রবিবার, ৩১ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

হাসপাতালে লড়ছে তিন পরীক্ষার্থী

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় শুয়ে আছেন এসএসসি পরীক্ষার্থী তাসফির হাসান। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে তার। অবশ হাত-পা। তার শয্যার পাশেই আছেন মমতাময়ী মা মনোয়ারা বেগম। কখনো ছেলের মাথায় হাত বুলাচ্ছেন, কখনো কপাল মুছে দিচ্ছেন, কখনো হাত তুলে সন্তানের সুস্থতার জন্য দোয়া করছেন। কেঁদে কেঁদে বলছেন, ‘আল্লাহ আমার ছেলেকে সুস্থ করে দাও। বাপমরা দুটি ছেলেকে অনেক কষ্টে মানুষ করেছি। তাই পরীক্ষা নয়, আমার ছেলেকে চাই।’   গতকাল দুপুরে হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে। আহতদের মধ্যে তিনজন আছেন এসএসসি পরীক্ষার্থী। তাসফির হাসান, আয়াত হোসেন ও মো. সৈকত। সেপ্টেম্বরে তাদের এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা। কিন্তু দুর্ঘটনায় পরীক্ষার্থী সৈকতের ডান পা ও উরু ভেঙে গেছে। অপর পরীক্ষার্থী আয়াত হোসেনেরও ডান হাত ও কলার বোন ভেঙে গেছে। তবে তার ব্রেন ভালো আছে। ফলে এখন শঙ্কা দেখা দিয়েছে তারা এসএসসি পরীক্ষা দিতে পারবে কি না। আহতদের স্বজনরা এখন হাসপাতালের শয্যায় কেবল প্রহর গুনছেন, কখন তারা সুস্থ হবে।   

চট্টগ্রামের মিরসরাই খৈয়াছড়া এলাকায় ট্রেন-মাইক্রোবাস দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয় তাসফির। সেপ্টেম্বরে তার এসএসসি পরীক্ষা। কিন্তু গত শুক্রবার বিকাল থেকেই তার স্থান হয় হাসপাতালের শয্যায়। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। চিকিৎসকের পরামর্শে গতকাল বিকালেই তাকে হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগ থেকে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) নিয়ে যাওয়া হয়।

মিরসরাই ট্রেন দুর্ঘটনায় আহত হন সাতজন। আহতদের মধ্যে ছয়জনকে হাসপাতালের নিউরোসার্জারি ওয়ার্ড ও একজনকে সার্জারি ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে ছয়জন শঙ্কামুক্ত এবং একজন আশঙ্কাজনক। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহতদের মধ্যে কারও ভেঙে গেছে হাত, কারও ভেঙেছে পা, কারও শরীরে হয়েছে ক্ষত। বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি আছেন গাড়ির সহকারী তৌকিদ ইবনে শাওন (২০), মো. মাহিম (১৮), মো. সৈকত (১৮), তানভীর হাসান হৃদয় (১৮), মো. ইমন (১৯) ও আয়াতুল ইসলাম (২০)। সবার বাড়ি চট্টগ্রামের হাটহাজারীর আমানবাজারের খন্দকিয়া এলাকায়। হাসপাতালের নিউরোসার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি আছেন আহত আয়াত হোসেন। আহত আয়াতের মা রাশেদা বেগম বলেন, আয়াতের ডান হাত ও কলার বোন ভেঙেছে। ব্রেন ভালো আছে। চিকিৎসকরা বললেন, অনেক দিন চিকিৎসা নিতে হবে। ছেলে সুস্থ হলেই হবে। আর কিছুই লাগবে না।  হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. এস এম নোমান খালেদ চৌধুরী বলেন, আহতদের মধ্যে তাসফিরের অবস্থা একটু আশঙ্কাজনক। তাকে আইসিইউতে ভর্তি করানো হয়েছে। অন্যরা তুলনামূলক ভালো আছে। তাদের হাড় ভাঙাসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসা চলছে। তবে তাদের দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা নিতে হবে। প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার সকালে হাটহাজারী উপজেলার খন্দকিয়া গ্রামের আরএনজে কোচিং সেন্টার থেকে মিরসরাই খৈয়াছড়া ঝরনায় বেড়াতে যান ১৮ জনের একটি দল। ফেরার পথে খৈয়াছড়া এলাকায় ট্রেনের ধাক্কায় নিহত হন ১১ জন এবং আহত হন সাতজন। নিহতদের মধ্যে গাড়িচালক ছাড়া অন্যরা কোচিং সেন্টারের শিক্ষক ও শিক্ষার্থী। 

 

সর্বশেষ খবর