শুক্রবার, ২৯ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

শিক্ষায়ও এগিয়ে নারী

♦ মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে ছেলেদের ছাড়িয়ে মেয়েরা ♦ উচ্চশিক্ষায় প্রতি বছরই বাড়ছে নারীর সংখ্যা ♦ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক বিভাগে ৭০ শতাংশের বেশি ছাত্রী

আকতারুজ্জামান

শিক্ষায়ও এগিয়ে নারী

নারী শিক্ষার্থী বেড়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে। প্রত্যন্ত অঞ্চলেও মেয়েরা যায় স্কুলে -বাংলাদেশ প্রতিদিন

নারী শিক্ষায় অনেক দূর এগিয়েছে দেশ। প্রাথমিক থেকে শুরু করে মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিকে ছেলেদের তুলনায় শিক্ষার্থী ভর্তি, পাস সব ক্ষেত্রেই এগিয়ে মেয়েরা। আর উচ্চশিক্ষার বিদ্যাপীঠ বিশ্ববিদ্যালয়েও অনেক বিভাগে ছেলেদের থেকে বেশি মেয়ে পড়াশোনা করছে। কোনো কোনো বিভাগে ৭০ শতাংশের বেশি ছাত্রী।

উচ্চমাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত অবৈতনিক নারী শিক্ষার সুযোগ, ছাত্রীদের বৃত্তির ব্যবস্থাসহ নানা কারণেই শিক্ষা ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে মেয়েরা। এ ছাড়া অনগ্রসর আর দরিদ্র পরিবারে ছেলেদের কেউ কেউ মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিকের পাঠ শেষ করার আগেই কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করায় শিক্ষা ক্ষেত্রে শতাংশের হিসাবে এগিয়ে রয়েছে তারা।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রোনমি অ্যান্ড এগ্রিকালচারাল এক্সটেনশন বিভাগে প্রথম বর্ষে ৫৫ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন, যাদের মধ্যে মাত্র ১৬ জন ছাত্র। বাকি ৩৯ জনই ছাত্রী, যা ৭০ শতাংশের বেশি। বিভাগের সভাপতি মো. আবদুল আলিম প্রতিবেদককে বলেন, বিভাগের বিভিন্ন বর্ষে একই চিত্র। তিনি বলেন, অনেকের ধারণা জীববিজ্ঞানবিষয়ক সাবজেক্টগুলোতে ছাত্রীরা তুলনামূলক বেশি পড়ছে। কিন্তু ইঞ্জিনিয়ারিংসহ অন্য অনেক বিভাগেও ছাত্রীরা এগিয়ে রয়েছে। এ অধ্যাপক বলেন, ছাত্রীরা শুধু ভর্তির ক্ষেত্রেই এগিয়ে নয়, পাসের ক্ষেত্রে বা ভালো ফলাফলের ক্ষেত্রেও তারা এগিয়ে রয়েছে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, মেয়েরা ক্লাসরুম আর তাদের হল- এর বাইরে তেমন সময় কাটায় না। তাই বেশির ভাগ সময় পাঠেই মেয়েদের মনোযোগ।

উত্তরের জেলা নীলফামারী সদরে রামনগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে মোট চার শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। এ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আনোয়ার হোসেন জানান, ষষ্ঠ শ্রেণিতে ১২০ জন ছাত্রছাত্রী অধ্যয়নরত। এদের মধ্যে ৬০ শতাংশই ছাত্রী। অন্য শ্রেণিতেও মেয়েদের আধিক্য থাকার কথা জানান তিনি। শুধু নীলফামারী নয়, প্রাথমিক আর মাধ্যমিক পর্যায়ের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই ছুটি হওয়ার পর তুলনামূলক মেয়েদের উপস্থিতি বেশি চোখে পড়ে। অনেক গ্রামের মেয়ে শিক্ষার্থীরা সাইকেল চালিয়ে প্রত্যন্ত এলাকায় স্কুল-কলেজে যাচ্ছে। উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত বিনা বেতনে নারী শিক্ষার সুযোগের কারণে পড়াশোনায়  মেয়েদের অংশগ্রহণ বাড়ছে। সর্বশেষ প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার (২০১৯) ফলাফলে দেখা গেছে, পাস ও জিপিএ-৫ পাওয়ার ক্ষেত্রে ছেলেদের চেয়ে এগিয়ে আছে মেয়েরা। উল্লিখিত বছরে, সমাপনী পাস করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১০ লাখ ৭২ হাজার ১৫৪ জন ছাত্র ও ১২ লাখ ৭১ হাজার ৫৮৯ জন ছাত্রী ছিল। আর জিপিএ-৫ পাওয়া মোট শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১ লাখ ৪১ হাজার ৪৫১ জন ছাত্র ও ১ লাখ ৮৪ হাজার ৬৩৭ জন ছাত্রী ছিল।

