বুধবার, ৩ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা

শত প্রতিকূলতার মধ্যেও অব্যাহত রাখতে হবে উন্নয়ন : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

শত প্রতিকূলতার মধ্যেও অব্যাহত রাখতে হবে উন্নয়ন : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অনেক প্রতিকূলতা পেরিয়ে বাংলাদেশ আজ যে অবস্থানে পৌঁছেছে সে উন্নয়নের ধারাটা যেন অব্যাহত থাকে। গতকাল সকালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) নিয়মিত সভায় সূচনা বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর শেরেবাংলানগরের পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রের এ বৈঠকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘চিরদিন আমিও থাকব না, কিন্তু বাংলাদেশের এ উন্নয়নের অগ্রযাত্রা যেন ব্যাহত না হয় এটাই আমি চাই। আমরা যেন এগিয়ে যেতে থাকি এবং যে আদর্শ নিয়ে বাংলাদেশ গড়ে উঠেছিল সে আদর্শ যেন বাস্তবায়ন করতে পারি।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ দেশের প্রতিটি গৃহহীনকে ঘর করে দেওয়া, খাদ্য নিরাপত্তা প্রদান, চিকিৎসাসেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া, শিক্ষার ব্যবস্থা করা- সব ক্ষেত্রেই আজকে তাঁর সরকার সাফল্য অর্জন করেছে। তবে, আরও সামনে এগিয়ে যাওয়ার আকাক্সক্ষাও ব্যক্ত করেন তিনি।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ জাতির পিতার হাতে গড়া সংগঠন। তাঁর আদর্শের সংগঠন। তাই আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে জনগণের ভাগ্যোন্নয়নেই কাজ করেছে। আজকে যতটুকু অর্জন আমি মনে করি তা জনগণের অবদান। বাংলাদেশকে একটি অবস্থানে নিয়ে আসতে পারার জন্য তাঁর সহকর্মীদের ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, যেভাবে আমরা উন্নয়নের পরিকল্পনা নিয়েছি সেভাবে বাস্তবায়ন করতে পেরেছি বলেই উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। এটা আমাদের একটা বিরাট অর্জন। আরও সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।

তিনি বলেন, একটানা (তিনবার) জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় থাকতে পারায় আমরা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে পেরেছি এবং আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। কাজেই আমাদের ওপর জনগণের যেমন আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে তেমনি আমারও জনগণের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ যেন কারও মুখাপেক্ষী না থেকে আত্মমর্যাদাশীলভাবে গড়ে ওঠে সেটাই ছিল জাতির পিতার চিন্তা এবং দেশকে তিনি স্বল্পোন্নত দেশের পর্যায়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হন। বঙ্গবন্ধু এ দেশের যে মাটি ও মানুষ আছে তা দিয়েই বাংলাদেশ গড়তে চেয়েছিলেন। এ জন্য তাঁর যেমন আত্মবিশ্বাস ছিল তেমনি মাটি ও মানুষের প্রতি ছিল গভীর ভালোবাসা। কারণ, তাঁর ডাকে সাড়া দিয়েই বাংলাদেশের জনগণ মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং তাঁর নির্দেশে যার যেটুকু সামর্থ্য ছিল তাই নিয়ে বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। কিন্তু যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশকে গড়ে তুলে জাতির পিতা যখন বাংলাদেশকে উন্নয়নের পথে নিয়ে যাচ্ছিলেন তখনই আঘাত এলো, তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করা হলো। শুধু তাই নয়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, আদর্শ এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করা হলো। বাংলাদেশে আবার মেনে এলো স্থবিরতা, বলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’৭৫-এর পর অবৈধভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতা দখল এ দেশের মানুষের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন করেনি। তবে, ক্ষমতাসীনদের ভাগ্যের পরিবর্তন করেছে।

তিনি বলেন, মানুষের তখন গণতান্ত্রিক অধিকার বা ভোটের অধিকার কিছুই ছিল না, প্রতি রাতে কারফিউ থাকত। ক্ষমতা ক্যান্টনমেন্টে বন্দি ছিল। আমরাই আন্দোলন-সংগ্রাম করে জনগণের ক্ষমতা আবার জনগণের হাতে ফিরিয়ে দিই।

আপনজন হারানোর ব্যথা বুকে ধারণ করে কেবল বাবার যে স্বপ্ন, এ দেশের দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নেই তাঁর পথচলা বলেও তিনি জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনজন হারানোর যে ব্যথা, বেদনা, কষ্ট তা সহ্য করা যায় না। কিন্তু আমি দেখেছি ছোটবেলা থেকে এ দেশের মানুষকে ভালোবাসতে এবং মানুষের জন্য কিছু একটা করার তাগিদ অনুভব করতেন তিনি। তাছাড়া তাঁর সঙ্গে যেটুকু কথা বলার সুযোগ পেতাম, এই একই গল্প হতো কীভাবে এ দেশের মানুষের উন্নতিটা হবে। কাজেই আমারও সেই প্রচেষ্টা। জাতির পিতার খুনিদের বিচার বন্ধে ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারির প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, আমরা যাঁরা ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট আপনজন হারিয়েছি তাদের কোনো বিচার চাওয়ার অধিকার পর্যন্ত ছিল না। মামলা করার বা বিচার চাওয়ার সে অধিকারটুকুও কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। আমাদের প্রতি যে অবিচারটা হয়েছিল, যেভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছিল জানি না তা আর কেউ স্মরণ করে কি না। ’৯৬ সালে আওয়ামী সরকারে এসে সেই ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স বাতিলের পরই কেবল মামলার সুযোগ পাই বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, অনেক প্রতিবন্ধকতা ছিল, খুনিদের পুরস্কৃত করে রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করা, কূটনৈতিক মিশনে চাকরি দিয়ে তাদের উৎসাহিত করা, কী না করা হয়েছে। কত অন্যায় কাজ এ দেশে হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, হত্যা হলে যে কেউ বিচার চাইতে পারে কিন্তু আমাদের তো সে অধিকারই ছিল না বরং আমার চোখের সামনে দেখেছি জনগণের ভোট চুরি করে সেই খুনিদের খালেদা জিয়া পার্লামেন্টে বসিয়েছে। জিয়াউর রহমান তাদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেছে। এরশাদ তাদের রাজনৈতিক দল করে রাষ্ট্রপতি প্রার্থী হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। তিনি বলেন, এরকম অন্যায়-অবিচার আমরা চোখের সামনে দেখে সবকিছু সহ্য করে, ধৈর্য ধরে, জনগণের ওপর আস্থা ও বিশ্বাস রেখেছি। কারণ আমার একটাই সম্পদ ছিল জনগণের বিশ্বাস ও আস্থা এবং সেটাকে মূলধন করেই আমি এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। আর আজকে জনগণের সহযোগিতায় যতটুকু এগোতে পেরেছি তা দেখে আমার বাবার আত্মা নিশ্চয়ই শান্তি পাবে।

সর্বশেষ খবর