মঙ্গলবার, ২৩ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা
লক্ষ্য জ্বালানি সাশ্রয়

নতুন সময়সূচিতে অফিস শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ৫ দিন

♦ কাল থেকে সরকারি অফিস ৮-৩টা ♦ ব্যাংক লেনদেন ৯-৩টা ♦ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শুক্র-শনি সাপ্তাহিক ছুটি ♦ খাবার হোটেল রাত ১০টা, সিনেমা হল ১১টায় বন্ধের নির্দেশ ডিএসসিসির

নিজস্ব প্রতিবেদক

জ্বালানি সংকটের মধ্যে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের চেষ্টায় কর্মঘণ্টা কমিয়ে অফিস ও ব্যাংকের সময়সূচি বদলে দিয়েছে সরকার। কাল বুধবার থেকে সব সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত অফিস খোলা থাকবে সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত। এত দিন সরকারি কর্মীরা অফিস করতেন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা। এখন থেকে ব্যাংকের কাজ চলবে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। এত দিন ব্যাংকের দাফতরিক কাজের সময় ছিল সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। পাশাপাশি দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাপ্তাহিক ছুটি এক দিন থেকে বাড়িয়ে দুই দিন করা হয়েছে।

গতকাল সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। বৈঠক শেষে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের বিস্তারিত জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। সরকারি অফিসের নতুন সময়সূচি নির্ধারণ করে গতকালই আদেশ জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সময়সূচির ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব সুবিধাজনক অবস্থা নিজেরা নির্ধারণ করবে। যত দিন বিদ্যুৎ এবং জ্বালানির বিষয়ে একটা সুবিধাজনক অবস্থায় দেশ না আসবে, তত দিন এ নির্দেশনা বহাল থাকবে। বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় দেশের বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনার বিষয়ে ক্যাবিনেটে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে বলেও জানান তিনি। এর মধ্যে আমন ধানের সেচ সুবিধা ও সার কারখানার জন্য অবিলম্বে মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে সময়টা নির্দিষ্ট করবে কৃষি মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া ব্যাংকের সময় এগিয়ে এনে ১০টা-৬টার পরিবর্তে ৯টা-৪টা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আর দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাপ্তাহিক ছুটি এক দিন থেকে দুই দিন করা হয়েছে। কোন কোন দিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে তা নির্ধারণ করে পরে জানিয়ে দেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এখন থেকে সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সপ্তাহে দুই দিন শুক্র ও শনি বার বন্ধ থাকবে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘এটার দুটি সুবিধা। একটি হলো বিদ্যুতের সাশ্রয় হবে, আর ট্রাফিক জ্যামটাও একটু ডিস্ট্রিবিউটেড হয়ে যাবে। সরকারি অফিসগুলোয় বিদ্যুত সাশ্রয়ে কোথাও কোনো পর্দা টানানো থাকবে না। লাইট যথাসম্ভব কম জ্বালিয়ে কাজ করতে হবে। এয়ারকুলারও যথাসম্ভব কম ব্যবহারের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ জ্বালানির আন্তর্জাতিক বাজারে যে অস্থিরতা তৈরি করেছে, তার প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনে। ফলে সম্প্রতি দেশজুড়ে লোডশেডিং ফিরে এসেছে। জ্বালানি তেলের দাম এক লাফে বাড়ানো হয়েছে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত। এ পরিস্থিতি লকডাউনের সময়ের মতো হোম অফিস চালু করা, অফিসের কর্মঘণ্টা কমিয়ে আনা, এসি ব্যবহারে সংযমী হওয়াসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ নিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কাছে সুপারিশ করেছিল বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়। ৭ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সব বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থার প্রধান এবং অন্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেছিলেন, জ্বালানির দাম বাড়ায় ভর্তুকির যে চাপ তৈরি হয়েছে তাতে ‘একমাত্র বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার মাধ্যমেই’ পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক করা সম্ভব বলে তাঁরা মনে করছেন। ওই বৈঠক থেকেই সরকারি-বেসরকারি সব ধরনের অফিস-আদালত কিংবা বাসায় এসি ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে রাখা, আলোকসজ্জা না করা, বিয়ে বা অন্যান্য সামাজিক অনুষ্ঠান সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে শেষ করা, বাজার, মসজিদ, শপিং মলে বিদ্যুতের ব্যবহার কমিয়ে আনা, যে-কোনো রাতের অনুষ্ঠান সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে শেষ করার সুপারিশ করা হয়। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় ওই সুপারিশ করার দেড় মাস পর অফিস ও ব্যাংকের কাজের সূচি বদলের সরকারি ঘোষণা এলো।

হোটেল রাত ১০টায় সিনেমা হল ১১টার মধ্যে বন্ধের নির্দেশ : বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে কোনো ধরনের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান রাত কয়টা পর্যন্ত খোলা রাখা যাবে, তা ঠিক করে দিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, রেস্তোরাঁ ও খাবার দোকান রাত ১০টায় বন্ধ করে দিতে হবে। এ ছাড়া রাত ১১টার মধ্যে সিনেমা হলসহ সব ধরনের বিনোদনমূলক প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। গতকাল এক গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। এতে বলা হয়েছে, এ এলাকার সব দোকান-পাট, শপিং মল, মার্কেট ও বিপণি বিতান বন্ধ করার শেষ সময় রাত ৮টা। কাঁচাবাজার, ব্যবসায়িক বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনা বন্ধ করতে হবে রাত ১০টার মধ্যে। এ এলাকার সব ধরনের রেস্তোরাঁ ও খাবার দোকানের রান্নাঘর বন্ধ হবে রাত ১০টার মধ্যে। তবে খাবার সরবরাহ করা যাবে ১১টা পর্যন্ত। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, চলচ্চিত্র প্রেক্ষাগৃহসহ চিত্তবিনোদনমূলক প্রতিষ্ঠান বা স্থাপনা রাত ১১টা পর্যন্ত, সাধারণ ওষুধের দোকান রাত ১২টা পর্যন্ত এবং হাসপাতালের সঙ্গে সংযুক্ত নিজস্ব ওষুধের দোকান রাত ২টা পর্যন্ত খোলা রাখা যাবে।

এতে বলা হয়, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের এখতিয়ারাধীন সব এলাকায় শৃঙ্খলা আনতে এবং ঢাকা শহর পরিচালনায় সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে জনস্বার্থে বৃহস্পতিবার থেকে এ সময়সূচি অনুযায়ী সবকিছু পরিচালিত হবে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ১৬ জুন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে জারি করা নির্দেশনা মোতাবেক বিশ্বব্যাপী জ্বালানির অব্যাহত মূল্যবৃদ্ধিজনিত পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ের লক্ষ্যে রাত ৮টার পর দোকান, শপিং মল, মার্কেট, বিপণিবিতান ও কাঁচাবাজার বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ওই নির্দেশনার অনুবৃত্তিক্রমে ও জনস্বার্থে এ গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হলো, যা পরবর্তী সিদ্ধান্ত না দেওয়া পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।

 

সর্বশেষ খবর