সর্বশেষ এসএসসি ও সমমান এবং এইচএসসি ও সমমানের  (২০২১) ফলাফলেও নারীরা পাসের হারে এগিয়ে ছিল। এসএসসি ও সমমানের গত বছরের (২০২১) ফলাফলে দেখা গেছে, ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে ৯৪ দশমিক ৮৮ শতাংশ ছাত্রী ও ৯৩ দশমিক ২৫ শতাংশ ছাত্র পাস করেছে। গত বছর এইচএসসি ও সমমানে ৯৪ দশমিক ১৪ শতাংশ ছাত্র ও ৯৬ দশমিক ৪৯ শতাংশ ছাত্রী পাস করেছে। দেখা গেছে, প্রতিটি শিক্ষা বোর্ডেই ছাত্রদের চেয়ে পাসের হারে এগিয়ে রয়েছে ছাত্রীরা। ছেলেদের থেকে মেয়েরা ১৫ হাজার ৬৪৩ জন বেশি জিপিএ-৫ পেয়েছে গত বছর।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক (রুটিন দায়িত্ব) অধ্যাপক শাহেদুল খবির চৌধুরী গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নারীদের এগিয়ে নিতে সরকার নানা প্রণোদনামূলক ব্যবস্থা হাতে নিয়েছে। এর অংশ হিসেবে উচ্চমাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত বিনা বেতনে পড়াশোনা করছে মেয়েরা। এ ছাড়াও তাদের জন্য শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে উপবৃত্তির ব্যবস্থা করেছে সরকার। পড়াশোনায় আগ্রহী হলে অর্থের অভাবে কোনো মেয়ের পড়াশোনা আটকে থাকবে না। এমন নানা উদ্যোগেই পড়ালেখায় এগিয়ে যাচ্ছে ছাত্রীরা। উচ্চশিক্ষার বিদ্যাপীঠ বিশ্ববিদ্যালয়েও ছেলেদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মেয়েরা পড়াশোনা করছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সর্বশেষ (৪৭তম) প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ২০১৯ সালে অধ্যয়নরত মোট শিক্ষার্থীর মধ্যে ৫৪ শতাংশ ছাত্র আর ৪৬ শতাংশ ছাত্রী। তবে প্রতিবছরই উচ্চশিক্ষা স্তরে ছাত্রীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইউজিসি সচিব ড. ফেরদৌস জামান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সরকার প্রাথমিক শিক্ষা সর্বজনীন, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা মেয়েদের জন্য অবৈতনিক করার সুফল পাচ্ছে দেশ। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষায় ছাত্রীদের সংখ্যা প্রতিনিয়তই বাড়ছে। এ ছাড়া ছাত্রদের তুলনায় ছাত্রীরা পাঠে বেশি মনোযোগী। তাই ফলাফলেও ভালো করছে ছাত্রীরা।

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি গতকাল প্রতিবেদককে বলেন, নারী শিক্ষায় সরকার বিশেষভাবে গুরুত্ব দিচ্ছে। অর্থনৈতিক বাধা দূর করতে স্টাইপেন্ডসহ নানা প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। মেয়ে সন্তানের শিক্ষার জন্য বাবা-মায়েরাও এখন অনেক উৎসাহী। আগে মেয়েদের পরিবারে বোঝা মনে করা হতো। কিন্তু এখন মেয়েরা বড় হয়ে পরিবারের দায়িত্বও নিচ্ছে। সমাজে দৃষ্টিভঙ্গিরও পরিবর্তন এসেছে। আগে মেয়েরা তেমন একটা সুযোগ পেত না, কিন্তু বর্তমানে সুযোগ দেওয়ায় তারা নিজেদের যোগ্যতার প্রমাণ দিচ্ছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে গিয়ে দেখেছি স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৃহৎ অংশই ছাত্রী। সার্বিকভাবে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের কারণে নারী শিক্ষায় অগ্রগতি হয়েছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর