মঙ্গলবার, ২৬ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

ভিকটিমের চরিত্র নিয়ে প্রশ্নের আগে অনুমতি লাগবে আদালতের

নিজস্ব প্রতিবেদক

যে-কোনো মামলার বিচারের সময় আদালত ডিজিটাল কনটেন্ট, তথ্য-উপাত্ত ও নথিপত্র এভিডেন্স (প্রমাণ) হিসেবে গ্রহণ করতে পারবেন এমন সুযোগ রেখে এভিডেন্স অ্যাক্ট, ২০২২-এর সংশোধন প্রস্তাব অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা। গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। এ ছাড়া বৈঠকে মন্ত্রিসভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের বিষয়ে ২০২২ সালের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক (এপ্রিল-জুন) প্রতিবেদন, গ্রাম আদালত (সংশোধন) আইন, বাংলাদেশ শিল্প নকশা আইন, সামুদ্রিক মৎস্য আহরণ নীতিমালা এবং বাংলাদেশ-রুয়ান্ডার মধ্যে বিমান চলাচল-সংক্রান্ত দ্বিপক্ষীয় চুক্তির খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়। সভা শেষে ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এসব তথ্য জানান। প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন ও মন্ত্রিসভার সদস্যরা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সংযুক্ত ছিলেন। এভিডেন্স অ্যাক্ট প্রসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আদালতে শুনানিকালে ধর্ষিতাকে চরিত্রহীন প্রমাণের জন্য চেষ্টা করা হয়। আদালতের পূর্বানুমতি না নিয়ে এক পক্ষ অন্য পক্ষকে চরিত্রহীন বলতে পারবে না। আদালত যদি মনে করেন, সব ক্ষেত্রে কারণ আউটলাইন করে না দেওয়া হয়, তাহলে অনেক ক্ষেত্রে খারাপ লোকও থাকতে পারে যে কি না ভালো একজন লোককে ট্র্যাপে ফেলতে পারে। সে ক্ষেত্রে আদালত বিবেচনা করবেন কারও চারিত্রিক বিষয়ে কোনো প্রশ্ন করা যাবে কি না। এ ছাড়া ডিজিটাল কোর্টকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে বিধায় কিছু সংশোধন আনার প্রয়োজন হয়েছে, যাতে ডিজিটাল কোর্ট, ডিজিটাল সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য হয়। কারণ এভিডেন্ট অ্যাক্টে এটা ছিল না। আইনটির ক্ষেত্রে ইনফরমেশন বা ডাটা ব্যবহার করা হবে। শুধু ইনফরমেশনকে ইনক্লুড করা ছিল। যেসব ইনফরমেশন আসবে সেগুলো সাক্ষ্য হিসেবে নেওয়া যাবে। ক্যাবিনেট মিটিংয়ে আলোচনা হয়েছে যে ডাটাকেও (সাক্ষ্য হিসেবে) নিতে হবে। ডিজিটাল রেকর্ডকে বিবেচনা করা হবে। এটা আগে ছিল না।

ছয় মাসে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার ৬৬ শতাংশ : চলতি বছরের ছয় মাসে (জানুয়ারি থেকে জুন) মন্ত্রিসভায় নেওয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার ৬৬ দশমিক ১২ শতাংশ। গতকালের মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ-সংক্রান্ত ‘মন্ত্রিসভা বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের বিষয়ে ২০২২ সালের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক (এপ্রিল-জুন) প্রতিবেদন’ উপস্থাপন করা হয়। এ প্রসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ১৪টি মন্ত্রিসভা বৈঠক হয়েছে। মোট সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ১২১টি। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়েছে ৮০টি। বাস্তবায়নাধীন রয়েছে ৪১টি। বাস্তবায়নের হার ৬৬ দশমিক ১২ শতাংশ। এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত সাতটি মন্ত্রিসভা বৈঠক হয়। এতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ৬২টি। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হয়েছে ৪০টি। ২২টি বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। বাস্তবায়নের হার ৬৪ দশমিক ৫১ শতাংশ। গত বছর একই সময়ে মন্ত্রিসভা বৈঠক হয় সাতটি। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ৫৭টি। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয় ৩৭টি। বাস্তবায়নাধীন ২০টি। বাস্তবায়নের হার প্রায় ৬৫ শতাংশ। চলতি বছর এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত মন্ত্রিসভা বৈঠকে চারটি নীতি বা কর্মকৌশল, চারটি চুক্তি বা প্রটোকল অনুমোদন হয়েছে। এই সময়ে সংসদে আইন পাস হয়েছে ১০টি। গত বছর একই সময়ে মন্ত্রিসভা বৈঠকে দুটি নীতি বা কর্মকৌশল, একটি চুক্তি বা প্রটোকল অনুমোদন হয়েছে। এই সময়ে সংসদে আইন পাস হয়েছে ছয়টি। করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হার সন্তোষজনক বলে জানিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

সালিশ নিষ্পত্তি ১৫ দিনের মধ্যে : গ্রাম আদালতে সালিশ নিষ্পত্তির সময়সীমা এক মাস থেকে কমিয়ে ১৫ দিন নির্ধারণ করে ‘গ্রাম আদালত (সংশোধন) আইন, ২০২২’-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এ প্রসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আইনটিকে একটু রিভিশন করা হয়েছে। যেমন ‘নাবালক’ শব্দের পরিবর্তে ‘শিশু’ লেখা হয়েছে। আগে শুধু নাবালক বলা হতো, এখন শিশু। শিশুর যে ডেফিনেশন আছে শিশু আইনে, সে অনুযায়ী শিশুকে ডেসস্ক্রাইব করতে হবে। ২০১৩ সালে যখন আইনটি করা হয় তখন নিষ্পত্তির সীমা ছিল ৩০ দিন। এখন তা কমিয়ে ১৫ দিন করা হয়েছে। ২০১৩ সালে একটি বিষয় ছিল যে, ক্ষতিপূরণের ক্ষেত্রে ৭৫ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করতে পারবে। এখন এটা ৩ লাখ করে দেওয়া হয়েছে। গ্রাম আদালতে পাঁচজন সদস্য থাকবেন। একজন চেয়ারম্যান, দুই পক্ষ থেকে দুজন করে। নারী যদি থাকেন, একজন থাকবেন। বিশেষ করে যদি নারী অভিযোগকারী থাকেন।

জাতীয় প্রতীক দিয়ে শিল্প-নকশায় মিলবে না স্বত্ব : দেশের জাতীয় প্রতীক দিয়ে কোনো শিল্প-নকশা করা হলে মালিকানা স্বত্ব মিলবে না এমন বিধান রেখে ‘বাংলাদেশ শিল্প-নকশা আইন, ২০২২’-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। খসড়া আইন অনুযায়ী জাতীয় প্রতীকের সমন্বয়ে গঠিত কোনো শিল্প ও নকশার মালিকানা স্বত্ব দেওয়া হবে না জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘শাপলা দিয়ে কেউ একটা নকশা করে বলল এটা আমার প্রোপার্টি রাইট (স্বত্ব), এটা (স্বত্ব) দেওয়া হবে না। কেউ বাঘ দিয়ে, কাঁঠাল দিয়ে নকশা করল, সেটা হবে না। কারণ এগুলো আমাদের জাতীয় নকশা। পাশাপাশি কোনো শিল্প-নকশার স্বত্বাধিকারী তার নিবন্ধিত শিল্প-নকশা অন্য কোনো ব্যক্তির ব্যবহার করা থেকে নিবৃত্ত করার অধিকার থাকবে। আমি যদি সঠিকভাবে কোনো নকশার স্বত্ব নিই, তবে কেউ সেটা ব্যবহার করতে চাইলে অনুমতি নিতে হবে।’

সমুদ্রগামী সব নৌযানে নম্বর দেওয়ার নির্দেশ : সমুদ্রগামী নৌকা বা জাহাজে চার মাসের মধ্যে নম্বর দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এজন্য নির্দিষ্ট কোনো রং ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘সামুদ্রিক মৎস্য আইন অনুযায়ী একটি নীতিমালা করা হয়েছে। ২০টি প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, যাতে আমরা সামুদ্রিক মৎস্য আহরণে একটা সিস্টেম আনতে পারি। সমুদ্রে যত নৌযান মাছ ধরে সেগুলোকে ইমেডিয়েটলি রেজিস্ট্রেশন করা ডিফিকাল্ট হবে। তাই এ মুহূর্তে কালার করে নম্বর দিয়ে দেওয়া, যাতে সেগুলোকে আইডেন্টিফাই করা যায়। সবুজ, লাল অথবা যেটা দেওয়া হোক, সেটা নিয়ে আজ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ইমেডিয়েটলি, নইলে আবার মিয়ানমারের কিছু নৌকা আমাদের মধ্যে ঢুকে যাচ্ছে। ভারতের নৌকার কিন্তু একটা কালার আছে, রেজিস্ট্রেশন নম্বরও আছে। নম্বর দিয়ে টাইম দিয়ে দেওয়া তিন-চার মাস, এরপর আর নম্বর ছাড়া যেন কোনো নৌকা নামতে না পারে। রেজিস্ট্রেশন নম্বরটা দেবে মৎস্য অধিদফতর।’

রুয়ান্ডার সঙ্গে বিমান চলাচল চুক্তির খসড়া অনুমোদন : আফ্রিকার দেশ রুয়ান্ডায় সরাসরি বিমান চলাচলে একটি চুক্তির খসড়ার অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘বাংলাদেশ ও রুয়ান্ডার মধ্যে স্বাক্ষরের লক্ষ্যে দ্বিপক্ষীয় বিমান চলাচল-সংক্রান্ত চুক্তির খসড়ার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এটা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে বলা হয়েছে। এটার ইকোনমিক সাইটটা আরও ভালো করে দেখে এ থেকে আমদের কী কী বেনিফিট আসবে তা দেখে এরপর করতে বলা হয়েছে।’

 

সর্বশেষ খবর