রবিবার, ৩১ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা
ঢাকায় পরামর্শ সভা

মানব পাচারকারীরা এখন অনলাইনে সক্রিয়

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনা মহামারি ও বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সংকোচনের কারণে জীবিকা অর্জনে অসুবিধা মানব পাচারের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলেছে। আর প্রযুক্তির ব্যবহার সম্প্রসারণে পাচারকারীরা এখন অনলাইনে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তারা প্রযুক্তি ব্যবহার করে পরিচয় গোপন রেখে মানব পাচারের কার্যক্রম জোরদার করছে। এই অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অনলাইন এবং অফলাইন উভয় ক্ষেত্রেই সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়া অপরিহার্য। বিশ্ব মানব পাচার প্রতিরোধ দিবস-২০২২ উপলক্ষে গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ইউএন নেটওয়ার্ক অন মাইগ্রেশন-এর ‘কাউন্টার ট্রাফিকিং ইন পার্সনস টেকনিক্যাল ওয়ার্কিং গ্রুপ’ আয়োজিত  এক জাতীয় পরামর্শ সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। এবারের বিশ্ব মানব পাচার প্রতিরোধ দিবসের প্রতিপাদ্য ‘প্রযুক্তির ব্যবহার এবং অপব্যবহার’। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সরকার, আন্তর্জাতিক অংশীদার, বেসরকারি খাত, সুশীল সমাজ এবং গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, মানুষ পাচার একটি গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং এ বিষয়ে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি রয়েছে। আমরা এই ভয়াবহ অপরাধের বিরুদ্ধে সক্রিয়ভাবে পদক্ষেপ নিচ্ছি। পাচারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সব পক্ষের সম্পৃক্ততা প্রয়োজন। মানব পাচার প্রতিরোধে অনলাইনে সচেতনতা বৃদ্ধিতে সরকার কাজ চালিয়ে যাবে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেন, মানব পাচার একটি আন্তঃসীমান্ত বা আন্তঃরাষ্ট্রীয় অপরাধ। পাচারকারীরা একটি নির্দিষ্ট দেশে প্রযুক্তির ব্যবহারে ভালো হতে পারে এবং তাদের কাছে উন্নত প্রযুক্তি থাকতে পারে। আমরা জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সনদ ও উদ্যোগের মাধ্যমে মানব পাচার প্রতিরোধে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। তিনি বলেন, প্রযুক্তির মাধ্যমে মানব পাচারকারীরা আরও বেশি ক্ষতি করে। তবে সরকারি সংস্থা এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে পাচারকারীর প্রচেষ্টাকেও প্রতিহত করতে পারে। অনুষ্ঠানে অন্যান্য বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ মানব পাচারের ক্ষেত্রে উৎস, ট্রানজিট এবং গন্তব্য দেশ। যদিও মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের ট্রাফিকিং ইন পারসনস প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ মানব পাচার দমন ও প্রতিরোধে অনেক ভালো উদ্যোগ নিয়েছে। প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে প্রায় ১০ লাখ মানুষ বিদেশ যান। যাদের মধ্যে অনেকেই পাচারকারীদের লক্ষ্যবস্তু হন। কোনো কোনো অভিবাসী ঋণ, জোরপূর্বক শ্রম, যৌন শোষণ, জোরপূর্বক বিয়ে এবং আধুনিক দাসত্বের শিকার হন। বর্তমানে পাচারকারীরা পরিচয় গোপন রেখে দ্রুতগতিতে এবং অল্প খরচে যোগাযোগ করতেও প্রযুক্তিকে কাজে লাগাচ্ছে। তবে পাচার মোকাবিলায়ও উন্নত প্রযুক্তি বড় হাতিয়ার হতে পারে।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আখতার হোসেন, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আহমেদ মুনিরুস সালেহীন, বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস, আইওএম বাংলাদেশ-এর মিশন প্রধান এবং বাংলাদেশ ইউএন নেটওয়ার্ক অন মাইগ্রেশনের সমন্বয়কারী আবদুসাত্তর এসয়েভ, বাংলাদেশে ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসন, বাংলাদেশে সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত নাথালি চুয়ার্ড, ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দলের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স জেরেমি ওপ্রিটেসকো এবং বাংলাদেশে মার্কিন দূতাবাসের ভারপ্রাপ্ত ডেপুটি চিফ অব মিশন স্কট ব্র্যান্ডন প্রমুখ।

 

 

সর্বশেষ খবর