বৃহস্পতিবার, ৪ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা
সীমান্তে সারি সারি সাঁজোয়া যান চীনের, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তীব্র উত্তেজনা

তাইওয়ান ঘিরে সামরিক মহড়া

প্রতিদিন ডেস্ক

তাইওয়ান ঘিরে সামরিক মহড়া

এশীয় অঞ্চলে তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়ে তাইওয়ান ত্যাগ করেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি। তাইওয়ান ঘিরে চীনের সর্বাত্মক সামরিক মহড়ার মুখে তিনি গতকাল বিকালে তাইপে বিমানবন্দর ছাড়েন। মঙ্গলবার স্থানীয় সময় রাত ১০টার দিকে মার্কিন বিমানে তাইপে বিমানবন্দরে অবতরণ করেছিলেন পেলোসি। সূত্র : বিবিসি, রয়টার্স, আলজাজিরা।

২৪ ঘণ্টারও কম সময় পর্যন্ত পেলোসির তাইওয়ান সফর নিয়ে গোটা অঞ্চলে যুদ্ধের উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। চীনের সামরিক বিমানগুলো এ সময় তাইওয়ানের আকাশে মহড়া দেয় এবং তাইওয়ান বরাবর চীন সীমান্তজুড়ে সারি সারি চীনা সাঁজোয়া যান অবস্থান নেয়। একই সঙ্গে তাইওয়ান ঘিরে চীনা যুদ্ধজাহাজসহ সামরিক বহরগুলো যুদ্ধের মহড়া শুরু করে। যদিও এ ব্যাপারে চীন আগে থেকেই সতর্ক করে আসছিল, পেলোসি ‘চীনা ভূখ ’ তাইওয়ান সফর করতে এলে তাইওয়ানে সামরিক অভিযান পরিচালনাসহ যুক্তরাষ্ট্রকে গুরুতর পরিণতি বরণ করতে হবে। কিন্তু পেলোসি চীনের হুঁশিয়ারি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তাইওয়ান সফরে আসেন এবং এর পরই অঞ্চলজুড়ে যুদ্ধের উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। কারণ পেলোসির সফরের পাশাপাশি চীন সাগরে মার্কিন যুদ্ধজাহাজগুলোও সমবেত হচ্ছিল।

