শনিবার, ৬ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা

আন্তর্জাতিকভাবে দেশের মর্যাদা সমুন্নত করবে যুবসমাজ

শেখ কামালের জন্মবার্ষিকী উদযাপনকালে প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

আন্তর্জাতিকভাবে দেশের মর্যাদা সমুন্নত করবে যুবসমাজ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের যুবসমাজ খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক চর্চায় যেন আন্তরিক হয়, নিজেদের আরও সম্পৃক্ত করে। এটি আমার আকাক্সক্ষা। শুধু দেশে নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়েও বাংলাদেশের মর্যাদাকে আরও সমুন্নত করবে। আমরা যখন সরকারে আসছি ক্রীড়াঙ্গনে উন্নয়ন করার চেষ্টা করেছি। ফান্ড গঠন করেছি। একটা বয়সে ক্রীড়াবিদদের আর অর্থ উপার্জন করার ক্ষমতা থাকে না। তাই সে সময় যেন বিপদে না পড়ে সে জন্য আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। গতকাল রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের ৭৩তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন এবং শেখ কামাল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ পুরস্কার-২০২২ প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন, মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামাল আমাদের জন্য যে নীতি-আদর্শ, কর্মপন্থা ও দিকনির্দেশনা রেখে গেছেন তা থেকে আমাদের যুবসমাজ তাদের চলার পথে তার আদর্শকে সামনে রেখে, তা অনুসরণ করে নিজেদের গড়ে তুলবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের শিশুরা থেকে শুরু করে যুবসমাজ পর্যন্ত যাতে সবাই খেলাধুলার সুযোগ পায় এবং সাংস্কৃতিক চর্চায় পারদর্শী হয় সে লক্ষ্যে উদ্যোগ নিয়েছিলেন শহীদ শেখ কামাল। এ দেশের ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক জগতে তার অবদান অপরিসীম। তিনি বলেন, শেখ কামাল বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। ফুটবল খেলতেন, ক্রিকেট খেলতেন। ভালো গান গাইতেন। সেতার বাজাতেন। নাটক করতেন। শেখ কামাল বেঁচে থাকলে আরও অনেক উন্নতি করতেন। আধুনিক ফুটবল খেলায় আবাহনী ক্রীড়াচক্র গড়ে তোলা বা বিভিন্ন খেলাধুলায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন তিনি। বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ক্ষমতা, জৌলুস, আরাম-আয়েশের দিকে যেন নজর না যায় সেভাবেই আমাদের মানুষ করেছেন আমাদের মা। সিম্পল লিভিং হাই থিঙ্কিং- এটাই ছিল আমাদের মোটো। কামালও ছিলেন সাদাসিধে। কামাল ও নূর দুজন একই সঙ্গে কর্নেল ওসমানীর এডিসি হয়েছিলেন। দুর্ভাগ্যের বিষয় ১৫ আগস্ট সেই নূরই প্রথম আসে আমাদের বাড়িতে। কামাল বোধহয় ধোঁকায় পড়ে গিয়েছিলেন। ভেবেছিলেন তাদের উদ্ধার করতে আসছে; কিন্তু সে যে ঘাতক হয়ে এসেছে সেটা বোধহয় জানতেন না। প্রথম তারা কামালকেই গুলি করে। এরপর একে একে পরিবারের সবাইকে হত্যা করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সুলতানার সঙ্গে বিয়েতে কামালের আপত্তি ছিল। কেননা আমার সঙ্গে সে খেলত। আমার ছোট বোনের মতো ছিল। জামাল, রেহানা, রাসেল সবাই সুলতানার খুব ভক্ত ছিল। সুলতানার সঙ্গে বিয়েতে কামালকে জোর করে রাজি করেছিলাম। দুর্ভাগ্য কামালের সঙ্গে সুলতানাকেও হারাতে হয়। তিনি বলেন, ঘাতকের দল আমার ছোট ফুফুর বাসায়ও যায়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আধুনিক ফুটবল খেলা আবাহনী ক্রীড়াচক্র গড়ে তোলা বা বিভিন্ন