বৃহস্পতিবার, ৪ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা
চট্টগ্রামে দুদকের গণশুনানিতে সাধারণ মানুষ

সরকারি অফিসে দুর্নীতি ভোগান্তি অভিযোগের পাহাড়

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

বন্দর এলাকার মিজানুর রহমান নিজের অভিযোগ বর্ণনা করতে লাগলেন। তার বর্ণনা শুনে পুরো মিলনায়তনে পিনপতন নীরবতা নেমে আসে। মঞ্চে বসা শীর্ষ কর্মকর্তারাও অপলক চোখে থাকিয়ে থাকেন তার দিকে।     মিজান উচ্চকিত আওয়াজে কেঁদে কেঁদে পাশে বসা বৃদ্ধা মায়ের দিকে ইঙ্গিত  করে বললেন, ‘এই বৃদ্ধা মহিলার কী অপরাধ ছিল। আজ ৪০ বছর ধরে তিনি বন্দর ও জেলা প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। তিনি এখন মৃত্যুমুখে। অথচ যারা এই ক্ষতিপূরণের টাকা আত্মসাৎ করেছে, বন্দর কর্তৃপক্ষ তাদের জামাই আদরে ভূমি দিয়ে পুনর্বাসন করেছে। আমাকে মায়ের গর্ভে রেখে মারা যান আমার বাবা। জন্মের পর থেকেই আমার মা ক্ষতিপূরণের আশায় জেলা প্রশাসন ও বন্দর কর্তৃপক্ষের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরছে।’ অভিযোগের বর্ণনা প্রদানকালে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠেন তিনি। তখন মাকে জড়িয়ে ধরে মা-ছেলের কান্নায় পুরো হলের পরিবেশও ভারী হয়ে ওঠে। মিজানের মায়ের নাম নূর চেহের বেগম (৮৭)। স্বামীর মৃত্যুর পর ১৯৮০ সালে রেখে যাওয়া শেষ সম্বল ৩৬ শতক জমি অধিগ্রহণ করে বন্দর। নিজের বৈধ জমি হওয়া সত্ত্বেও জেলা প্রশাসনের ভুলে ক্ষতিপূরণের টাকা পায় অন্যরা। সেখানে বন্দর অন্যদের পুনর্বাসন করে বলেও অভিযোগ করেন মিজান। এরপর গত ৪০ বছর ধরেই নিজের ন্যায্য পাওনা বুঝে পেতে দিনের পর দিন ধরনা দেন সরকারি দুই দফতরে। এত বছর পরও এমন অভিযোগের নিষ্পত্তি না হওয়ায় হতবাক দুদক কমিশনারও। গতকাল সকালে চট্টগ্রামের সরকারি দফতরগুলো নিয়ে শুনানির আয়োজন করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। শুনানি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন দুদক কমিশনার (অনুসন্ধান) ড. মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক খান। শুনানিতে সরকারি ২২ সংস্থার বিষয়ে প্রায় ২০০ অভিযোগ জমা পড়ে। গতকাল ৪৭টি অভিযোগ নিষ্পত্তি করা হয়। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন দুদক মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) এ কে এম সোহেল। উপস্থিত ছিলেন বিভাগীয় কমিশনার মো. আশরাফ উদ্দিন, সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়, দুদক চট্টগ্রাম বিভাগীয়  কার্যালয়ের পরিচালক মো. মাহমুদ হাসান ও চট্টগ্রাম মহানগর দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি মনোয়ারা হাকিম আলী। অভিযোগ প্রসঙ্গে বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধি বলেন, বিষয়টি শুনেছি। খুবই মর্মান্তিক ঘটনা। অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণের বিষয়টি সম্পন্ন করে জেলা প্রশাসন। তাদের ক্ষতিপূরণের টাকা ভুয়া কাগজ দেখিয়ে অন্যরা আত্মসাৎ করেছে। এ নিয়ে ছয়জনের বিরুদ্ধে একটি মামলাও আছে, যা আদালতে বিচারাধীন। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান বলেন, দায়িত্ব গ্রহণের পর এ বৃদ্ধা আমার কাছে একাধিকবার এসেছিলেন। তাকে কিছু করার আশ্বাস দিয়েছি। মামলাটি বিচারাধীন হওয়ায় আমাদের কিছুই করার নেই। শুনানি অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি দুদক কমিশনার (অনুসন্ধান) ড. মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক খান বলেন, দুদকে দায়ের করা ৭০ শতাংশ মামলায় অপরাধীদের শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে।

দুদক শুধু চুনোপুঁটি নয়, অনেক ক্ষমতাবানদেরও গ্রেফতার করেছে। এক্ষেত্রে কোনো বাধা এলেও পিছপা হবে না দুদক।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর