বুধবার, ২৭ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা
ইসির মতবিনিময় অব্যাহত

২০১৮ সালের মতো ভোট হবে না : সিইসি

নিজস্ব প্রতিবেদক

২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনের মতো দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে না বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (নিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেন, ‘১৮ সালের যে নির্বাচনের কথা বলেছেন, না ওভাবে নির্বাচন হবে এটি আপনারা আশা করেন না। নির্বাচন নির্বাচনের আইন অনুযায়ী হবে।’ গতকাল নির্বাচন ভবনের সম্মেলন কক্ষে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপের অষ্টম দিনে এ কথা বলেন তিনি। সিইসি জানান, একাদশ সংসদ নির্বাচনের সমালোচনা ও দায় বর্তমান ইসির বিষয় নয়। নির্বাচন কমিশনাররা ভালো নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, এই প্রতিশ্রুতির কিছু মূল্য থাকা তো উচিত। একেবারে যে আমরা ডিগবাজি খেয়ে যাব তা তো নয়। সেটা হওয়ার কথা নয়। সকালে মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দীর নেতৃত্বে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধি দল সংলাপে অংশ  নেয়। এ সময় ভোটের ক্ষেত্রে নানা প্রতিবন্ধকতার কথা তুলে ধরে দলটির পক্ষ থেকে ১১ দফা প্রস্তাবনা পেশ করা হয়। এ বিষয়ে সংলাপে সিইসি বলেন, বিভিন্ন ধরনের সমস্যা রয়েছে। বলতে চাচ্ছি-সমস্যাগুলো বিবেচনায় নিয়ে কীভাবে ব্যালেন্স করে অর্থবহ, যতদূর সম্ভব নিরপেক্ষ, দুর্নীতিমুক্ত নির্বাচন করা যায় এমন কথা আমার সহকর্মীরাও বলেছেন। কাজেই আমাদের ওপর আস্থা রাখেন। আস্থা রাখতে গিয়ে চোখ বন্ধ করে রাখলে হবে না। তিনি বলেন, গোপনে অর্থশক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করা দুষ্কর, হলেও এর বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। আপনাদের নজরদারি থাকতে হবে। আমরা কি আসলেই সাধু পুরুষ, নাকি ভিতরে ভিতরে অসাধু। নজরদারি না রাখেন, তাহলে আপনাদের তরফ থেকে দায়িত্ব পালন করলেন না। অভিযোগ পেলেই সঙ্গে সঙ্গে পাঠাবেন। সিইসির মতে, এখানে অপসংস্কৃতি হয়ে গেছে; পয়সা ঢালছে, মাস্তান ভাড়া করছে। একজন প্রফেশনাল কিলারকে হায়ার করতে খুব বেশি পয়সা লাগে না, আজকাল যেটা হয়েছে। অর্থশক্তি, পেশিশক্তিকে আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারব না। এই সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য সবাইকে সামাজিক আন্দোলন করতে হবে। মাঠ আপনাদের থাকতে হবে। আমাদের তথ্য দিলে আমরা আপনাদের সাহায্য করব। দুপুরে বিকল্পধারা বাংলাদেশের মহাসচিব আবদুল মান্নানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল সংলাপে অংশ নেয়। এ সময় দলটি সব কেন্দ্রে ইভিএম, সামরিক বাহিনীর অন্তত পাঁচজন করে সদস্য নিয়োগসহ সাত দফা প্রস্তাবনা পেশ করেন। বৈঠকে সিইসি দলটিকে আশ্বস্ত করেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য তারা সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা নেবেন। নির্বাচনকালীন ইসি আইন-বিধি বিধান অনুযায়ী চলবে। সরকারের সহযোগিতা থাকবে। তিনি জানান, বারবার অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কথা বলছি। অংশগ্রহণ হলেই কি অবিচার, ভোট চুরি হবে না তা তো নয়। অংশগ্রহণ হলে ভারসাম্য আসে, প্রতি কেন্দ্রে বড় বড় দল থাকে তাদের কর্মী সমর্থকরা ভারসাম্য সৃষ্টি করে ইসির কাজটা সহজ করে দেয়। আমি বারবার চাই-অবাধ, নিরপেক্ষ অংশগ্রহণমূলক শান্তিপূর্ণ নির্বাচন। তিনি বলেন, পলিটিক্স থেকে কিন্তু গণতন্ত্রের জন্ম। গণতন্ত্র থেকে পলিটিক্সের জন্ম হয়নি। অনেক আগে যখন ক্ষমতা নিয়ে..., তারপর আস্তে আস্তে উনারাই সৃষ্টি করলেন গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচনের। সেই নির্বাচনটিকে যদি বাঁচিয়ে রাখা না যায় তাহলে পলিটিক্স উধাও হয়ে যাবে, পলিটিক্স থাকবে না। বিকালে ন্যাশনাল পিপল্স পার্টি-এনপিপির সঙ্গে বৈঠক শেষে সমাপনী বক্তব্যে সিইসি বলেন, জিতি বা হারি- সেটা বড় কথা নয়। এমন মনস্তত্ত্ব হয়ে দাঁড়িয়েছে- কোনোভাবেই হারব না। হারতে তো একজনকে হবেই। এ মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তনটাও প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। নির্বাচন হবে, ভোটাররা ভোট দেবেন। আমি হারতেও পারি, জিততেও পারি। কিন্তু মনস্তাত্ত্বিক যে সংকট কোনোভাবে হারা যাবে না- এটা অর্থশক্তি, দ্বন্দ্ব বা বিরাজমান রাজনীতির কারণে হতে পারে। কিন্তু সে অবস্থা থেকে আমাদের উঠে আসা প্রয়োজন। তিনি জানান, ছোট দল, বড় দল সবার সহযোগিতা দরকার রয়েছে। আমরা বারবার বলেছি- অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চাই। কেন অংশগ্রহণমূলক বলছি- অনেকে হয়তো বলছেন অংশগ্রহণমূলক দরকার নেই; যে আসার আসবে, যে আসবে না। কিন্তু আমি বলছি, না। আমরা সব সময় বলে যাব- আপনারা আসেন, নির্বাচন করেন। এর পেছনে আমাদের একটা উদ্দেশ্য আছে- নির্বাচনের মাঠে সব দল যদি থাকে উনার এজেন্ট থাকে, আপনার এজেন্ট থাকে, সবার এজেন্ট থাকে। তাহলে ভারসাম্য সৃষ্টি হয়; পুলিশ লাগে না, আপনি করতে পারবেন। এটা গণতন্ত্রের একটা অনুষঙ্গ। নির্বাচনের সময় রাজনীতির কারণে পুলিশি হয়রানি যাতে না হয় সে দিকে লক্ষ্য রাখবে বলে আশ্বস্ত করেছে কমিশন। বিকালে চেয়ারম্যান শেখ ছালাউদ্দিন ছালুর নেতৃত্বে এনপিপির একটি প্রতিনিধি দল ইসির সংলাপে অংশ নেয়। দলটির পক্ষ থেকে তফসিল ঘোষণার পর কোনো রাজনৈতিক মামলা না দেওয়া, প্রার্থী বা কর্মীদের অযথা হয়রানি না করাসহ ১৬ দফা সুপারিশ পেশ করা হয়। রাজনৈতিক দলের সংলাপে দুপুর আড়াইটা থেকে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সঙ্গে সংলাপ সূচি থাকলেও দলটি সংলাপে আসেনি। ধারাবাহিক এ সংলাপে আজ বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি, জাকের পার্টি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ও বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির সঙ্গে আলোচনাসূচি রয়েছে।

 

সর্বশেষ খবর