বৃহস্পতিবার, ৪ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা

জেনারেটরের ধোঁয়ায় সিলেটের প্রবাসী পরিবারে করুণ ট্র্যাজেডি!

হাসপাতাল ছেড়েছেন যুক্তরাজ্য প্রবাসীর স্ত্রী ও ছেলে, জ্ঞান ফেরেনি মেয়ের

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

জেনারেটরের ধোঁয়ায় সিলেটের প্রবাসী পরিবারে করুণ ট্র্যাজেডি!

সিলেটের ওসমানীনগরে যুক্তরাজ্য প্রবাসী পরিবারের করুণ ট্র্যাজেডির রহস্যের জট খুলতে শুরু করেছে। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন মৃত প্রবাসী রফিকুল ইসলামের স্ত্রী হোসনে আরা বেগম ও ছেলে সাদিকুল ইসলাম। তবে এখনো আশঙ্কাজনক অবস্থায় ওসমানী মেডিকেলের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তার মেয়ে সামিরা ইসলাম। গতকাল হোসনে আরা ও সাদিকুল ইসলাম ওসমানীনগর উপজেলার তাজপুর স্কুল রোডের ভাড়া করা বাসায় ফিরেছেন।

তাদের উপস্থিতিতে পুলিশও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। হোসনে আরা জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ না থাকলে বাসার ভিতর জেনারেটর চলত। জেনারেটর চালুর পর তার ছেলে মাইকুল ইসলামের শ্বাসকষ্ট হতো। বাসায় জেনারেটর চালু করে পুলিশও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছে। জেনারেটর চালুর পর সবাই অস্বস্তিকর পরিস্থিতি উপলব্ধি করেছেন বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন। পুলিশের ধারণা, ঘটনার রাতে দীর্ঘসময় জেনারেটর চালু থাকায় শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে না পেরে দমবন্ধ হয়ে যুক্তরাজ্য প্রবাসী রফিকুল ইসলাম ও তার ছেলে মাইকুল ইসলাম মারা গেছেন। অচেতন হয়ে পড়েন স্ত্রী ছেলে ও মেয়ে। জেনারেটরের ধোঁয়ায় কী ধরনের বিষক্রিয়া হতে পারে তা নিশ্চিতে ফায়ার সার্ভিসের কাছে আলামত পাঠানা হয়েছে। তবে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে পুলিশ মৃত পিতা-পুত্রের ময়নাতদন্ত ও ওই রাতে গ্রহণ করা খাবারের রাসায়নিক পরীক্ষার রিপোর্টের অপেক্ষায় রয়েছে। শারীরিক অবস্থার উন্নতি হওয়ায় গতকাল সকালে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয় হোসনে আরা বেগম ও তার ছেলে সাদিকুল ইসলামকে। হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়ে তারা ফিরেছেন তাজপুর স্কুল রোডের ভাড়া বাসায়। ওই বাসার একটি কক্ষে ভিতর থেকে অচেতন অবস্থায় যুক্তরাজ্য প্রবাসী পরিবারের পাঁচ সদস্যকে উদ্ধার করা হয়েছিল। ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে আসার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক রফিকুল ইসলাম ও তার ছেলে মাইকুল ইসলামকে মৃত ঘোষণা করেন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয় রফিকুল ইসলামের স্ত্রী হোসনে আরা বেগম, ছেলে সাদিকুল ইসলাম ও মেয়ে সামিরা ইসলামকে। গত ২৬ জুলাই ভর্তির পর থেকে গতকাল পর্যন্ত একবারের জন্যও সামিরার জ্ঞান ফেরেনি। এখনো সে হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন। ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. আবদুল গাফ্ফার জানান, শারীরিক অবস্থার উন্নতি হওয়ায় হোসনে আরা বেগম ও সাদিকুল ইসলামকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। আর সামিরার এখনো জ্ঞান ফেরেনি। তার শরীরের কিছু অঙ্গ কাজ করছে না। এখনো শঙ্কার মধ্যে রয়েছে মেয়েটি। এ ট্র্যাজেডির প্রকৃত কারণ জানতে মৃত পিতা-পুত্রের ময়নাতদন্ত ও ওই রাতে গ্রহণ করা খাবারের রাসায়নিক প্রতিবেদন আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বলে মন্তব্য করেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন। প্রসঙ্গত, গত ১২ জুলাই রফিকুল ইসলাম পরিবারের সদস্যদের নিয়ে যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফেরেন।

এরপর ঢাকায় এক সপ্তাহ থেকে গত ১৮ জুলাই তাজপুর স্কুল রোডের একটি ভাড়া বাসায় ওঠেন। ২৫ জুলাই সোমবার রাতের খাবার খেয়ে স্ত্রী, ছেলে ও মেয়েদের নিয়ে বাসার একটি কক্ষে রফিকুল এবং অপর দুটি কক্ষে শ্বশুর, শাশুড়ি, শ্যালক, শ্যালকের স্ত্রী ও শ্যালকের মেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। সকালে বাসার অন্যান্য কক্ষে থাকা আত্মীয়রা ডাকাডাকি করে রফিকুলদের কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে ‘৯৯৯’ নম্বরে ফোন দেন। পুলিশ এসে তাদের উদ্ধার করে।

একটি দল গিয়ে দরজা ভেঙে অচেতন অবস্থায় পাঁচ যুক্তরাজ্য প্রবাসীকে উদ্ধার করে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা রফিকুল ইসলাম ও মাইকুল ইসলামকে মৃত ঘোষণা করেন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় বাকি তিনজনকে হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগে ভর্তি করা হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর