শুক্রবার, ২৯ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

অস্ত্র ব্যবসায়ীদের লাভের জন্য যুদ্ধ : প্রধানমন্ত্রী

♦ সোনার হরিণ ধরতে ভিটেমাটি বিক্রি করবেন না ♦ উন্নত দেশগুলোর মতো আমরাও জ্বালানি সাশ্রয়ের উদ্যোগ নিয়েছি

নিজস্ব প্রতিবেদক

অস্ত্র ব্যবসায়ীদের লাভের জন্য যুদ্ধ : প্রধানমন্ত্রী

বিদেশগামীদের সতর্ক করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দালালের খপ্পরে পড়ে সোনার হরিণ ধরতে ভিটেমাটি বিক্রি করে কেউ বিদেশে যাবেন না। বিদেশে যেতে প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংক থেকে আপনারা ঋণ নিতে পারেন। প্রয়োজনভেদে বিনা জামানতেও ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা আছে।

গতকাল রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) উপজেলা পর্যায়ে ২৪টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি) উদ্বোধন অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দালালের মাধ্যমে গেলে তারা বিপদে পড়ে। সরকারের পক্ষ থেকেই তাদের উদ্ধার করতে হয় অথবা ভূমধ্যসাগরে তাদের সলিলসমাধি হয় (অবৈধভাবে সাগর পাড়ি দিয়ে অভিবাসন খুঁজতে গিয়ে)। এটা দুর্ভাগ্যজনক। তিনি বলেন, পাসপোর্ট দেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, শ্রমবাজার খুঁজবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয় সার্টিফিকেট দেবে আর প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় মানুষ পাঠাবে। এ ক্ষেত্রে আমাদের প্রতিটি মন্ত্রণালয়কে যৌথভাবে কাজ করতে হবে। এসব কাজের জন্য প্রতিটি মন্ত্রণালয় থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দিয়ে একটি কমিটি করে নিজ উদ্যোগে কাজ করতে হবে। তাহলে সব কাজ এক জায়গায় বসে সহজেই করা সম্ভব হবে। তিনি এর সঙ্গে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়কেও যুক্ত করার পরামর্শ দেন। একই সঙ্গে তিনি বিদেশে দক্ষ কর্মী প্রেরণ ও গৃহকর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে বিদেশ গমনেচ্ছুরা যেন সঠিকভাবে প্রশিক্ষণ নেয় তা নিশ্চিত করার জন্যও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, সরকার যে টিটিসি করে দিচ্ছে এর মাধ্যমে ভবিষ্যতে আরও দক্ষ জনশক্তি রপ্তানি সম্ভব হবে। বিদেশ গমনেচ্ছুরা যেন যথাযথ প্রশিক্ষণ নেন তা নিশ্চিত করার নির্দেশ দেন তিনি। সরকার সব সময় বিদেশগামী কর্মীদের স্বার্থ সুরক্ষায় বিশেষ পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার সাড়ে ১৩ বছরে ৫৫টি নতুন শ্রমবাজার তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। যেখানে বিএনপি-জামায়াত জোটের শাসনামলে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানোর ক্ষেত্রে হয়রানিসহ নানা অভিযোগে অনেক জায়গাতেই শ্রমবাজার কমে আসে। সে সময়কার সিন্ডিকেটের দুর্নীতি ও হয়রানি বন্ধ করে তার সরকার বিদেশগামী শ্রমিকদের হয়রানি অনেকটাই লাঘবে সক্ষম হয়েছে। ২০০৫-০৬ সালে জোট সরকারের বিদেশে কর্মী প্রেরণের সংখ্যা ছিল ২ লাখ ৫২ হাজার ৭০২, আর রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল ৪ দশমিক ২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। সেখানে আওয়ামী লীগ সরকার ২০২১-২২ অর্থবছরে তা ৫ গুণ বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়। এ সময়ে কর্মী প্রেরণ করা হয়েছে ৯ লাখ ৬৬ হাজার ৫০৫ জন এবং ২১ দশমিক ০৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। প্রধানমন্ত্রী এ পরিসংখ্যান তুলে সমালোচকদের উদ্দেশে বলেন, যারা এখন সমালোচনা করেন তাদেরই জবাবটা দিতে চাই। কারণ তাহলে আর বিভ্রান্তি ছড়াতে পারবে না, তাদেরও হিসাবটা জানা উচিত তারা ক্ষমতায় থাকতে কী অবস্থা ছিল দেশে।

অস্ত্র ব্যবসায়ীদের লাভের জন্য রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ : রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুধু অস্ত্র বিক্রেতাদের লাভবান হওয়ার জন্য সংঘটিত হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, এ যুদ্ধ অর্থহীন। কারণ এ যুদ্ধে আমি দেখতে পাচ্ছি, শুধু যারা অস্ত্র তৈরি করে তারাই লাভবান হচ্ছে। সাধারণ মানুষের জীবন বিপন্ন হচ্ছে। এ যুদ্ধ শুধু যুদ্ধই নয়, তার সঙ্গে আবার নিষেধাজ্ঞা। এ নিষেধাজ্ঞা-পাল্টা নিষেধাজ্ঞার ফলে আজ সারা বিশ্বই অর্থনৈতিক ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। তিনি বলেন, উন্নত দেশগুলো জ্বালানি সাশ্রয়ের উদ্যোগ নিয়েছে, আমরাও নিয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের কিছু লোক আছে এটা নিয়ে নানা ধরনের গল্পগুজব করে বেড়ায়। আমি মনে করি আমাদের তিন মাসের খাদ্য কেনার যে রিজার্ভ সেটা থাকলেই যথেষ্ট। তিনি বলেন, আমাদের জনসংখ্যা এখন ১৬ কোটি ৫১ লাখের কিছু ওপরে। সে ক্ষেত্রে আমি বলব, আমাদের ৩৮ শতাংশ হচ্ছে যুবসমাজ। কাজেই আমাদের এ যুবশক্তিটা আমরা শুধু বিদেশে প্রেরণ করব, এ চিন্তা করলে হবে না। আমরা দেশে ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি করছি। সেখানে আমাদের দক্ষ কর্মীর প্রয়োজন আছে। তারা বিদেশে যেমন কাজ করবে, আবার দেশেও তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা যাতে হয় সে ব্যবস্থা নিতে হবে।

অনুষ্ঠানে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ, সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, সচিব ড. আহমেদ মুনিরুস সালেহীন এবং বিএমইটির মহাপরিচালক মো. শহিদুল আলম বক্তৃতা দেন। অনুষ্ঠানে টিটিসির ওপর একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।

 

সর্বশেষ খবর