বুধবার, ৩ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা

নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া ভোটে যাব না হতেও দেব না

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া ভোটে যাব না হতেও দেব না

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে না বিএনপি। নিরপেক্ষ সরকার আদায় করেই জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে। নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া আগামীতে কোনো নির্বাচন হতেও দেওয়া হবে না।

গত সোমবার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন। সাক্ষাৎকারে তিনি দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি, আগামীর নির্বাচন, বিএনপির ভবিষ্যৎ করণীয়সহ নানা বিষয়ে খোলামেলা কথা বলেন।

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগে এখন আর রাজনৈতিক চর্চা নেই। ক্ষমতা নামক প্রকল্প নিয়ে দলটি ব্যস্ত। তিনি বলেন, বাকস্বাধীনতা, গণতন্ত্র, ভোটাধিকার, আইনের শাসন সবই আজ ভূলুণ্ঠিত। আওয়ামী লীগ সরকার দেশটাকে গর্তে ফেলে দিয়েছে। যে উদ্দেশ্য নিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল তা ধ্বংস করে দিয়েছে। তিনি বলেন, উন্নয়নের নামে দুর্নীতি হচ্ছে। দুর্নীতির টাকা দেশের বাইরে পাচার হচ্ছে। গার্মেন্ট শিল্প, বিদেশে শ্রমবাজার, মৎস্য চাষ, যুব প্রশিক্ষণ সবই বিএনপির অবদান। আমীর খসরু বলেন, বিচারবিভাগ, সংসদ, প্রশাসন সব আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। নির্বাহী কিছু ছাড়া সবাই আজ রাবার স্ট্যাম্পে পরিণত হয়েছে। সব সিদ্ধান্ত এক জায়গা থেকে আসছে। দেশের জনগণ দরিদ্র হচ্ছে। জনগণের ক্রয় ক্ষমতা নেই। তার প্রতিবাদ করারও ক্ষমতা নেই। নিরপেক্ষ সরকার কীভাবে আদায় করবেন জানতে চাইলে আমীর খসরু বলেন, নিরপেক্ষ সরকার প্রথম এসেছে এরশাদের পতনের পর। তখন সবার সম্মতিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার। প্রথম নিরপেক্ষ নির্বাচনে বিএনপি জয়ী হয়েছিল। পরবর্তীতে আমরা ক্ষমতাসীন থাকা অবস্থায় আওয়ামী লীগসহ সব দল আন্দোলন করলে এই কেয়ারটেকার সরকার প্রথা সংবিধানে লিপিবদ্ধ করার জন্য সব দলের আহ্বানে সম্মিলিতভাবে তার পূর্ণাঙ্গ রূপ দিই। সেই আওয়ামী লীগই সব রাজনৈতিক দলকে বৃদ্ধাঙুলি দেখিয়ে এককভাবে এই প্রথা বাতিল করে দিয়েছে। তিনি বলেন, এই সরকারের আমলে যতগুলো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে তার কোনোটিতেই জনগণ নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার আজ শুধু বিএনপির নয়, গোটা জাতির দাবি। এই দাবিতে বিএনপি অটল। তিন বছরের কমিটি ছয় বছর পার করছে বিএনপি, কবে সম্মেলন হবে জানতে চাইলে আমীর খসরু বলেন, কিসের সম্মেলন। বিএনপির ৩৫ লাখ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা। ঘরে বসে সভা করলেও গোয়েন্দা সংস্থা হানা দেয়। বিদ্যুতের দাবিতে বিক্ষোভ করলে গুলি করে হত্যা করা হয়। এই মুহূর্তে আমাদের কাউন্সিল জরুরি বিষয় নয়, জরুরি বিষয় হচ্ছে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড প্রতিষ্ঠা করা। অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারের পতন ঘটিয়ে জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠা করা। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে চলমান সংলাপ প্রসঙ্গে আমীর খসরু বলেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসররা ছাড়া প্রায় সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গেই সংলাপ করছি। সংলাপ প্রায় শেষ পর্যায়ে। চলমান সংলাপ শেষ হলে আন্দোলনের রূপরেখা ঘোষণা করব। পাশাপাশি জাতীয় সরকারের রূপরেখাও ঘোষণা করা হবে। ইভিএম প্রসঙ্গে  আমীর খসরু বলেন, শুরু থেকেই ইভিএমের বিরোধিতা করেছি। এটি সূক্ষ্ম কারচুপির একটি মাধ্যম। নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে যে সব দল সংলাপে বসেছে আওয়ামী লীগ ছাড়া সবাই ইভিএম পদ্ধতির বিরোধিতা করেছে। দলের চেয়ারপারসন বন্দি, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশের বাইবে। কীভাবে দল চলছে জানতে চাইলে আমীর খসরু বলেন, বিএনপি আগের চেয়ে সুশৃঙ্খল ও ঐক্যবদ্ধ। নেতা-কর্মীরা জ্বলেপুড়ে খাঁটি সোনায় পরিণত হয়েছে। আমাদের ঘরে আগুন ধরাতে অনেক চেষ্টা করেও সফল হয়নি। বাণিজ্যমন্ত্রী থাকাকালীন স্মৃতিচারণা করে আমীর খসরু বলেন, তখন বাংলাদেশকে ইমার্জিং টাইগার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। ওই সময় ইপিজেড হয়েছে। সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ হয়েছে বিএনপি শাসনামলে। আজকে যে উন্নয়ন পরিলক্ষিত হচ্ছে যার ভিত বিএনপিই সৃষ্টি করেছে। ষড়যন্ত্র করে বিএনপিকে ক্ষমতা থেকে সরানো হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের সংলাপ বর্জন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই অবৈধ সরকারের অধীনে বিএনপি আর কোনো নির্বাচনে যাবে না, এটা পরিষ্কার। যে নিরপেক্ষ সরকার গঠিত হবে এবং তাদের তত্ত্বাবধানে যে নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে, সেই কমিশনের অধীনে নির্বাচনে যাবে বিএনপি। এ সরকার তাদের আজ্ঞাবহ লোক দিয়ে শুধু নির্বাচন কমিশনই গঠন করেনি, দলীয় লোকদের দিয়ে প্রশাসন সাজিয়েছে। নিরপেক্ষ সরকার গঠিত হলে এসব দলীয়করণ থাকবে না।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর