শনিবার, ৬ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা
চলন্ত বাসে ডাকাতি ও ধর্ষণ

আরও দুজন গ্রেফতার ডাকাতির কথা স্বীকার ধর্ষণ অস্বীকার

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি

কুষ্টিয়া থেকে ছেড়ে আসা ঈগল পরিবহনের বাসে ডাকাতি ও পালাক্রমে যৌন নিগ্রহের ঘটনায় আরও দুজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ডাকাতিতে জড়িত থাকার কথা তারা স্বীকার করলেও নারীকে দলবদ্ধ ধর্ষণে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে।

এ নিয়ে চাঞ্চল্যকর ওই ঘটনায় মোট তিনজন গ্রেফতার হলো। গতকাল বেলা ১২টায় পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে দুজনকে গ্রেফতারের তথ্য প্রকাশ করেন টাঙ্গাইল জেলা পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার। গ্রেফতার দুজন হলেন- গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার কাঞ্চনপুর গ্রামের শুকুর আলীর ছেলে মো. আবদুল আউয়াল (৩০) ও কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার ধোনার চর পশ্চিমপাড়া গ্রামের বাহেজের ছেলে নুরুন্নবী (২৬)। গ্রেফতার দুজনই মাদকাসক্ত।

চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার পরপরই গ্রেফতার রাজা মিয়ার সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করে আদালতে পাঠায় পুলিশ। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় টাঙ্গাইলের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মধুপুর আমলি আদালতের বিচারক বাদল কুমার চন্দ পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এরপর থেকেই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে পুলিশ। তার কাছ থেকে বাস ডাকাত চক্র সম্পর্কে তথ্য নেওয়া হচ্ছে। এর আগে তারা আরও কোনো ডাকাতি কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়েছেন কি না, তাদের দলের সদস্য সংখ্যা কত, তারা আর কী ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িত, সে সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলা থেকে এ দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ঘটনায় আগে গ্রেফতার রাজা মিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে একজনকে গতকাল ভোর ৫টায় কালিয়াকৈরের সূত্রাপুর টান এলাকা থেকে মো. আবদুল আউয়াল এবং নুরুন্নবীকে সকাল ৯টায় একই উপজেলার শিলাবহ পশ্চিমপাড়া থেকে গ্রেফতার করা হয়। নুরুন্নবী কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার ধোনার চর পশ্চিমপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনি কালিয়াকৈর উপজেলার শিলাবহ পশ্চিমপাড়ায় ভাড়া বাসায় থাকতেন। এর আগে বৃহস্পতিবার টাঙ্গাইল শহরের বাস টার্মিনাল সংলগ্ন দেওলা এলাকা থেকে রাজা মিয়াকে গ্রেফতার করা হয়। রাজা মিয়া কালিহাতী উপজেলার বল্লা গোরস্থান পাড়া গ্রামের হারুন অর রশিদের ছেলে। তিনি দেওলা এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন। সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার দুজন যৌন নিগ্রহের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন। তাদের আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। পাশাপাশি ভুক্তভোগী নারীর সামনে এ দুজনকে হাজির করা হবে। তিনি শনাক্ত করবেন। গত মঙ্গলবার (২ আগস্ট) সন্ধ্যায় কুষ্টিয়ার দৌলতপুর থেকে ঈগল পরিবহনের একটি বাস নারায়ণগঞ্জ হয়ে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা হয়। রাত সাড়ে ১১টার দিকে সিরাজগঞ্জের একটি খাবার হোটেলে যাত্রাবিরতি করে। সেখান থেকে যাত্রা শুরুর পর তিন দফায় যাত্রীবেশী কয়েকজন ডাকাত বাসে ওঠে। বাসটি টাঙ্গাইল অতিক্রম করার পর ডাকাতরা অস্ত্রের মুখে চালককে জিম্মি করে বাসটি তাদের নিয়ন্ত্রণে নেয়। তারা যাত্রীদের হাত, পা, চোখ বেঁধে তাদের সব লুটে নেয়। বাসে ১২-১৩ জন নারীসহ ২৪-২৫ জন যাত্রী ছিলেন। এ সময় বাসে থাকা এক নারী যাত্রী পালাক্রমে যৌন নিগ্রহের শিকার হন। ডাকাতরা পরে বাসটি টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ সড়কের দিকে নিয়ে যায়। রাত সাড়ে ৩টার দিকে বাসটি মধুপুর উপজেলার রক্তিপাড়া নামক স্থানে রাস্তার পাশে বালির ঢিবিতে ফেলে ডাকাতরা পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয় লোকজন ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা যাত্রীদের উদ্ধার করে। এ ঘটনায় ওই বাসের যাত্রী হেকমত মিয়া বাদী হয়ে মধুপুর থানায় বাস ডাকাতি ও যৌন নিগ্রহের ঘটনায় মামলা দায়ের করেন।

সর্বশেষ খবর