মঙ্গলবার, ২৬ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

ইসির সংলাপে আসেনি বাসদ ও এলডিপি

সরকার সহযোগিতা না করলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে : সিইসি

নিজস্ব প্রতিবেদক

নির্বাচন কমিশনের সংলাপে গতকাল চারটি দলকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) ও লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি- এলডিপি অংশ নেয়নি। সকালে সংলাপে বাংলাদেশ মুসলিম লীগ ও দুপুরে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি সংলাপে অংশ নেয়।

এদিকে অন্য কোনো দেশ নির্বাচন সামনে রেখে দেশের কোনো দলকে সমর্থন কিংবা ধমক দেবে- তেমনটা ‘বিশ্বাস করতে চান না’ প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। আর তেমন যদি সত্যি সত্যি ঘটেও, সেক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোকেই তা সামাল দিতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। গতকাল নির্বাচন ভবনে ইসির সম্মেলন কক্ষে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপের সপ্তম দিনে সিইসি এমন কথা বলেন। এ ছাড়া সকালে সিইসি বলেন, নির্বাচনকালীন ক্ষমতার কমান্ড থাকবে ইসির হাতে। এ সময় সরকার ইসিকে সহযোগিতা না করলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে।

দুপুরে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সংলাপ করেন সিইসি ও নির্বাচন কমিশনাররা। এ সময় দলটির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের লক্ষ্যে ১১ দফা প্রস্তাব পেশ করেন। সংলাপে দলটির সাধারণ সম্পাদক প্রশ্ন রাখেন, কোনো রাজনৈতিক দলের ক্ষেত্রে বা কোনো বিশেষ দলের ক্ষেত্রে দেশের বাইরে থেকে কোনো সমর্থন যদি থাকে, সেক্ষেত্রে আপনারা কী করবেন? যদি এমন কোনো কথা উঠে আসে, এটাও আলোচনার মধ্যে থাকা দরকার। তিনি বলেন, এমনও আছে দেশের বাইরেও দলের অফিস আছে। আমাদের সংবিধানের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হয় কি না দেখতে হবে। সংলাপের সমাপনী বক্তব্যে সিইসি বলেন, কোনো দেশ, অন্য কোনো দেশ আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলকে সমর্থন দেবে বা ধমক দেবে এটা আমার কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয় না। এটা হলেও মাঠে পলিটিক্যাল দলকে ফেইস করতে হবে। কমিশনের এ ক্ষেত্রে করার কিছু নেই; সেটা হওয়ারও কথা নয়।

ওয়ার্কার্স পার্টি তাদের প্রস্তাবে বলেছে, নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কাজের জন্য ভোটের সময় স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসন ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ইসির অধীনে ন্যস্ত থাকবে। ভোটের আগে ও পরের তিন মাস সময়ে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বদলি, পদোন্নতি ও অবহেলার শাস্তির কর্তৃপক্ষ হিসেবে ইসি কাজ করবে। এক্ষেত্রে সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন হবে না বলে মত দিয়েছে ওয়ার্কার্স পার্টি। এ প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, ইসিকে শক্তিশালী করতে আপনারা অনেক কিছু বলেছেন। সাংবিধানিকভাবে এটা গভর্মেন্ট ন্যস্ত করলেই যে আমি নিতে পারব- আমার সন্দেহ আছে। কারণ ক্যাবিনেট ইন রিলেটেড বাই দ্য কনস্টিটিউশন। হ্যাঁ, সংবিধান ও আইন-কানুন সংশোধন করে যদি আমাদের ওপর ন্যস্ত করা হয়, তাহলে লিগ্যালি নেওয়া যাবে। আদারওয়াইজ ইলিগ্যালি দিতে চাইলে যে আমরা নিতে পারব বা নেব, এ বিষয়ে আশ্বাস দিতে পারি না। তিনি বলেন, ক্যাবিনেট কীভাবে ফর্ম হবে, কাদের নিয়ে হবে- তা সংবিধানে উল্লেখ রয়েছে। কাজেই নির্বাচন কমিশন ইজ নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশন ইজ নট এ মিনিস্ট্রি। এটা আপনারা জানেন। (ইসির অধীনে মন্ত্রণালয় এলে) আমি কিন্তু নির্বাচন কমিশনের হোম মিনিস্টার, ডিফেন্স মিনিস্টার বা ওই ধরনের কোনো মিনিস্টার হয়ে যাব সেটা আরেকটা সংকট সৃষ্টি করতে পারে। আইনে ইসিকে যে বেশ কিছু ক্ষমতা দেওয়া আছে, সে কথা তুলে ধরে সিইসি বলেন, তার ধারণা অতীতে সে ক্ষমতাগুলো ‘সঠিকভাবে ব্যবহার হয়নি’। বর্তমান কমিশন আইন-বিধির কঠোর প্রয়োগ করবে। ইসি সঠিকভাবে বিধিবিধান পরিপালন করছে কি না, সে বিষয়ে নজরদারি করতে রাজনৈতিক দলগুলোকে পরামর্শ দেন কাজী হাবিবুল আউয়াল।

 

সরকার ইসিকে সহযোগিতা না করলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে : সিইসি

বাংলাদেশ মুসলিম লীগের সঙ্গে সংলাপে সিইসি হাবিবুল আউয়াল বলেন, নির্বাচনের সময় একটা সরকার ক্ষমতায় থাকবে। সরকার ইসিকে সহযোগিতা করবে। আমরা সরকারের ওপর প্রাধান্য বিস্তার করতে পারব। আমরা বলব, সহযোগিতাগুলো আমাদের দিতে হবে। আমরা বিশ্বাস করি সরকার তখন না করতে পারবে না, তাহলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যাবে। নির্বাচনকালীন কর্তৃত্ব ইসির হাতে থাকবে জানিয়ে সিইসি বলেন, ‘সত্যি সত্যি আমাদের ওপরে আরোপিত ক্ষমতাটার কমান্ড আমার হাতে; মূল শক্তিটা পুলিশ, বিজিবি ও সেনাবাহিনীর হাতে। শক্তিটা আমার হাতে নয়, কমান্ডটা আমার হাতে আছে। আমরা কমান্ড করলে যেন শক্তিটা রেসপন্স করে সেই ধরনের অবস্থা আমাদের সৃষ্টি করতে হবে। নির্বাচনের প্রয়োজনেই সেটি অপরিহার্যভাবে প্রয়োজন।’ নির্বাচনের কাজ ‘খুব সহজ নয়, বরং কঠিন’ মন্তব্য করে সিইসি বলেন, কঠিন হলেও এটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিতে হবে এবং এই কঠিন চ্যালেঞ্জটা মোকাবিলা করতে হবে। সংবিধান সংশোধন হলে তা নিয়ে নির্বাচন কমিশনের ‘বিচলিত’ হওয়ারও কিছু দেখছেন না সিইসি। তার ভাষায়, সংবিধান যদি কালকেই সংশোধন হয়, আমরা ওর আওতায় পড়ে যাব। এতে আমাদের কোনো অসুবিধা বা বিচলিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। আমরা অবশ্যই সংবিধান মান্য করব।

অ্যাডভোকেট বদরুদ্দোজা সুজার নেতৃত্বে বাংলাদেশ মুসলিম লীগের প্রতিনিধি দল সংলাপে অংশ নেয়।

সর্বশেষ খবর