সোমবার, ২৫ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

ভোটার না এলে বোঝা যাবে গণতন্ত্রের অপমৃত্যু হচ্ছে : সিইসি

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভোটার না এলে বোঝা যাবে গণতন্ত্রের অপমৃত্যু হচ্ছে : সিইসি

ভোটাররা অনেকটা নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেন,  ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে না এলে বোঝা যাবে গণতন্ত্রের অসুস্থতা রয়েছে, গণতন্ত্রের অপমৃত্যু হচ্ছে। গণতন্ত্রকে বাঁচিয়ে রাখতে ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে আসতে হবে। গতকাল বিকালে নির্বাচন ভবনে ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের সংলাপে সিইসি এসব কথা বলেন।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আয়োজিত রাজনৈতিক সংলাপে গতকাল চারটি দলের সঙ্গে সময়সূচি রেখে ছিল ইসি। তবে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) সংলাপে অংশ নেয়নি। খেলাফত আন্দোলন বাংলাদেশ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ ও ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ আলাদা আলাদা সময়ে সংলাপে অংশ নিয়েছে। তিন দলের সংলাপে সিইসিসহ চার নির্বাচন কমিশনার ও ইসির অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বিকালে সংলাপে ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট এম আবু নাছের তালুকদারের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের প্রতিনিধি দল অংশ নেয়। এক দিনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন না করে তিন দিনে ভোট করাসহ ৯ দফা প্রস্তাব দেয় ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ। এই দলের সংলাপে সিইসি বলেন, আমাদের কী কী ক্ষমতা আছে, এগুলো আমরা দেখছি। আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই যে ক্ষমতা আমাদের আছে, তার মধ্যেই দায়িত্ব পালন করতে হবে। সেই দায়িত্ব পালন করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করব। দুপুরে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বে ১৪ সদস্যের প্রতিনিধি দল অংশ নেয় সংলাপে। জাসদ সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার লিখিত বক্তব্যে জানান, কোনো নির্বাচনে কোনো রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ বা বর্জনের বিষয়টি একান্তই সেই রাজনৈতিক দলের নিজস্ব রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়। কোনো রাজনৈতিক দলের কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ বা বর্জনের বিষয়সহ কোনো রাজনৈতিক বিতর্কেই ইসির জড়িত হওয়া বা মতামত, বক্তব্য, মন্তব্য প্রদান করা উচিত নয়। নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক বিরোধে সালিশি সংস্থা নয়। নির্বাচন নিয়ে বিদেশি কূটনৈতিকদের অযাচিত নাক গলানো প্রসঙ্গে জাসদ মনে করে, কতিপয় বিদেশি কূটনীতিক ইসির কাজে কূটনৈতিক শিষ্টাচার পরিপন্থী এবং অযাচিতভাবে নাক গলিয়েছে। নির্বাচন কমিশনের উচিত এ ধরনের কূটনৈতিক শিষ্টাচার পরিপন্থী অযাচিত নাক গলানোকে প্রশ্রয় না দেওয়া। পরে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল সংলাপে বলেন, আমরা সবাইকে আহ্বান করব আপনারা আসেন। সবার বক্তব্য নির্বাচন যেন অংশগ্রহণমূলক হয়। শাসক দলকে বলতে শুনেছি-আমরা ওদের নিয়ে নির্বাচন করতে চাচ্ছি। আমরা সুষ্পষ্টভাবে বলেছি- আমরা কাউকে বাধ্য করতে পারব না, সেটা আমাদের দায়িত্বও নয়। আমাদের দায়িত্ব সুষ্ঠু সুন্দর নির্বাচনের জন্য সবাইকে আহ্বান করা। সিইসি জানান, বিদেশি কূটনীতিকদের দুটি গ্রুপ কমিশনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছে, তবে কোনো ধরনের পরামর্শ দেয়নি। এটা আগের কমিশনের মতোই ধারাবাহিকতা অনুসরণে ইসির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন তারা। সংবিধান, আইন, বিধিসহ নানা ধরনের আইনগত বিষয় তুলে ধরে তিনি বলেন, আমাদের ক্ষমতার খুব একটা ঘাটতি দেখছি না। ক্ষমতার খুব একটা অভাব আছে-এটা ফিল করছি না। আইনানুগভাবে প্রয়োগ করলে সহযোগিতা দেন, সমর্থন না দিয়ে বিরুদ্ধাচরণ করেন তাহলে কঠিন হবে। আমাদের ওপর আরোপিত ক্ষমতাগুলো সঠিকভাবে ব্যবহার করব। সিইসি বলেন, নির্বাচনে অনেক সময় সহিংস হয়ে পড়ি অথবা অসংযত হয়ে পড়ি। আপনাদের সহায়তা চাইব- ভোটার যাতে নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারে; কাকে দিল কাকে দিল না এটা মাথাব্যথার বিষয় না। এ বিষয়ে সবার সহযোগিতা চাইব। সংলাপে অংশ নিয়ে জাতীয় সংসদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন বিলুপ্ত করা, রাজনৈতিক দলে ৩৩ শতাংশ নারী রাখার বিধান বাতিল করা, নির্বাচনের সময় জনপ্রশাসন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো ইসির অধীনে আনা, নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ব্যবস্থা চালু করাসহ ৪০ দফা প্রস্তাব পেশ করে খেলাফত আন্দোলন। মাওলানা হাফেজ আতাউল্লাহ হাফেজ্জীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন সংলাপে অংশ নেয়। বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের সঙ্গে সংলাপে সমাপনী বক্তব্যে সিইসি জানান, নির্বাচন একটি কঠিন ও জটিল কর্মযজ্ঞ। সবার আন্তরিক সমবেত প্রয়াস থাকলে এমন কঠিন ও জটিল কর্মযজ্ঞ সাধন অসাধ্য নয়। নাগরিক সচেতনতা প্রয়োজন এবং সবার আন্তরিক সহায়তা, সমবেত প্রয়াস ও প্রচেষ্টা প্রয়োজন। দলটির দাবির বিষয়ে সিইসি জানান, নির্বাচনকালীন সরকারের ভূমিকাও হবে অতিশয় গুরুত্বপূর্ণ। কেউ বলছে নির্বাচনকালীন সরকার, কেউ তত্ত্বাবধায়ক সরকার, যদিও বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে সরকার থাকবে। নির্বাচনের সময় যে সরকার থাকবে, সেই সরকার আমাদের সহায়তা করবে। সেটি সরকারের সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ দায়িত্ব হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর