রবিবার, ৩১ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

এক ইস্যুতেই আটকে আছে বিএনপি

ভোটে যাওয়া, আন্দোলন সবই নির্ভর করছে নির্বাচনকালীন সরকারের ওপর

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

এক ইস্যুতেই আটকে আছে বিএনপি

অনেক দাবির মধ্যে এখন একটি দাবিতে স্থির হয়ে রয়েছে বিএনপি। দাবিটি হলো নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার। দলটি বলছে, এই দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে না। এক দফার এই দাবিতে স্থির হওয়া দলটি সে জন্য নির্বাচন কমিশনের সংলাপেও অংশ নিচ্ছে না। এই দাবিকে কেন্দ্র করে বিএনপি এখন নানাভাবে নিজেদের ভিত শক্ত করার চেষ্টা করছে। একদিকে দেশের ভিতরে নানা ইস্যুতে রাজপথে থাকার চেষ্টা। অন্যদিকে বিদেশিদের সঙ্গেও যোগাযোগ বাড়িয়ে দেওয়া। বিএনপির নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, এক দফার দাবি আদায় হলেই চূড়ান্ত বিজয় অর্জন সম্ভব। বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ইতোমধ্যে ভোটারদের সমস্ত আস্থা-বিশ্বাস সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিয়েছে সরকার ও নির্বাচন কমিশন। তাই ক্ষমতাসীন দলের অধীনে আগামীতে কোনো নির্বাচনেই অংশ নেবে না বিএনপি।

জানা যায়, ২০১৯ সালের ১৬ জানুয়ারি বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দেয় বিএনপি। ঘোষণার পর থেকে স্থানীয় নির্বাচনসহ আর কোনো নির্বাচনে তারা অংশ নেয়নি। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে বলা হচ্ছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই নির্দলীয় সরকারের দাবি আদায় করেই ভোটে যাবে তারা। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে যারা নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন তাদের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। দলটির নীতিনির্ধারকরা বলছেন, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের টোপে পড়লে ফের ক্ষতিগ্রস্ত হবে বিএনপি। বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের উদাহরণ টেনে বলেন, দলীয় সরকারের অধীনে বাংলাদেশে কখনোই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। তারা বলছেন, নির্দলীয় সরকার ছাড়া অন্য কোনো আলোচনা নয়। এরই অংশ হিসেবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের অনুষ্ঠিত সংলাপে অংশ নেয়নি বিএনপি। শুরু থেকেই নির্বাচনকেন্দ্রিক সব ধরনের সংলাপ বর্জন করে আসছে বিএনপি। ইসি গঠন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের আনুষ্ঠানিক সংলাপ বর্জনের মধ্য দিয়ে এর শুরু। এর পর ইভিএম নিয়ে ইসির মতবিনিময়েও যায়নি বিএনপি। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, প্রথম কথা হচ্ছে, এই নির্বাচন কমিশনের বৈধতা নিয়েই প্রশ্ন আছে। দ্বিতীয়ত, সরকার ভোট চুরির প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য এই কমিশনকে দলীয় খেলোয়াড় হিসেবে নামিয়েছে। প্রথম এবং শেষ কথা এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে না। এ সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেওয়া আর নিজের পায়ে কুড়াল মারা একই কথা।

বিএনপির নীতিনির্ধারকরা বলছেন, সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক মহলের এক ধরনের চাপ রয়েছে। বিএনপি এই বিষয়টিকে তাদের জন্য ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। বিএনপির পক্ষ থেকে কূটনৈতিক যোগাযোগও বাড়ানো হয়েছে। এদিকে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে বিএনপি সরকারবিরোধী সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করে চলেছে। বিএনপির নীতিগত অবস্থান তারা আগামী সংসদ নির্বাচন নিয়ে সরকার বা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনায় যাবে না। আলোচনা হবে শুধু নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে। এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন নয় এটাই তাদের মূল দাবি। বিএনপি মনে করে, নির্বাচনকালে নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকার ছাড়া সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কোনো নির্বাচন কমিশনই করতে পারবে না। তা ছাড়া আগের কমিশনের মতো বর্তমান নির্বাচন কমিশনও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পরিকল্পনার বাইরে যেতে পারবে না।

বিএনপি মনে করে, নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়ে রাজনৈতিকভাবে সমাধানে না আসা পর্যন্ত ইসির সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে আলোচনায় কোনো সুফল আসবে না। একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য বর্তমান সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, এরপর নির্বাচনকালীন সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে। তারাই সবার মতামতের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠন করবে, সেই কমিশনের সঙ্গেই নির্বাচন নিয়ে সংলাপে বসবে বিএনপি। এই অবস্থান থেকেই বিএনপি ইসি গঠনে রাষ্ট্রপতির ডাকা সংলাপে অংশ নেয়নি। এটাকে ভিত্তি ধরেই বিএনপি রাজপথে সরকারবিরোধী একটি বৃহত্তর ঐক্য গড়ার চেষ্টা করছে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা বারবার বলছি, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীন ছাড়া কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না, অতীতেও হয়নি। বিএনপি সেরকম প্রহসনের নির্বাচনে যাবে না। কেবল নির্বাচনের আগে ক্ষমতা ছেড়ে, সংসদ ভেঙে দিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন দিলে তখনই বিএনপি অংশ নেবে।

সর্বশেষ খবর