শুক্রবার, ২৯ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

সংলাপে যায়নি সিপিবি

নির্বাচন হাড্ডাহাড্ডি যখন হয়, তখন ভোটের শেষে মারামারিটা হয় : সিইসি

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজনৈতিক দলগুলো যথাযথভাবে সরব ভূমিকা পালন করতে পারছে কি না, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। এদিকে নির্বাচন হাড্ডাহাড্ডি যখন হয়, তখন ভোটের শেষে মারামারিটা হয় বলে মন্তব্য করেছেন সিইসি। ভোটে সহিংসতার চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে সিইসি বলেন, বুধবার একটা বাচ্চা মারা গেছে। নির্বাচন শেষে এ ঘটনা ঘটে। রাত ১০টা/১১টার দিকে ফোন করেছি ডিসি, এসপিকে। ঘটনাটা যে কী হলো। নির্বাচনটা শেষ হয়ে গিয়েছিল এবং শেষ হওয়ার পর মেম্বার প্রার্থী হামলা করে বসল। ভোট শেষে সহিংসতার ঘটনা প্রায়ই হয়ে থাকে, মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন না ঘটলে এ সংকট থেকে যাবে বলে জানান তিনি। নির্বাচনে যে করেই হোক জিততেই হবে, কোনোভাবে হারা যাবে না- এমন মানসিক দৈন্যতাকেই সহিংসতার জন্য দায়ী মনে করছেন সিইসি। গতকাল নির্বাচন ভবনের সম্মেলন কক্ষে রাজনৈতিক দলের সংলাপে দশম দিনে তিনি এ কথা বলেন। সকালের সংলাপে নির্বাচনী সহিংসতার প্রসঙ্গ গুরুত্ব পায় সিইসির কথায়। উল্লেখ্য, ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বুধবার ভোট কেন্দ্রে গুলিতে ছয় মাস বয়সী এক শিশু নিহত হয়েছে। প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ গুলিও করেছে। শিশু কার গুলিতে মারা গেছে তা নিশ্চিত করেননি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।

সংলাপে চারটি দলকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) সংলাপে আসেনি। তবে গণফোরাম এবং বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ ও বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন (বিটিএফ)-এর প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সংলাপ করে ইসি। সংলাপে সিইসি ছাড়াও চার নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিব ও অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। মোকাব্বির খানের নেতৃত্বে গণফোরামের প্রতিনিধি দলটি ১০ দফা সুপারিশ তুলে ধরেন। সাধারণ সম্পাদক আ ও ম শফিক উল্লাহ লিখিত বক্তব্যে জানান, গত দুটো নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হয়নি। আগামী সংসদ নির্বাচন ইসির জন্যে বড় চ্যালেঞ্জ। গণফোরাম প্রত্যাশা করে, বর্তমান ইসি একটি গ্রহণযোগ্য পরিবেশ সৃষ্টি করে সব দলের অংশগ্রহণে ও গণমানুষের আস্থা অর্জনে যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিতে সক্ষম হবে।

রাজনৈতিক দলের ভূমিকা নিয়ে সিইসির সংশয় : রাজনৈতিক দলগুলো যথাযথভাবে সরব ভূমিকা পালন করতে পারছে কি না, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। গতকাল বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ন্যাপের সংলাপে এ সংশয়ের কথা জানান সিইসি। ন্যাপের চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি, মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়াসহ দলের একটি প্রতিনিধি দল সংলাপে অংশ নেয়।

সংলাপে অংশ নিয়ে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ, সংসদে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতি চালুর প্রস্তাব করে ন্যাপ। ব্যক্তিগতভাবে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে আসন বণ্টনের বিষয়টি সমর্থন করেন জানিয়ে সিইসি বলেন, ‘আপনারা (রাজনৈতিক দল) যথাযথ সরব ভূমিকা পালন করতে পারছেন কি না, সেটা নিয়ে আমার একটু সংশয় আছে। আমি চাই আপনারা আরও সরব ভূমিকা পালন করেন। তাহলে আমার জন্য ফিল্ডটা মসৃণ হয়ে যাবে। দলটির সংসদে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের প্রস্তাব প্রসঙ্গে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের প্রস্তাবটি অসম্ভব সুন্দর একটি প্রস্তাব। প্রতিনিধিত্ব নিয়ে আরও কথা বলা দরকার।

কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, তিনি যত দূর শুনেছেন, রাজনীতিবিদরা পরামর্শ করে দেখবেন আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের বিষয়টি দেশের জন্য ও মানুষের সেন্টিমেন্টের সঙ্গে উপযোগী কি না? তিনি এটি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের দায়িত্ব বলে মন্তব্য করেন। এ রাজনৈতিক দায়িত্ব সিইসির ওপর না চাপাতেও অনুরোধ জানান। রাজনৈতিক দলগুলোকে উদ্দেশ করে কাজী হাবিবুল আউয়াল আরও বলেন, ‘আপনারা কেন এটা নিয়ে কথা বলছেন না, আমাদের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছেন। সিস্টেমটা আপনারা ইম্প্রুভ করতে পারলে তো আমাদের কাজই করা লাগে না। এটা নিয়ে দল হিসেবে আপনারা কেন কথা বলেন না। পদ্ধতি পরিবর্তন করে রাজনৈতিক সুস্থতা ফিরিয়ে আনা গেলে সেটা রাজনৈতিক নেতৃত্বের বড় অর্জন হবে। চলমান পদ্ধতিগত পরিবর্তন আনতে পারলে শুধু আমরা নই, ভবিষ্যৎ ইসিকেও পরিশ্রম করতে হবে না।

দুই-তিন দিনে ভোট চায় তরিকত ফেডারেশন : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৫০ আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ব্যবহার চায় বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন (বিটিএফ)। এ ছাড়া দুই-তিন দিনে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান ও ফলাফল একসঙ্গে ঘোষণা করা হলে ব্যালট পেপার বা ইভিএম পাহারার দায়িত্ব সেনাবাহিনীকে দেওয়াসহ ১১টি প্রস্তাব দিয়েছে দলটি। ইসির সংলাপে বিটিএফ চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারির নেতৃত্বে ১১ সদস্যের প্রতিনিধি দল অংশ নেয়। দলের মহাসচিব ড. সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী লিখিত আকারে প্রস্তাবগুলো উত্থাপন করেন। লিখিত প্রস্তাবে বলা হয়- একদিনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়োগব্যবস্থার ব্যাঘাত ঘটে তাই আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন দুই বা তিন ধাপে অনুষ্ঠিত করা যেতে পারে। এ ছাড়া রাজনৈতিক দলগুলো ইভিএম ব্যবহারের ক্ষেত্রে একমত নয়, তাই শুধু আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫০ আসনে ইভিএম ব্যবহারের কথা বলে দলটি।

তবে গতকালের সংলাপে একাধিকবার মাইক বন্ধ রাখা হয়। এক সময়ে প্রায় ১০ মিনিট মাইক বন্ধ থাকে। এরপর আবার মিনিটখানেক মাইক বন্ধ থাকে। চলমান রাজনৈতিক সংলাপের দশম দিনে এমন ঘটনা ঘটে।

সংলাপে বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান দুই বা তিন দিনে সংসদ নির্বাচন করার প্রস্তাব দিলে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর প্রশ্ন করেন- রেজাল্ট কোন দিন ঘোষণা হবে। ব্যালট পেপার বা ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) কই রাখা হবে? এসব প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে সৈয়দ নজিবুল বশর বলেন, নির্বাচন শেষে একসঙ্গে ফলাফল ঘোষণা করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে ব্যালট পেপার বা ইভিএম পাহারার দায়িত্ব সেনাবাহিনীকে দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর