রবিবার, ৭ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা
প্রবাসী পরিবারে ট্র্যাজেডি

বাবা ভাইয়ের পর চলে গেল সামিরাও

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট

বাবা ও ভাইয়ের পর এবার চলে গেলেন ব্রিটিশকন্যা সামিরা ইসলাম। সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে ১১ দিন জ্ঞানশূন্য অবস্থায় থেকে গত শুক্রবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে তার মৃত্যু হয়। গতকাল ময়নাতদন্ত শেষে সামিরার মরদেহ তার স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. লুৎফর রহমান।

এর আগে গত ২৬ জুলাই দুপুরে সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলার তাজপুর স্কুল রোডের ভাড়া বাসা থেকে অচেতন অবস্থায় যুক্তরাজ্য প্রবাসী রফিকুল ইসলাম, তার স্ত্রী হোসনে আরা বেগম, দুই ছেলে সাদিকুল ইসলাম, মাইকুল ইসলাম ও মেয়ে সামিরা ইসলামকে উদ্ধার করা হয়। ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে আসার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক রফিকুল ইসলাম ও তার ছোট ছেলে মাইকুল ইসলামকে মৃত ঘোষণা করেন। সুস্থ হয়ে হোসনে আরা বেগম ও সাদিকুল ইসলাম হাসপাতাল ত্যাগ করলেও ফিরে যাওয়া হয়নি সামিরার। ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. আবদুল গাফ্ফার জানান, ২৬ জুলাই হাসপাতালের আইসিইউতে অচেতন অবস্থায় ভর্তি করা হয়েছিল হোসনে আরা বেগম, তার ছেলে সাদিকুল ইসলাম ও মেয়ে সামিরা ইসলামকে। এরপর ধীরে ধীরে শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলে হোসনে আরা বেগম ও সাদিকুল ইসলামকে আইসিইউ থেকে হাসপাতালের কেবিনে স্থানান্তর করা হয়। গত বুধবার হোসনে আরা ও তার ছেলে সাদিকুল ইসলামকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। কিন্তু সামিরার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। একপর্যায়ে তার কিডনি, লিভারসহ কিছু অঙ্গ কাজ করা বন্ধ করে দেয়। এ অবস্থায় শুক্রবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে সামিরা মারা যান। সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ লুৎফর রহমান জানান, সামিরার লাশ উদ্ধার করে হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। গতকাল ময়নাতদন্ত শেষে লাশ তার স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। গত বুধবার হোসনে আরা বেগম ও সাদিকুল ইসলাম হাসপাতাল থেকে বাসায় ফেরার পর তাদের সঙ্গে কথা বলেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন। এ সময় হোসনে আরা বেগম পুলিশ সুপারকে জানান, বিদ্যুৎ না থাকলে বাসার ভিতর জেনারেটর চলত। জেনারেটর চালুর পর তার ছেলে মাইকুল ইসলামের শ্বাসকষ্ট হতো। বাসায় জেনারেটর চালু করে পুলিশও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছে। জেনারেটর চালুর পর উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা অস্বস্তিকর পরিস্থিতি উপলব্ধি করেছেন বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার। পুলিশের ধারণা, ঘটনার রাতে দীর্ঘ সময় জেনারেটর চালু থাকায় শ্বাস-প্রশ্বাস না নিতে পেরে দমবন্ধ হয়ে যুক্তরাজ্য প্রবাসী রফিকুল ইসলাম ও তার ছেলে মাইকুল ইসলাম মারা যান। অচেতন হয়ে পড়েন স্ত্রী ও অপর এক ছেলে ও মেয়ে। জেনারেটরের ধোঁয়ায় কী ধরনের বিষক্রিয়ার সৃষ্টি হতে পারে তা নিশ্চিতে ফায়ার সার্ভিসের কাছে আলামত পাঠানা হয়েছে। তবে মৃত্যুর কারণ নিশ্চিতে পুলিশ মারা যাওয়া পিতা-পুত্রের ময়নাতদন্ত ও ওই রাতে গ্রহণ করা খাবারের রাসায়নিক পরীক্ষার রিপোর্টের দিকে তাকিয়ে আছে। এখনো কোনো রিপোর্টই পুলিশের হাতে পৌঁছায়নি। গত ১২ জুলাই রফিকুল ইসলাম পরিবারের সদস্যদের নিয়ে যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফিরেন। এরপর ঢাকায় এক সপ্তাহ থেকে গত ১৮ জুলাই তাজপুর স্কুল রোড এলাকার একটি ভাড়া বাসায় ওঠেন। ২৫ জুলাই সোমবার রাতের খাবার খেয়ে স্ত্রী, ছেলে ও মেয়েদের নিয়ে বাসার একটি কক্ষে রফিকুল এবং অপর দুটি কক্ষে শ্বশুর, শাশুড়ি, শ্যালক, শ্যালকের স্ত্রী ও শ্যালকের মেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। সকালে বাসার অন্যান্য কক্ষে থাকা আত্মীয়রা ডাকাডাকি করে রফিকুলদের কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে ‘৯৯৯’ নম্বরে ফোন দেন। খবর পেয়ে দুপুর ১২টার দিকে ওসমানীনগর থানাপুলিশের একটি দল গিয়ে দরজা ভেঙে অচেতন অবস্থায় পাঁচ যুক্তরাজ্য প্রবাসীকে উদ্ধার করে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা রফিকুল ইসলাম ও মাইকুল ইসলামকে মৃত ঘোষণা করেন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় বাকি তিনজনকে হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগে ভর্তি করা হয়।

 

সর্বশেষ খবর