প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, এক দিনেরও কম সময় সফর শেষে গতকাল বিকালে পেলোসি তাইওয়ানের রাজধানী তাইপের বিমানবন্দর ছাড়েন। এর আগে পেলোসি তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাৎ-পরবর্তী সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রতিনিধি দল তাইওয়ানে এসেছে দ্ব্যর্থহীনভাবে এটা স্পষ্ট করতে যে, তাইওয়ানের প্রতি আমাদের প্রতিশ্রুতি আমরা ত্যাগ করব না। আমিও এ প্রতিনিধি দলের একজন গর্বিত সদস্য। আমরা আমাদের স্থায়ী বন্ধুত্বের জন্য গর্বিত।’ তিনি আরও বলেন, ‘এখন আগের যে-কোনো সময়ের চেয়ে তাইওয়ানের প্রতি আমেরিকার সংহতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর আমরা আজ সেই বার্তাটিই এখানে নিয়ে এসেছি।’ উল্লেখ্য, চীন পেলোসির সফরের প্রতিবাদে দক্ষিণ চীন সাগরে সামরিক মহড়ার ঘোষণা ছাড়াও সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তু লক্ষ্য করে অভিযান চালানোর ঘোষণা দেয়। খবরে বলা হয়, স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাত ১০টা ৪৪ মিনিটে মার্কিন সামরিক বাহিনীর একটি বিমানে মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুর থেকে তাইপে পৌঁছান পেলোসি। এর ঠিক ১৬ মিনিট পর চীন সামরিক মহড়ার ঘোষণা দিয়ে তৎপরতা শুরু করে। এ ছাড়া পেলোসির সফরের প্রতিক্রিয়ায় চীন তাইওয়ান থেকে বিভিন্ন পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করে। তাইওয়ানের শতাধিক খাবারের ব্যবসার ওপর আরোপ করে নিষেধাজ্ঞা। তাইওয়ানের স্বাধীনতা সংগ্রামে যুক্ত দুটি প্রতিষ্ঠানকেও কালো তালিকাভুক্ত করেছে বেইজিং। এই সঙ্গে বেইজিংয়ে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিকোলাস বার্নসকে তলব করে কড়া বার্তা দেয় চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সংবাদ সূত্রগুলো জানিয়েছেন, তাইওয়ান সফরকালে পেলোসি তাইপের গ্র্যান্ড হায়াত হোটেলে ওঠেন। তাঁর সফরের বিরোধিতা করে হোটেলের বাইরে চীনপন্থি লোকজন বিক্ষোভ করতে থাকেন। পেলোসির সফর ঘিরে তাইওয়ানের পূর্বাঞ্চলের জলসীমায় প্রথম দিকে একটি যুদ্ধবিমানবাহী রণতরীসহ চারটি যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করে চীন। আকাশে চক্কর দেয় চীনা যুদ্ধবিমানগুলো। তবে গতকাল পেলোসি তাইওয়ান ত্যাগ করায় যুদ্ধের আশঙ্কা স্তিমিত হতে পারে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করলেও তাইওয়ান ঘিরে চীনের যুদ্ধজাহাজগুলো মহড়া অব্যাহত রাখে। পাশাপাশি মার্কিন যুদ্ধজাহারগুলোও সতর্কাবস্থায় অবস্থান করছিল। আরেক খবর অনুযায়ী, মঙ্গলবার রাতে পেলোসি তাইওয়ান পৌঁছনোর সঙ্গে সঙ্গেই তাইওয়ান সীমান্তের কাছে চীনা সামরিক বহর জমায়েত হতে থাকে। টুইটারে ‘ইযয়িন সুরা’ নামের একটি হ্যান্ডল থেকে পোস্ট করা ভিডিও ক্লিপে দেখা যায়, চীনের ফুজিয়ানের ব্যস্ত রাস্তায় সারি সারি ট্যাঙ্ক এগিয়ে যাচ্ছে। আরও একটি ভিডিওতে দেখা যায়, তাইওয়ান সীমান্তের কাছে চীনা সেনাবাহিনী জমায়েত হয়ে চলেছে। এদিকে চীনা হুমকির প্রতিক্রিয়ায় তাইওয়ানের পূর্ব সীমান্তে চারটি যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করেছে হোয়াইট হাউস। পেলোসির নিরাপত্তার অজুহাতে দক্ষিণ চীন সাগরের দ্বীপরাষ্ট্রে আমেরিকার যুদ্ধবিমানের বহরও ঢুকে পড়ে। এদিকে তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা অভিযোগ করেছেন, চীন সমুদ্র ও আকাশ পথে ‘স্বশাসিত’ এ দ্বীপরাষ্ট্রে আগ্রাসন চালানোর পাঁয়তারা করছে। তাইওয়ানের চারপাশে বেশ কয়েকটি বিশেষায়িত জোনে চীন ‘তাজা গুলির’ মহড়া চালাচ্ছে। এমনকি তাইওয়ানের সীমানার মধ্যে চীন সামরিক মহড়া চালিয়ে যাচ্ছে। ব্রিটিশ পত্রিকা গার্ডিয়ানের তথ্যানুসারে, তাইওয়ানের কর্মকর্তারা বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের আইন ভঙ্গ করার অভিযোগ এনেছেন। তাঁরা বলছেন, চীন যেভাবে তাইওয়ানের চারপাশে মহড়া চালানো শুরু করেছে, তাতে কার্যত তাইওয়ানের আকাশ ও সমুদ্র সীমা অবরুদ্ধ করে ফেলা হয়েছে। তাইওয়ান দাবি করেছে, এর জবাব দিতে তাইওয়ানের সামরিক প্রস্তুতিও সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। তবে তাইওয়ান যুদ্ধ চায় না। চীন-তাইওয়ান পরিস্থিতি নিয়ে এরই মধ্যে বিবৃতি দিয়েছে রাশিয়া, ইরান ও উত্তর কোরিয়া। তারা পেলোসির তাইওয়ান সফরকে ‘উসকানিমূলক এবং ভূখ গত অধিকারের লঙ্ঘন’ উল্লেখ করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি নিন্দা জানিয়েছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে বিবৃতি দিয়েছে এশিয়ার দেশ দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর