রবিবার, ২৮ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা

কানের পর্দা ফাটার পরও অভিযোগ প্রত্যাহার!

রাবি প্রতিনিধি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) মতিহার হলে ছাত্রলীগের নির্যাতনের শিকার অর্থনীতি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সামছুল ইসলামের বাঁ কানের পর্দা ফেটে গেছে। ঘটনার পর থেকে তিনি বাঁ কানে শুনছিলেন না। বুধবার রাতে কানের ব্যথা নিয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। বৃহস্পতিবার পরীক্ষার প্রতিবেদন পান।

হাসপাতালের নাক-কান-গলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সুব্রত ঘোষ বলেন, প্রতিবেদন অনুযায়ী ওই রোগীর কানের পর্দা ছেঁড়া।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী সামছুল ইসলাম জানান, বুধবার রাতে হঠাৎ কানে ব্যথা অনুভূত হয়। রাতেই তিনি রাজশাহী মেডিকেলের নাক-কান-গলা বিভাগের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি হন। পরে চিকিৎসক কিছু পরীক্ষা দেন। বাইরে গিয়ে তিনি পরীক্ষা করান। প্রতিবেদন দেখে চিকিৎসক জানান, তার বাঁ কানের পর্দা ফেটে গেছে। তিনি এখনো শুনতে পাচ্ছেন না। এ ছাড়া মারধরের পর থেকে শারীরিক নানা জটিলতায় ভুগছেন। হাসপাতাল থেকে পাওয়া সামছুলের ছাড়পত্রে লেখা আছে, Ruptured TM (Left)। এর অর্থ হচ্ছে বাঁ কানের কিছু একটা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।

তবে চাঁদা আদায়ের লক্ষ্যে হলকক্ষে আটকে রেখে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন এবং গলায় ছুরি ঠেকিয়ে ২০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ সামছুল ইসলাম তুলে নিয়েছেন। বুধবার এই মর্মে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর বরাবর লিখিত আবেদন দিয়েছিলেন। আবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, ১৯ আগস্ট মতিহার হলের ২৩২ নম্বর কক্ষে হল ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক ভাস্কর সাহা আমাকে ডেকে নিয়ে চাঁদা দাবি করেন। অস্বীকৃতি জানালে তিনি বিকাল ৩টা থেকে ৬টা পর্যন্ত আমাকে মানসিক ও শারীরিকভাবে নির্যাতন করেন, আনুমানিক ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা আমার মানিব্যাগ থেকে ছিনিয়ে নেন। পরে তিনি আমার কাছে তার কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হন এবং ক্ষমাপ্রার্থনা করেন। সেই সঙ্গে আমার আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে সম্মত হন। মানবিক দিক বিবেচনা করে ক্ষমা করে দিয়েছি এবং তার বিরুদ্ধে এখন আমার আর কোনো অভিযোগ নেই। এ অবস্থায় প্রক্টর ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আমার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা প্রদানের জন্য বিনীত অনুরোধ করছি।

অভিযোগ তুলে নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে সামছুল ইসলাম কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা পাশে ছিলেন আমার বিপদে। আশা করি ভবিষ্যতেও থাকবেন। সার্বিক দিক বিবেচনা করেই অভিযোগটি প্রত্যাহার করেছি। বিষয়টি পুরোপুরি প্রশাসনের ওপর ছেড়ে দিয়েছি। যা করার প্রশাসন করবে।’ শাখা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাদের সংগঠন থেকে কিছু বলার নেই। এটা তাদের ব্যক্তিগত বিষয়। তারা পরস্পর বন্ধু। যেহেতু তাদের মধ্যে সমাধান হয়েছে আমাদের কিছু বলার নেই। সমাধান হওয়ার পরও যদি অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হয় তাহলে অবশ্যই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, ‘ভুক্তভোগী সামছুল ২৩ তারিখে অভিযোগ তুলে নিতে লিখিত আবেদন দিয়েছে। আবেদনটি তদন্ত কমিটিকে দিয়েছি। কেন সে অভিযোগ তুলে নিতে আবেদন করল তা-ও তদন্ত করে দেখা হবে।’

সর্বশেষ খবর