মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ রাজনৈতিক অপপ্রচারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে জাতিসংঘকে জানিয়েছে আওয়ামী লীগ। দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি রাজনৈতিক সহিংসতার শিকার হয়েছে আওয়ামী লীগ। গতকাল ঢাকায় সফররত জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের প্রধান রোরি মআংগোভেনকে এ কথা বলেছেন আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল। রোরি মআংগোভেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান মিশেল ব্যাচলেটের সঙ্গেই ঢাকা সফরে আসেন। মিশেল ব্যাচলেট তার সফর শেষ করলেও তার হয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেছেন রোরি মআংগোভেন।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের প্রধানের সঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলে ছিলেন দলের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ এবং শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। বৈঠক শেষে ড. সেলিম মাহমুদ বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগকে রাজনৈতিক অপপ্রচারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের প্রতিনিধি দলকে জানানো হয়েছে। আমরা বলেছি- এটা একটা পলিটিক্যাল ক্যাম্পেইন। তিনি আরও বলেন, স্থিতিশীলতা ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে  অব্যাহত রাখতে শুধু সরকার নয়, সবাইকেই কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, আমরা বৈঠকে জানিয়েছি- আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি রাজনৈতিক সহিংসতার শিকার। পঁচাত্তরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা এবং ২১ আগস্টে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের লিডারশিপকে হত্যার ঘটনা, অন্যান্য ঘটনাও আমরা তদের বলেছি। ড. সেলিম মাহমুদ বলেন, বৈঠকে তারা বলেছে- ‘বাংলাদেশ হ্যাজ ইনরম্যাস প্রটেনশিয়াল’। বাংলাদেশের যে সমৃদ্ধি হয়েছে, সেখানে মানবাধিকারকে শুধু একভাবে দেখলে হবে না। সার্বিক যে একটা বড় ক্যানভাস- অর্থনৈতিক সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার এবং রাজনৈতিক অধিকার। যা জাতির পিতা আমাদের দিয়ে গেছেন। এই দুই ধরনের অধিকার বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেই কিন্তু বাংলাদেশে অনেক সাফল্য রয়েছে। এটা তারাও বলেছে। এগুলো নিয়ে তারা ভবিষ্যতের বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করার কথা বলেছে। তারা বাংলাদেশকে নিয়ে অনেক আশাবাদী। জাতিসংঘের প্রতিনিধি দল এটাও বলেছেন- পৃথিবীর সব দেশেই মানবাধিকার নিয়ে অনেক সমস্যা আছে। এ সময় মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, বৈঠকে মআংগোভেন শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশের অগ্রগতি তুলে ধরেছি। জাতিসংঘের যিনি প্রতিনিধি তিনি আমাদের দেশের এই বিষয়গুলোর অর্জনের প্রশংসা করেছেন। আঞ্চলিক পেক্ষাপটে যে আমাদের মান ও দক্ষতা উন্নত হচ্ছে, এগুলোও কিন্তু জাতিসংঘ প্রণীত মানবাধিকারের যে ব্যাখ্যা তার গুরুত্বপর্ণূ অংশ। তিনি আরও বলেন, আমরা চাচ্ছি সরকার অনেক বেশি জবাবদিহিতামূলক হবে। স্বচ্ছ হবে। এই কাজটা আমরা বারবার করার চেষ্টা করছি। একই সঙ্গে এটাও তাদের সামনে তুলে ধরেছি- চরমপন্থি উগ্রবাদি যে রাজনৈতিক শক্তিটা বাংলাদেশে আছে, উগ্র বাম এবং উগ্র ডান, তাদের আমাদের প্রগতিশীল সরকারের বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রচেষ্টা রয়েছে। যারা বাংলাদেশকে জঙ্গিবাদের দিকে ঠেলে দিতে চেয়েছে, তারা কিন্তু এখনো রাজনীতিতে আছে, তাদের রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমেই প্রতিহত করতে আমাদের কাজ করতে হয়। বৈঠকে এগুলোও তাদের বলেছি। বৈঠকে তারা প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার ওপর জোর দিয়েছেন জানিয়ে শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেন, কোনো প্রতিষ্ঠান বা কোনো প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা বা কর্মচারী নিয়ে যদি কোনো প্রশ্ন থেকে থাকে তাহলে সেই প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা থাকতে হবে, জবাবদিহিতার মধ্যে আনা। ডিসিপ্লিনি প্রসেসের মধ্যে আনা। সেটা কিন্তু রাতারাতি আসে না। সেটা প্রক্রিয়াধীন বিষয়। প্রতিষ্ঠানগুলো ধীরে ধীরে সেই সক্ষমতা অর্জন করে। সেই সক্ষমতা অর্জনে জাতিসংঘ বাংলাদেশের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে কাজ করে যাবে। বৈঠক সূত্র জানায়, ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতে ইসলামের তান্ডবের ঘটনায় পুলিশি অভিযানের সময় ৬১ জনের মৃত্যুর দাবি করে মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’-এর দেওয়া প্রতিবেদনকে অস্বচ্ছ ও প্রমাণবিহীন হিসেবে তুলে ধরেন আওয়ামী লীগ প্রতিনিধি দল। তারা জানান, এই রিপোর্ট প্রকাশের পর একই বছরের ১ জুন তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে সংগঠনটির কাছে ৬১ জনের ঠিকানা চাওয়া হলেও তা দিতে পারেনি তারা। তথ্য-প্রমাণে মেলেনি মৃতের সংখ্যাও। এতে অধিকারের বিরুদ্ধে সরকার মামলা করলে এনজিও ব্যুরো সংগঠনটির নিবন্ধন বাতিল করে। সেই অধিকারকে তথ্যসূত্র হিসেবে ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশকে নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে, যা সম্পূর্ণ অসত্য বলেও দাবি করেছে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দল।