খেলাধুলায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন কামাল। মা’র ইচ্ছা ছিল তিনি যেন মাস্টার্স ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। তাই কামাল সেনাবাহিনীর চাকরি ছেড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। পরীক্ষা দিয়েছিলেন। রেজাল্ট আমরা এসে পরে পেয়েছি- এটা হচ্ছে দুর্ভাগ্য। তার রেজাল্ট তিনি দেখে যেতে পারেননি। সুলতানা, কামাল একসঙ্গেই পরীক্ষা দিয়েছিলেন। একজনের ভাইভা শেষ হয়েছিল আরেকজন ভাইবা শেষ করতে পারেননি। তার আগেই না ফেরার দেশে চলে যান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা সবাই সংগঠন করতাম। বাবাকে দেখতাম, মানুষের জন্য রাজনীতি করতে। তাঁর আদর্শ নিয়েই পথ চলতাম। এমনকি দেশ স্বাধীন হওয়ার পর রাষ্ট্রপতির ছেলে বা প্রধানমন্ত্রীর ছেলে হিসেবে কোনো অহমিকা ছিল না। এটি আমার মা-বাবা কখনো চাননি। তিনি বলেন, আমার বাবা শিখিয়েছেন মানুষের জন্য রাজনীতি করা। তাঁর আদর্শ নিয়ে আমরা পথ চলতাম। তিনিই আমদের শিখিয়েছিলেন সাদাসিধে জীবনযাপন করতে হবে। কাজেই ‘সিম্পল লিভিং হাই থিঙ্কিং’- এটিই ছিল আমাদের মোটো। শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণে জাতির পিতা যে ঘোষণা দিয়েছিলেন, যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকতে সেই কথা মেনে সারা দেশে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা সুসংগঠিত হচ্ছিল এবং শক্তিশালী সংগঠন গড়ে তুলতে কাজ করছিল। বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন শেখ কামাল ধানমন্ডি ১৯ নম্বর রোড, আবাহনী ক্লাব এলাকা ও সাত মসজিদ এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকার যুবসমাজকে সংগঠিত করার কাজ করেছিলেন। ২৫ মার্চ সন্ধ্যায় ওই রাস্তায় ব্যারিকেড দেওয়ার জন্য তিনি বাসা থেকে চলে যান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে জাতির পিতা স্বাধীনতার ঘোষণা করলে তৎকালীন ইপিআর-এর ওয়্যারলেসযোগে তা সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এরপরই জাতির পিতাকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। তাঁর মা-সহ পরিবারের সদস্যদের বন্দি করা হলে কামাল লুকিয়ে মুক্তিযুদ্ধে চলে যান (পরে শেখ জামালও মুক্তিযুদ্ধে চলে যান)। তিনি বলেন, কামালকে কিন্তু ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন লেখাপড়া করার জন্য। তাঁকে সব রকমের সহযোগিতা করবেন। কামাল তাতে রাজি না হয়ে বলেছেন, আমি যুদ্ধ করতে এসেছি। যুদ্ধই করব। ট্রেনিং নেব। তিনি দেরাদুনে প্রশিক্ষণ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি কর্নেল ওসমানীর এডিসি নিযুক্ত হন। প্রধানমন্ত্রী ও বড় বোন শেখ হাসিনা শেখ কামালের সঙ্গে ছেলেবেলার স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। কেননা পিঠেপিঠি ছোট ভাই কামাল যে তাঁর খেলার সাথীও ছিলেন। ছোট্ট কামালকে নিয়ে কারাগারে বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে দেখতে যাওয়ারও টুকরো স্মৃতির উল্লেখ করেন তিনি। তিনি বলেন, কামালের জন্মের পর পরই আব্বা গ্রেফতার হয়ে যান এবং ’৪৯ থেকে ’৫২ সাল পর্যন্ত বন্দি ছিলেন। কামালের ছোটবেলায় আমি যেমন আব্বাকে দেখে আব্বা আব্বা বলে ছুটে যেতাম ও ঠিক তেমনটা যেতে পারতেন না। আমাকে জিজ্ঞেস করতেন। এভাবে ওর ভিতর সবসময় একটা অতৃপ্তি ছিল। তবে আব্বা বের হওয়ার পর (কারামুক্তি) তাঁকে যথেষ্ট আদর করতেন। কেননা ছোটবেলায় তিনি বাবার আদর-বঞ্চিত হয়েছিলেন।

যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ২০২২ সালের মর্যাদাপূর্ণ শেখ কামাল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি) পুরস্কারের জন্য সাতটি বিভাগে ৯ জন ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব এবং দুটি সংস্থাকে মনোনীত করে। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে শেখ কামালের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে গত বছর থেকে এ পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে।

পুরস্কার পেলেন যারা : আওয়ামী লীগের যুব ও  ক্রীড়া সম্পাদক  প্রবীণ ক্রীড়া সংগঠক হারুনুর রশীদ আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন এবং ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব বিভাগে লিটন কুমার দাস (ক্রিকেট), আবদুল্লাহ হেল বাকী (শুটিং) এবং মোল্লা সাবিরা সুলতানা (ভারোত্তোলন) পুরস্কার পেয়েছেন। উদীয়মান ক্রীড়াবিদ হয়েছেন দুজন- দিয়া সিদ্দিক (তিরন্দাজি) ও মোহাম্মদ শরিফুল ইসলাম (ক্রিকেট)। ক্রীড়া সংগঠক ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পেয়েছেন দুজন- সাইদুর রহমান প্যাটেল ও নাজমা শামীম। ক্রীড়া সংস্থা/ফেডারেশন ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশ অলিম্পিক সমিতি এবং ক্রীড়া পৃষ্ঠপোষক হিসেবে গ্রিন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড পুরস্কার লাভ করে। ক্রীড়া সাংবাদিক হিসেবে সংবাদের কাশীনাথ বসাক পুরস্কার লাভ করেন। পুরস্কার বিজয়ী প্রত্যেকেই পেয়েছেন ১ লাখ টাকা একটি ক্রেস্ট ও সনদ।

নেপালকে মোংলা চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর ব্যবহারের প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর : পারস্পরিক সুবিধার জন্য সৈয়দপুর বিমানবন্দরের পাশাপাশি আবারও মোংলা ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর ব্যবহারের জন্য নেপালকে প্রস্তাব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নেপালের সফররত সংসদীয় প্রতিনিধি দল গতকাল সকালে গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে এলে তিনি এ প্রস্তাব দেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নেপাল আমাদের মোংলা ও চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে সুবিধা নিতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইংয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, নেপালের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন নেপালের ফেডারেল পার্লামেন্টের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক কমিটির চেয়ারপারসন পবিত্র নিরুওলা খারেল। বাংলাদেশ সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে আঞ্চলিক বিমানবন্দর হিসেবে গড়ে তুলছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নেপালসহ প্রতিবেশী দেশগুলো বিমানবন্দরটি ব্যবহার করতে পারবে।’ বৈঠকে উভয় পক্ষ পারস্পরিক সুবিধার জন্য ব্যবসা-বাণিজ্যে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা জোরদার করার পাশাপাশি দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও সুসংহত করার আগ্রহ প্রকাশ করে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালে বাংলাদেশকে সমর্থন করায় নেপালের নেতৃত্ব ও জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘নেপালসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখাকে তার সরকার অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়।’ নেপালি প্রতিনিধি দল ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর, বাংলাদেশ সংসদ পরিদর্শন করা এবং বহু কাক্সিক্ষত পদ্মা সেতু হয়ে টুঙ্গিপাড়ায় যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সন্তোষ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। বৈঠকের শুরুতে নেপালের প্রতিনিধি দল তাদের জন্য চমৎকার কর্মসূচি আয়োজনের জন্য বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ জানান। প্রতিনিধি দলের সদস্যরা অত্যন্ত সন্তোষ প্রকাশ করেন যে নেপাল ও বাংলাদেশ বিগত বছরগুলোতে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক উপভোগ করে আসছে। তারা উল্লেখ করেন, কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর উদযাপনের জন্য এ বছরটি উভয় দেশের জন্য খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। তারা আশা প্রকাশ করেন, দুই দেশ বিদ্যুৎ, জলবিদ্যুৎ, পর্যটন, শিক্ষা, আইসিটি, সংযোগ এবং জনগণের সঙ্গে যোগাযোগের মতো খাতে তাদের সহযোগিতা আরও সুসংহত করতে পারে। তারা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক জোরদার করতে নিয়মিত উচ্চপর্যায়ের সফরের ওপর জোর দেন। প্রতিনিধি দল প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী নেতৃত্ব এবং সাম্প্রতিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের প্রশংসা করে, যাকে অত্যন্ত চিত্তাকর্ষক বলে অভিহিত করে। নেপালি প্রতিনিধি দলে ছিলেন চাঁদতারা কুমারী এমপি, ড. দীপক প্রকাশ ভট্ট এমপি, দেব প্রসাদ তিমলসেনা এমপি, লীলা দেবী সিতৌলা এমপি, নারদ মুনি রানা এমপি ও সরলা কুমারী যাদব এমপি।

 

সর্বশেষ খবর