শুক্রবার, ২৬ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা

রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেবে যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাজ্যের নতুন নিষেধাজ্ঞা, স্থায়ী সমাধানের অঙ্গীকার ১৪ দূতাবাসের

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

মিয়ানমারের নির্যাতনে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া এবং অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে থাকা রোহিঙ্গাদের যুক্তরাষ্ট্রে পুনর্বাসন করা হবে বলে জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো মিয়ানমারের গণহত্যার পঞ্চম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে এক বিবৃতিতে তিনি এ কথা বলেন। মার্কিন     পররাষ্ট্র দফতরের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। তবে এ বিবৃতিতে কোথায় কখন কীভাবে কাদের পুনর্বাসন করা হবে তা নিয়ে কিছু বলা হয়নি।

বিবৃতিতে অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেন, ২০১৭ সাল থেকে রোহিঙ্গাদের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গারা নিজ ভূমিতে নিরাপদে ফিরে যেতে পারবে না। রাখাইনের সহিংসতায় জীবন নিয়ে পালিয়ে বাংলাদেশে ও অঞ্চলের অন্যান্য স্থানসহ মিয়ানমারে থাকা রোহিঙ্গাদের জন্য যুক্তরাষ্ট্র এককভাবে ১৭০ কোটি ডলার মানবিক সহযোগিতা দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশসহ অঞ্চলের অন্যান্য দেশ, যারা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে সেই দেশগুলোর সরকারের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বিবৃতিতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, আন্তর্জাতিক বিস্তৃত জরুরি মানবিক সাড়াদানের অংশ হিসেবে আমরা বাংলাদেশে থাকা এবং অঞ্চলের অন্যান্য স্থানে থাকা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পুনর্বাসন উল্লেখজনক সংখ্যায় বাড়াতে কাজ করছি, যাতে তারা যুক্তরাষ্ট্রে তাদের জীবন পুনর্গঠন করতে পারে।

যুক্তরাজ্যের নতুন নিষেধাজ্ঞা : মিয়ানমারে সামরিক বাহিনীর সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যবসাগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাজ্য। নিষেধাজ্ঞার আওতায় স্টারশিপ গ্রুপ অব কোম্পানিজ, ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়েস গ্রুপ কোম্পানিস লিমিডেট (আইজিজি) ও স্কাই কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড রয়েছে। এশিয়াবিষয়ক মন্ত্রী আমান্ডা মিলিং বলেন, যারা আমাদের গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার মূল্যবোধকে ছোট ও ধ্বংস করতে চায় যুক্তরাজ্য সবসময় তাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে। পাঁচ বছর ধরে আমরা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে সহায়তা করে পাশে আছি এবং ভয়ানক জাতিগত ধ্বংসযজ্ঞের জন্য মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নিন্দা জানিয়েছি। মন্ত্রী মিলিং বলেন, আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গাম্বিয়ার মামলায় মধ্যস্থতা এবং নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ ২০১৭ সালের নৃশংসতার জবাবদিহিতা নিশ্চিত এবং মিয়ানমারের সামরিক জান্তার অর্থনীতি ও অস্ত্র সরবরাহ সীমিত করাতে যুক্তরাজ্যের অব্যাহত সমর্থনের ব্যাপারে শক্তিশালী বার্তা দেয়। ২০১৭ সালের সহিংসতার লক্ষ্য ছিল রোহিঙ্গাদের পরিচয় ও ভবিষ্যৎ বংশধর ধ্বংস করা।

স্থায়ী সমাধানের চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার কথা জানাল ১৪ দূতাবাস হাইকমিশন : মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের বিষয়ে স্থায়ী সমাধানের চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে ঢাকায় নিযুক্ত ১৪টি দেশের দূতাবাস ও হাইকমিশন। গতকাল এক যৌথ বিবৃতিতে তারা এ অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। দূতাবাস ও হাইকমিশনগুলো হচ্ছে- অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশন, ব্রিটিশ হাইকমিশন, কানাডিয়ান হাইকমিশন, ডেনমার্ক দূতাবাস, ইউরোপীয় ইউনিয়নের টিম, ফ্রান্স দূতাবাস, জার্মান দূতাবাস, ইতালি দূতাবাস, নেদারল্যান্ডস দূতাবাস, নরওয়ে দূতাবাস, স্পেন দূতাবাস, সুইডেন দূতাবাস, সুইজারল্যান্ড দূতাবাস ও যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস। ২০১৭ সালের আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ অভিমুখে রোহিঙ্গাদের ঢল নামার বিষয়টি স্মরণ করে বিবৃতিতে বলা হয়, ওই সময় প্রায় ৮ লাখ রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে তাদের বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছিল। রোহিঙ্গাদের বাস্তুচ্যুত হওয়ার সময়ে তাদের প্রতি বাংলাদেশের অবিশ্বাস্য সহনশীলতা এবং সাহস অনস্বীকার্য। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ায় বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানানো হয় যৌথ বিবৃতিতে। দূতাবাস ও হাইকমিশনগুলো বিবৃতিতে উল্লেখ করে, আমরা রোহিঙ্গাদের দুর্দশার কথা আন্তর্জাতিক পরিসরে তুলে ধরেছি। পরিস্থিতি অনুকূল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায়, নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ এবং স্থায়ী প্রত্যাবাসন ও এ সংকটের সমাধান চাই আমরা। আমরা মিয়ানমারজুড়ে দেশটির সেনাবাহিনীর ক্রমবর্ধমান সহিংসতা এবং গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিবেদন উদ্বেগের সঙ্গে লিপিবদ্ধ করছি। সেখানে এসব ঘটনার দায়মুক্তির সংস্কৃতির অবসানের আহ্বান জানাই। রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত ভয়ঙ্কর কর্মকাণ্ডের জন্য আন্তর্জাতিক জবাবদিহিমূলক উদ্যোগের প্রতি অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে বিবৃতিতে বলা হয়, আমাদের দেশগুলো রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ী কিছু ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। আমরা মিয়ানমারে রাজনৈতিক ও মানবিক সংকট সমাধানেও চাপ দিয়ে যাব, যেন এ সংকটের সমাধানে রোহিঙ্গাদেরও অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মানবিক সহায়তা, সুরক্ষা এবং শিক্ষা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকার, জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক ও জাতীয় অংশীদারদের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়ও ব্যক্ত করা হয় বিবৃতিতে।

 

সর্বশেষ খবর