শিরোনাম
মঙ্গলবার, ২ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা

বিএনপি দিনের বেলায় প্রকাশ্যে সিল মারত : শেখ হাসিনা

তারা হাতে হারিকেন নিয়ে আন্দোলন করছে। তাদের হাতে হারিকেনই ধরিয়ে দিতে হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপি দিনের বেলায় প্রকাশ্যে সিল মারত : শেখ হাসিনা

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, উন্নত দেশগুলো যখন হিমশিম খায়, তখন আমরা সাশ্রয়ী হচ্ছি। বিএনপি নেতারা হাতে হারিকেন নিয়ে আন্দোলন করছে। তাদের হাতে হারিকেনই ধরিয়ে দিতে হবে।  তিনি বলেন, বিএনপি সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতায় এসেছে। আর ক্ষমতায় থাকাকালে দলটির কর্মীরা দিনের বেলায় প্রকাশ্যে জোর করে সিল মারত। ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস স্মরণে গতকাল কৃষক লীগ আয়োজিত রক্তদান কর্মসূচির উদ্বোধনকালে তিনি এসব কথা বলেন। ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে তিনি ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের কথা ছিল প্রত্যেক ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার, আমরা দিয়েছি। আজকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ে বিশে^র প্রত্যেকটি দেশই- আমেরিকা হোক, ইংল্যান্ড হোক বা আমাদের প্রতিবেশী ভারত হোক, সবাই নজর দিয়েছে। যখন উন্নত দেশগুলো হিমশিম খায় তখন আমরা আগাম ব্যবস্থা নিয়েছি যেন ভবিষ্যতে কোনো বিপদে না পড়ি। সাশ্রয়ী হয়েছি। আর সাশ্রয়ী হওয়ার অর্থ এই নয় যে এখান থেকে লুটপাট করে খেয়েছি। লুটপাট বিএনপিই করে গেছে। আমরা সেই লুটপাট বন্ধ করে উন্নতি করেছি। নইলে কীভাবে মাত্র ৩ বা সাড়ে ৩ হাজার মেগাওয়াট থেকে আজকে ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষমতা অর্জন করেছি।

শেখ হাসিনা করোনাভাইরাস এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বিশ্ব মন্দার খণ্ড চিত্র তুলে ধরে বলেন, কেবল বাংলাদেশ নয়, সমগ্র বিশে^ই এমনকি অনেক উন্নত দেশে অর্থনৈতিক মন্দা চলছে। আমেরিকার মতো জায়গায় যেখানে ১ শতাংশ মুদ্রাস্ফীতি ছিল সেটা ৯ দশমিক ১ শতাংশে উন্নীত হয়েছে, ইংল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডসে ৯ দশমিক ৪ শতাংশ, জার্মানিসহ ইউরোপের বহুদেশে ৮ দশমিক ৯ শতাংশ। সেখানে বাংলাদেশে আমরা ৭ দশমিক ৫ শতাংশে মুদ্রাস্ফীতি ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছি। সদ্য শেষ হওয়া জনশুমারির তথ্যের নির্ভুলতা নিয়ে তোলা প্রশ্নেরও জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘জনসংখ্যা সাড়ে ১৬ কোটির ওপরে, সেটাও আবার কারও হিসাবে পছন্দ হচ্ছে না। তাদের জিজ্ঞেস করব, হিসাবটা পছন্দ হয় না কেন? তাহলে নিজেরাই সন্তান জন্মাতে থাকুক বা জনসংখ্যা বাড়াতে থাকুক। যাদের পছন্দ না, তারা সেটা করুক আমরা খাবার দেব, কোনো আপত্তি নেই। আমরা চাই প্রত্যেকটা পরিবার যেন সুখী পরিবার হয়, সুন্দরভাবে বাঁচতে পারে।  তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু এ দেশের দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছিলেন, ভাগ্য পরিবর্তন করতে চেয়েছিলেন; যাতে এ দেশে ক্ষুধা দারিদ্র্য না থাকে, বাংলাদেশ যাতে ভিক্ষুকের দেশ হিসেবে পরিচিত না হয়। কিন্তু ঘাতক খুনি চক্র বঙ্গবন্ধুকে এ দেশের মানুষের কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে তাদের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছিল। দেশকে সন্ত্রাসের জনপদে পরিণত করেছিল। দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন আর জঙ্গিবাদের আখড়া বানিয়েছিল। লুটপাট আর অর্থ পাচার করেছিল। সংবিধান লঙ্ঘন করেছিল। বঙ্গবন্ধুর রক্ত নিয়ে এ দেশের মানুষের নয়, শুধু খুনিদের লাভ হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা ছিল জাতির জন্য সবচেয়ে কলঙ্কিত ঘটনা। মানুষের ভালোবাসার টানে নিজের পুরো জীবন উৎসর্গ করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। অথচ তাকেই সপরিবারে হত্যা করা হলো। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে মানুষের জন্য কাজ করেছেন। তার জীবনে ক্ষমতার কোনো লোভ ছিল না। তিনি দেশের মানুষের জন্য আত্মত্যাগের নজির রেখে গেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, শত কষ্টের পরও বঙ্গবন্ধু কোথাও অন্যায়ের কাছে মাথানত করেননি। পূর্ব বাংলার মানুষের কষ্ট তিনি সহ্য করতে পারেননি। ক্ষমতা, পদ-পদবির লোভের ঊর্ধ্বে থেকে তিনি মানুষের জন্য কাজ করে গেছেন।

