সোমবার, ১ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা
মিরসরাই ট্রেন দুর্ঘটনা

ছয় কারণ ধরে এগোচ্ছে তদন্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামের মিরসরাই খৈয়াছড়া এলাকায় ট্রেন দুর্ঘটনায় আহতদের বেশির ভাগই মাল্টিপল ফ্র্যাকচারে আক্রান্ত। একই সঙ্গে তারা পলিট্রমায় (শরীরে একাধিক আঘাত) ভুগছেন। ফলে ভর্তিকৃতদের দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে।

গতকাল দুপুরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগে চিকিৎসাধীন রোগীর বিষয়ে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে। তারা জানান, ট্রেন দুর্ঘটনায় মোট সাতজন মারাত্মকভাবে আহত হন। এর মধ্যে চমেক হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগে পাঁচজন, সার্জারি ও আইসিইউতে একজন করে দুজন ভর্তি আছেন। আইসিইউতে ভর্তি থাকা রোগীর অবস্থা এখনো সংকটাপন্ন। তাছাড়া, নিউরো সার্জারি বিভাগে ভর্তি থাকাদের মধ্যে সবার অবস্থা অপরিবর্তিত। তবে একজনের অবস্থা আগের চেয়ে ভালো হয়েছে। নিউরো সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মাজেদ সুলতান বলেন, ‘মিরসরাই ট্রেন দুর্ঘটনায় আহত হয়ে ভর্তিকৃতদের অবস্থা এখনো বিপদমুক্ত বলা যাচ্ছে না। সবাই কমবেশি পলিট্রমা (শরীরের একাধিক জায়গায় আঘাত) এবং মাল্টিপল ফ্র্যাকচার (শরীরের হাড়ে আঘাত) হয়েছে। তাছাড়া আহতদের কারও মাথায় আঘাত, কারও রগে আঘাত, কারও হাতে আঘাত হয়েছে। তাদের সবারই দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা দরকার হবে। এরই মধ্যে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তাদের চিকিৎসায় সর্বোচ্চ চেষ্টা চালানো হচ্ছে। আশা করি চিকিৎসার মাধ্যমে তারা সুস্থ হয়ে উঠবেন।’ মিরসরাই খৈয়ারছড়া এলাকায় ট্রেন-মাইক্রোবাস দুর্ঘটনায় মারাত্মকভাবে আহত তাসফির হাসান এখন হাসপাতালের আইসিইউতে। তাছাড়া নিউরো সার্জারি ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন আছেন মাইক্রোবাসের সহকারী তৌকিদ ইবনে শাওন (২০), মো. মাহিম (১৮), মো. সৈকত (১৮), তানভীর হাসান হৃদয় (১৮), মো. ইমন (১৯) ও আয়াতুল ইসলাম (২০)। এর মধ্যে কারও ভেঙে গেছে হাত, কারও ভেঙেছে পা, কারও শরীরে হয়েছে ক্ষত। সবার বাড়ি চট্টগ্রামের হাটহাজারীর আমান বাজারের খন্দকিয়া এলাকায়।

তদন্ত এগোচ্ছে ছয় কারণ চিহ্নিত করে : সিগন্যাল অমান্য, গেটম্যান ছিল কি না, ট্রেন চালকের দায়িত্ব অবহেলা কি না ইত্যাদি মিলিয়ে ছয়টি কারণকে চিহ্নিত করে কাজ শুরু করেছেন রেলওয়ের পৃথক তদন্ত কমিটির সদস্যরা। সঠিক তথ্য বের করতে দায়িত্বশীল কর্মচারীসহ সংশ্লিষ্টদের মোবাইল ট্রেকিং এবং ঘটনাস্থলে ছিল কি না তাও সরেজমিন দেখা হচ্ছে। গতকাল রেলওয়ের উচ্চ ও বিভাগীয় পৃথক তদন্ত কমিটির সদস্যরা তদন্তের কাজ শুরু করেছেন। এরই মধ্যে কমিটির কয়েকজন ঘটনাস্থলেও গেছেন। তারা স্থানীয় সাধারণ মানুষ ও রেল কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। ঘটনাস্থলেও উপস্থিত হয়েছেন তদন্ত কমিটির সদস্যরা। চট্টগ্রাম বিভাগীয় তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা (ডিটিও) আনছার আলী বলেন, কয়েকদিনের মধ্যেই তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার চেষ্টা করা হবে। অন্যদিকে উচ্চপযার্য়ের তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক এডিশনাল চিফ ইঞ্জিনিয়ার (ট্র্যাক) আরমান হোসেন বিষয়টি ‘গুরুত্বসহকারে দেখছেন’ জানিয়ে প্রতিবেদন দাখিলে আরও কয়েকদিন সময় লাগবে বলে জানান। উল্লেখ্য, চট্টগ্রামে ট্রেন ও মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনায় ১১ জন পর্যটক নিহতের ঘটনায় উচ্চতর ও বিভাগীয় পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে চট্টগ্রাম বিভাগীয় তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা (ডিটিও) মো. আনছার আলীকে।

কমিটির সদস্যরা হলেন বিভাগীয় নির্বাহী প্রকৌশলী-১ আবদুল হামিদ, বিভাগীয় মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার (লোকো) জাহিদ হাসান, রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর (আরএনবি) কমান্ড্যান্ট রেজানুর রহমান এবং বিভাগীয় মেডিকেল অফিসার (ডিএমও) মো. আনোয়ার হোসেন। অপর উচ্চপর্যায়ের কমিটির আহ্বায়ক হলেন পূর্বাঞ্চলের এডিশনাল চিফ ইঞ্জিনিয়ার (ট্র্যাক) আরমান হোসেন। অন্যরা হলেন এডিশনাল সিওপিএস জাকির হোসেন, এডিশনাল সিএসটি মো. তুষার।

সর্বশেষ খবর