মঙ্গলবার, ৯ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা

তাইওয়ান নিয়ে জাতিসংঘ সনদে অটল থাকার আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপপ্রয়োগ নিয়েও প্রশ্ন

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

তাইওয়ান নিয়ে জাতিসংঘ সনদে অটল থাকার আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের

ঢাকায় মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিশেল জে সিসন

বাংলাদেশকে জাতিসংঘ সনদের মূল নীতির ওপর অটল থাকার আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকা সফরে আসা যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সংস্থা বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিশেল জে সিসন। গতকাল পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠকে তিনি এ আহ্বান জানান। সাম্প্রতিক সময়ের তাইওয়ান প্রণালি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের বিরোধ ইস্যুতে এ আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের এই শীর্ষস্থানীয় কূটনীতিক। বৈঠক শেষে পররাষ্ট্র সচিব সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, চীন- তাইওয়ান ইস্যুতে বাংলাদেশের ‘এক চীন নীতি’ নিয়ে কোনো কথা না হলেও জাতিসংঘ সনদের মূল নীতির ওপর অটল থাকার অনুরোধ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

গতকাল ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে পররাষ্ট্র সচিবের নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিশেল জে সিসনের নেতৃত্বে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দল। এর আগে তারা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আমেরিকা উইংয়ের মহাপরিচালকসহ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসসহ প্রতিনিধি দলটি বৈঠকে ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়নের মহাসচিব পদে বাংলাদেশের সমর্থন প্রত্যাশা করেন। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দ্বিপক্ষীয় ব্যবসা বাণিজ্য, কূটনীতি ও র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরা হয়। পাশাপাশি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাংলাদেশের পাশে থাকার কথা জানায় যুক্তরাষ্ট্র। শেষে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্র সচিবের দেওয়া মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেয় মার্কিন প্রতিনিধি দল। পরে পররাষ্ট্র সচিব জানান, বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে র‌্যাবের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা বিষয়টি তুলে ধরা হয়। তারা বলেছে এটা একটা আইনি প্রক্রিয়া। এ বিষয়ে মূলত মার্কিন রাজস্ব বিভাগ ও বৈদেশিক সম্পদ নিয়ন্ত্রণবিষয়ক দফতর (ওফাক) কাজ করে। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের সরাসরি এ বিষয়ে কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আমরা বলেছি আমরা তাদের প্রক্রিয়া অনুযায়ী কাজ করতে চাই। এরই মধ্যে আমরা আমাদের দুর্বলতা কাটিয়ে উঠেছি। এ জন্য তাদের আইনি পরামর্শক সংস্থার সঙ্গে যুক্ত রয়েছি। ওদের আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার চেষ্টা করছি। মানবাধিকার নিয়ে আলোচনা সম্পর্কে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট এর প্রয়োগে যেন কোনো ধরনের অসঙ্গতি না থাকে, অপপ্রয়োগ রোধ করার কৌশল নিয়ে আলাপ হয়েছে। আমরা বিষয়টি নিয়ে খুবই সচেতন বলে জানিয়েছি। সচিব জানান, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণের প্রশংসাও করেছে যুক্তরাষ্ট্র। কীভাবে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ আরও বাড়ানো যায় ও ফলপ্রসূ হয়, তা নিয়েও আলোচনা হয়। বৈঠকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে সহযোগিতা করতে রাজি হওয়ার কথা জানায় যুক্তরাষ্ট্র। জবাবে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিজে) রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে চলা মামলায় সহযোগিতার প্রস্তাব দেয় বাংলাদেশ। সচিব বলেন, আমরা বলেছি, রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফেরত পাঠানোর মাধ্যমেই সমস্যার টেকসই সমাধান করতে হবে। তৃতীয় দেশে রোহিঙ্গা রেখে এই সমস্যার সমাধান হবে না। সাসটেইনেবল এগ্রিকালচার মিথেন কমিটমেন্টে কীভাবে শরিক হওয়া যায় তা নিয়েও দুই দেশের মধ্যে আলোচনা হয়েছে বলেও জানান পররাষ্ট্র সচিব। বলেন, বৈঠকে জলবায়ু ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র কপ-২৬ এ ফিরে এসেছে। আমরা বিশ্বের অন্যতম জলবায়ু দুর্যোগপূর্ণ দেশ। গ্লাসগোতেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয় বলে জানান পররাষ্ট্র সচিব। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় নতুন করে উঠে এসেছে ফুড সিকিউরিটি বিষয়ে। আগেও এটা নিয়ে কথা হয়েছে। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর এটা বিশ্বের জন্য নতুন সমস্যা হিসেবে উঠে এসেছে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। গত শনিবার তিন দিনের সফরে ঢাকা আসেন যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সংস্থা বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিশেল জে সিসন।

সর্বশেষ খবর