বিএনপি দিনের বেলায় সিল মারত, রাতে দেওয়া লাগবে কেন : গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণের আগের রাতে ভোট হয়ে যাওয়ার বিএনপির অভিযোগের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, তাদের রাতে ভোট দেওয়া লাগবে কেন, তারা দিনের বেলায় প্রকাশ্যে জোর করে সিল মারত। বিএনপির ভোট বর্জনের হুমকির জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, তাদের ক্ষমতায় আসা তো নির্বাচনের পথ ধরে নয়। অবৈধভাবে এবং সংবিধান লঙ্ঘন করে। আর বিভিন্ন নির্বাচনে দলটির নেতা-কর্মীরা দিনের বেলায় প্রকাশ্যে জোর করে সিল মারত। বিএনপি আমলে মানুষের ভোট দেওয়ার অধিকার ছিল না। প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন রেখে বলেন, ২০০১ সালের ১ অক্টোবরের নির্বাচনে কী কোনো মানুষ ভোট দিতে যেতে পেরেছে? এরা (বিএনপি) তো প্রকাশ্যে সিল মারত। এটা রাতের ভোট না, এক একটা বাসে করে যাবে, বিএনপি সন্ত্রাসীরা এক একটা বুথে ঢুকবে, সিল মারবে বাক্স ভরবে চলে আসবে। সেটা না পারলে সোজা ঘোষণা। এসব প্রক্রিয়ায় মাগুরা নির্বাচন, মিরপুরে নির্বাচন। ঢাকা-১০ এ ফালু যখন নির্বাচন করে- এগুলো তো মানুষের চোখে দেখা। তখন মানুষ তো ভোট দিতে পারেনি। ভোট দেওয়ার অধিকারী ছিল না বিএনপি আমলে। তাদের কাছে নির্বাচন নিয়ে কথা শুনতে হয়। তারা কথা বলে কোন মুখে? বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ক্ষমতায় আসার প্রসঙ্গ তুলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘নির্বাচনের ভিত্তিতে তাদের ক্ষমতায় আসা না, ক্ষমতায় আসা অবৈধভাবে অথবা দেশ বিক্রির মুচলেকা দিয়ে। আওয়ামী লীগ প্রধান বলেন, সামরিক শাসক অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে যে দল গঠন করেছিল ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে, তাদের কাছে এখন নানা রকম নীতির কথা শুনতে হয়। যারা এই বাংলাদেশটাকে বানিয়েছিল অস্ত্র চোরাকারবারির একটা জায়গা। সন্ত্রাসীর দেশ, জঙ্গিবাদের দেশ, বাংলা ভাই সৃষ্টির দেশ। তারাই এখন নীতির কথা বলে।

কৃষক লীগের সভাপতি সমীর চন্দ চন্দের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতির সঞ্চালনায় শোক দিবসের আলোচনা ও রক্তদান কর্মসূচিতে আরও বক্তব্য রাখেন, বেগম মতিয়া চৌধুরী, ড. আবদুর রাজ্জাক, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, আফজাল হোসেন, ফরিদুন্নাহার লাইলী প্রমুখ।

সর্বশেষ খবর