সোমবার, ২৯ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা
হাই কোর্টের পর্যবেক্ষণ

চেক ডিজঅনারে জেলে পাঠানো সংবিধান পরিপন্থী

নিজস্ব প্রতিবেদক

চেক ডিজঅনার মামলায় কোনো ব্যক্তিকে জেলে পাঠানো সংবিধানের ৩২ অনুচ্ছেদের পরিপন্থী বলে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন হাই কোর্ট। চেক ডিজঅনার সংক্রান্ত কয়েকটি মামলা নিষ্পত্তি করে গতকাল বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের একক হাই কোর্ট বেঞ্চের দেওয়া রায়ে এমন পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়েছে। রায়ে নেগোশিয়েবল ইনস্ট্রুমেন্ট অ্যাক্টের (এনআই অ্যাক্ট) ১৩৮ ধারা সংশোধন করে চেক ডিজঅনার মামলায় জেলে পাঠানোর বিধান বাতিল করতে জাতীয় সংসদকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ওই ধারা সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত চেক ডিজঅনার মামলা নিষ্পত্তিতে একটি গাইডলাইন দেওয়া হয়েছে রায়ে।

রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছেন, কোনো ব্যক্তিকে তার ব্যক্তি স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করা সংবিধান পরিপন্থী। নেগোসিয়েবল ইনস্ট্রুমেন্ট আইনের চেক ডিজঅনার সংক্রান্ত মামলায় কোনো ব্যক্তিকে কারাগারে বন্দি রাখা ব্যক্তিগত স্বাধীনতা হরণের সমান। রায়ে আদালত উন্নত বিশ্বের উদাহরণ টেনে বলেন, সিঙ্গাপুর, ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশে চেক ডিজঅনার মামলায় জেলে পাঠানোর বিধান নেই। এসব দেশে চেক ডিজঅনারের মামলাগুলোকে দেওয়ানি প্রকৃতির মামলা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বাংলাদেশ নেগোসিয়েবল ইনস্ট্রুমেন্ট অ্যাক্টে ১৯৯৪ সালে পেনাল কোড সংযোজনের মাধ্যমে আধা-ফৌজদারি হিসেবে পরিণত করা হয়েছে। পর্যবেক্ষণে হাই কোর্ট বলেন, কনট্রাকচ্যুয়াল অব নেগোসিয়েশন বা চুক্তিগত দায়-দায়িত্ব পূরণে ব্যর্থতার জন্য কোনো ব্যক্তিকে কারাগারে বন্দি রাখা যাবে না। চুক্তিগত দায়-দায়িত্ব পূরণে ব্যর্থতার জন্য যদি কারাগারে পাঠানো হয় তাহলে অচিরেই বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষ কারাগারে চলে যাবে। এটা কারও কাম্য নয়। আদালত মনে করেন, এনআই অ্যাক্টের ১৩৮ ধারা দ্রুত সংশোধন করে কারাগারে পাঠানোর বিধান বাতিল করা আবশ্যক। আদালত প্রত্যাশা ব্যক্ত করে বলেন, জাতীয় সংসদ অতি দ্রুত এনআই অ্যাক্টের ১৩৮ ধারা সংশোধন করবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।

আদালত বলেন, জাতীয় সংসদ যতদিন না ১৩৮ ধারার সংশোধন না করেন বা সংশোধনী আনা হয়, ততদিন পর্যন্ত এনআই অ্যাক্টের ১৩৮ ধারার আওতায় চেক ডিজঅনারের মামলা আপসযোগ্য হবে। চেক ডিজঅনারের মামলা বিচারের এখতিয়ার সম্পন্ন দেশের সব আদালতে সাজার পরিবর্তে তিন গুণ পর্যন্ত জরিমানা দিতে পারবে। আদালত এই রায়ের অনুলিপি দেশের সব আদালতে ও আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ খবর