শুক্রবার, ৫ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা

ভোলায় হরতাল দুপুরে প্রত্যাহার

তিন দিনের শোক কর্মসূচি বিএনপির

প্রতিদিন ডেস্ক

ভোলায় হরতাল দুপুরে প্রত্যাহার

ছাত্রদল নেতার জানাজা গতকাল অনুষ্ঠিত হয় নয়াপল্টনে -বাংলাদেশ প্রতিদিন

ভোলায় গুলিবিদ্ধ হয়ে জেলা ছাত্রদল সভাপতি নুরে আলম ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মী আবদুুর রহিম নিহত হওয়ার প্রতিবাদে বিএনপির ডাকা সকাল-সন্ধ্যার হরতাল গতকাল দুপুর ১২টায় প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। এদিকে রহিম হত্যার ঘটনায় তার স্ত্রী ওসিসহ ৩৬ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। দুই নেতা হত্যার প্রতিবাদে এদিন বিভিন্নস্থানে বিক্ষোভ-সমাবেশও করা হয়। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

ভোলা : এক সংবাদ সম্মেলনে ভোলা জেলা বিএনপি সভাপতি আলহাজ গোলাম নবী আলমগীর আনুষ্ঠানিকভাবে গতকালের সকাল-সন্ধ্যা হরতাল প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, জনগণের কষ্ট এবং জানমালের কথা বিবেচনা করে দিনব্যাপী ডাকা হরতাল অর্ধদিবস পালনের পর প্রত্যাহার করা হয়। এদিকে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির সংঘর্ষের সময় স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মী আবদুুর রহিম নিহত হওয়ার ঘটনায় ভোলা থানার ওসি (তদন্ত) আরমান হোসেনসহ ৩৬ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেছেন নিহত রহিমের স্ত্রী খাদিজা বেগম। মামলা সম্পর্কে ভোলা জেলা আইনজীবী সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. ইউসুফ জানান, গতকাল দুপুরে ভোলার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দণ্ডবিধির ৩০২ ও ৩৪ ধারায় মামলাটি দায়ের করা হয়। আদালত আগামী ৮ আগস্টের মধ্যে নিহতের সুরতহাল রিপোর্ট, ময়নাতদন্তের রিপোর্টসহ অন্যান্য ডকুমেন্টারি পেপার্স আদালতে উপস্থাপনের জন্য ভোলা থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছে। মামলার বাদী এই হত্যা মামলার তদন্তভার পুলিশকে না দিয়ে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট অথবা র‌্যাবকে দেওয়ার জন্য আদালতের কাছে আবেদন জানিয়েছেন। 

আর কান্না নয়, জেগে উঠতে হবে : বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আর কান্না নয়, দেশ রক্ষার্থে আমাদের সবাইকে জেগে উঠতে হবে। নির্যাতনকারী সরকারের হাত থেকে জাতিকে মুক্ত করতে হবে। শান্তিপূর্ণ ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে ছাত্রদল নেতা নূরে আলম হত্যার প্রতিশোধ নেওয়া হবে।’ পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত ভোলা জেলা ছাত্রদল সভাপতি নূরে আলমের নামাজে জানাজার আগে গতকাল দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় বিএনপি মহাসচিব আজ-কাল-পরশু ৫, ৬ ও ৭ আগস্ট সারা দেশে শোক পালন কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এ ছাড়া ৬, ৭ ও ৮ আগস্ট ছাত্রদল, কৃষকদল ও যুবদলের পক্ষ থেকে বিক্ষোভ সমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। শোক পালনকালে সারা দেশে বিএনপি কার্যালয়ে দলীয় পতাকা অর্ধনমিত এবং কালো পতাকা উত্তোলন করা হবে। নয়াপল্টনে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এ জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা অংশ নেন এবং নিহত ছাত্রদল নেতার লাশ ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের পক্ষে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এর আগে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. জাহিদ হোসেন এবং দলের স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গ থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে নূরে আলমের লাশ নয়াপল্টনে নিয়ে আসেন। জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের মাওলানা নেছারুল হক জানাজার নামাজ পড়ান ও দোয়া পরিচালনা করেন।

 নেতা-কর্মীরা কালো ব্যাজ ধারণ করে জানাজায় অংশ নেন।্র জানাজায় অংশ নেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, আমানউল্লাহ আমান, রুহুল কবির রিজভী আহমেদ, খায়রুল কবীর খোকন, হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, আহমেদ আজম খান, আমিনুল হক, রফিকুল আলম মজনু, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, হাসান জাফির তুহিন, শহিদুল ইসলাম বাবুল, কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, সাইফ মাহমুদ জুয়েল প্রমুখ।

এ ছাড়া গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বাংলাদেশ জাতীয় দলের অ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা, এলডিপির ড. রেদওয়ান আহমেদ, এনপিপির ড.ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, জাগপার খন্দকার লুৎফর রহমান, ন্যাপের অ্যাডভোকেট আজারুল ইসলাম, এনডিপির কারী আবু তাহের, ডেমোক্রেটিক লীগের সাইফুদ্দিন মনিসহ ২০ দলীয় জোটের নেতা-কর্মীরা জানাজায় অংশ নেন।

চক্রান্ত নয়, জনআন্দোলনে সরকারকে সরাতে চাই : জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সেমিনারে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তার বিরুদ্ধে নাকি নতুন করে চক্রান্ত শুরু হচ্ছে। তাকে সরিয়ে দেওয়ার চক্রান্ত চলছে এবং তিনি তাদের চেনেন। আপনি দয়া করে তাদের নামগুলো উচ্চারণ করুন। কারা চক্রান্ত করছে, পরিষ্কার করে বলুন। আমরা জানতে চাই।’

গতকাল ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ‘গণতন্ত্র ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন। ডিইউজে সভাপতি কাদের গনি চৌধুরীর সভাপতিত্বে বক্তৃতা করেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ, বিএফইউজের সাবেক সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, বর্তমান সভাপতি এম আবদুল্লাহ, মহাসচিব নুরুল আমিন গাজী, ডিইউজের সাবেক সভাপতি আবদুল হাই শিকদার, সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘তথ্যমন্ত্রী বলেছেন, এই চক্রান্তের কথা নাকি সবচেয়ে বেশি আমিই বলি। পরিষ্কার করে

বলছি চক্রান্ত নয়, আমরা জনগণের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সরকারকে সরাতে চাই। এর জন্য আপনারা আমাকে যদি ফাঁসি দিতে চান, দেন।’

তিনি বলেন, ‘সরকারকে সরানোর আন্দোলন কোনো চক্রান্ত নয়। প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে বলতে চাই, জনগণের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই সরকারকে সরিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই। এখানে চক্রান্তের কোনো প্রশ্ন উঠতে পারে না। ষড়যন্ত্রেরও না। ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত করে ২০০৮ সালে আপনারাই ক্ষমতায় এসেছেন। আওয়ামী লীগ কখনো, কোনোকালে গণতন্ত্রের পক্ষে ছিল না। প্রকৃতপক্ষে তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। তারা মুখে বলবে ভালো কথা, কিন্তু কাজটা করে উল্টো।’

 

সর্বশেষ খবর