মঙ্গলবার, ৩০ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা
জানালেন চিকিৎসক

ক্রনিক লিভার ডিজিজে জটিলতা খালেদা জিয়ার

নিজস্ব প্রতিবেদক

ক্রনিক লিভার ডিজিজের কারণে কিছুটা জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শরীরে। এ কারণে তাঁর ঘন ঘন শারীরিক দুর্বলতা দেখা দিচ্ছে। তাঁর অর্গানগুলো ওঠানামা করছে। মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা প্রতিদিন বিভিন্ন রকমের গবেষণা এবং নানা কলাকৌশল অবলম্বন করেই মূলত বেগম জিয়ার পরিপাকতন্ত্রের রক্তক্ষরণ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার চেষ্টা করছেন। মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকদের সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। তাঁদের মতে বিদেশে উন্নত হেলথ সেন্টারে নিতে না পারায় খালেদা জিয়ার লিভার সিরোসিসের চিকিৎসাটা সঠিকভাবে হচ্ছে না। ফলে দিন দিন জটিলতা দেখা দিচ্ছে। এর সত্যতা স্বীকার করেছেন বেগম জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন। এ সম্পর্কে তিনি গতরাতে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, রবিবার রাতে বসুন্ধরায় এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর থেকে গতকাল সোমবার পর্যন্ত তাঁর শরীরে বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। আজকেও অনেকগুলো পরীক্ষা করার কথা বলেছে মেডিকেল বোর্ড। এ বোর্ডের তত্ত্বাবধানেই মূলত তাঁর চিকিৎসাটা এখানে করা হচ্ছে। বেশ কিছু জটিলতাও সৃষ্টি হয়েছে তাঁর শরীরে। অন্যথায় তো তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হতো না। তাছাড়া মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে বারবারই বলা হচ্ছে, লিভার সিরোসিসের মতো রোগের পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা বাংলাদেশে হয় না। এজন্য তাঁকে দ্রুত বিদেশের কোনো উন্নত হেলথ সেন্টারে নেওয়াটা অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু সরকার তাঁকে বিদেশে নেওয়ার অনুমতি দিচ্ছে না। সবগুলো টেস্টের রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর পর্যালোচনা শেষে  মেডিকেল বোর্ডই সিদ্ধান্ত নেবে পরবর্তী করণীয় কী হবে?

২২ আগস্ট খালেদা জিয়াকে ওই হাসপাতালে নিয়ে হৃদযন্ত্রের কয়েকটি পরীক্ষা করা হয়। সেগুলোর প্রতিবেদন পাওয়ার পর মেডিকেল বোর্ড আরও কয়েকটি পরীক্ষা করার জন্য জরুরিভিত্তিতে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করতে বলে। সে জন্য তাঁকে আবারও হাসপাতালে নেওয়া হয়। এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে মেডিকেল বোর্ডের তত্ত্বাবধায়নে চিকিৎসা চলছে সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীর। গত জুনে একই হাসপাতালে খালেদা জিয়ার হৃৎপিণ্ডের ব্লক অপসারণ করে একটি স্টেন্ট বসানো হয়েছিল। ওই সময়ে তাঁর হৃৎপিে  আরও দুটি ব্লক ধরা পড়ে। একসঙ্গে এতগুলো ব্লকের অস্ত্রোপচারের ধকল তাঁর পক্ষে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয় বলে চিকিৎসকরা কিছুটা সময় নিয়েছেন। সেগুলোর বর্তমান অবস্থাসহ তাঁর সার্বিক শারীরিক পরিস্থিতি জানার জন্যই মূলত এ টেস্টগুলো করার নির্দেশনা দিয়েছে মেডিকেল বোর্ড। বোর্ডের একজন সদস্য এসব তথ্য জানিয়েছেন। ৭৭ বছর বয়সী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে হৃৎপিণ্ডের রক্তনালিতে ব্লক, আর্থ্রাটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস, চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন। গত বছর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর তার পরিপাকতন্ত্রে রক্তক্ষরণ এবং লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হওয়ার কথাও জানান চিকিৎসকরা। নানা জটিলতার উন্নত চিকিৎসার দাবি করে তাঁকে বিদেশে পাঠানোর জন্য কয়েক দফা আবেদন করা হয়েছিল পরিবারের পক্ষ থেকে। কিন্তু মুক্তি প্রদানের ক্ষেত্রে শর্তের কথা উল্লেখ করে প্রতিবারই তা নাকচ করে দিয়েছে সরকার। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাজা হলে কারাগারে যেতে হয় সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে। পরে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলাতেও তাঁর সাজার রায় আসে। দেশে করোনাভাইরাস মহামারি শুরুর পর খালেদা জিয়ার পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ তাঁকে নির্বাহী আদেশে সাময়িক মুক্তি দেয় সরকার। শর্ত দেওয়া হয়, তাঁকে দেশেই থাকতে হবে এবং বিদেশে যাওয়া যাবে না। কারাগার থেকে বেরিয়ে খালেদা জিয়া গুলশানের বাসা ফিরোজায় ওঠেন, এখন সেখানেই তিনি থাকছেন। ২০২১ সালের এপ্রিলে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর তাঁকে ছয় দফায় এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে হয়েছে।

 

সর্বশেষ খবর