব্যক্তিগত সচিব সুকান্ত আচার্য, তার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা পিকে বন্দ্যোপাধ্যায়, পার্থের আত্মীয় কল্যাণময় ভট্টাচার্য, এসএসসির সাবেক উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদ সিনহা, মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সাবেক সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়, স্কুলশিক্ষা দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর অলোক কুমার সরকার, পর্ষদ সচিব রত্না চক্রবর্তী বাগচী, সাবেক পার্শ্বশিক্ষক চন্দন মন্ডলের মতো অভিযুক্তদের বাড়িতেও অভিযান চালায় ইডি।

ইতোমধ্যে এই দুর্নীতির মামলায় নাম জড়িয়েছেন মন্ত্রী পরেশ অধিকারীর মেয়ে অঙ্কিতা অধিকারীও। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ- মেধা তালিকায় নাম না থাকা সত্ত্বেও কেবল রুপি ও রাজনৈতিক প্রভাবের জোরে চাকরি পান অঙ্কিতা। পরে কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে শিক্ষকতার চাকরি যায় অর্পিতার। শুধু তা-ই নয়, স্কুলের শিক্ষিকা হিসেবে কয়েক বছর ধরে যে বেতন পেয়েছিলেন তাও দুই কিস্তিতে হাই কোর্টের রেজিস্ট্রারের কাছে ফেরতের নির্দেশ দেন আদালত।