বৃহস্পতিবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
টিআইবির প্রতিবেদন

দুর্নীতি সবচেয়ে বেশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থায়

নিজস্ব প্রতিবেদক

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা ২০২১ সালে বাংলাদেশের দুর্নীতিগ্রস্ত খাত হিসেবে শীর্ষে রয়েছে বলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) জানিয়েছে। শীর্ষ তিনে থাকা অন্য দুটি সংস্থা হলো পাসপোর্ট ও বিআরটিএ। এই তিন খাতে ঘুষও নেওয়া হয়েছে সবচেয়ে বেশি। এরপর রয়েছে বিচারিক সেবা, ভূমিসেবা, শিক্ষা, (সরকারি ও এমপিওভুক্ত) স্বাস্থ্য। গতকাল রাজধানীর ধানমন্ডিতে টিআইবি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক জরিপ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায় সংস্থাটি। ২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২১ সালের নভেম্বর পর্যন্ত সময়ের সেবার ওপর এই জরিপ করা হয়। প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সেবা খাতে দুর্নীতিতে কিছু ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন এলেও সার্বিক তথ্য উদ্বেগজনক। বিচারিক খাতের দুর্নীতিও উদ্বেগজনক। যারা অনিময় করছেন, তারা ঘুষকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করেছেন। যারা দিচ্ছেন তারা জীবনযাপনের অংশ করে নিয়েছেন। ২০২১ সালের খানা জরিপে দেখা যায়, সারা দেশে জরিপকৃত খানাগুলোর ৯৯ দশমিক ৫ শতাংশ কোনো না কোনো খাত থেকে সেবা নিয়েছে এবং সেবাগ্রহণকারী খানার ৭০ দশমিক ৯ শতাংশ সেবা নিতে গিয়ে কোনো না কোনো দুর্নীতির শিকার হয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার কাছ থেকে সেবাগ্রহণকারী খানাগুলোর দুর্নীতির শিকার হওয়ার মাত্রা ছিল সর্বাধিক ৭৪ দশমিক ৪ শতাংশ। দুর্নীতির মাত্রায় দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে পাসপোর্ট ৭০ দশমিক ৫ শতাংশ ও বিআরটিএ ৬৮ দশমিক ৩ শতাংশ। বিচারিক সেবা ৫৬ দশমিক ৮ শতাংশ, স্বাস্থ্য ৪৮ দশমিক ৭ শতাংশ, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান ৪৬ দশমিক ৬ শতাংশ এবং ভূমির ৪৬ দশমিক ৩ শতাংশের মতো খাতে সেবাগ্রহীতা খানাগুলো দুর্নীতির শিকার হয়। এতে বলা হয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার কাছ থেকে সেবা নিতে গিয়ে সেবাগ্রহণকারী খানার ৭৪ দশমিক ৪ শতাংশ কোনো না কোনো ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতির শিকার হয়েছে। গ্রামাঞ্চলে এ হার ৭২ দশমিক ৭ শতাংশ এবং শহরাঞ্চলে ৭৫ দশমিক ২ শতাংশ। সেবাগ্রহণকারী খানার মধ্যে ৫৫ দশমিক ৭ শতাংশ ঘুষ দিয়েছে বা দিতে বাধ্য হয়েছে। এ ছাড়া সেবাগ্রহণকারী খানাগুলো অসদাচরণ শিকার ১১.৯ শতাংশ, ভয়ভীতির শিকার ৮ শতাংশ, মিথ্যা মামলায় জড়ানো ৫ শতাংশ, সাধারণ ডায়েরি বা এজাহার গ্রহণে অবহেলা বা সময়ক্ষেপণ ৪.১ শতাংশ, অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যবস্থা না নেওয়া/সাড়া না দেওয়া ৩.৬ শতাংশ অনিয়ম ও দুর্নীতির শিকার হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা থেকে সেবা নিতে গিয়ে যেসব খানা ঘুষ দিয়েছে বা দিতে বাধ্য হয়েছে তাদের গড়ে ৬ হাজার ৬৯৮ টাকা দিতে হয়েছে।

এসব দুর্নীতি থেকে উত্তরণে টিআইবির ১০টি সুপারিশ-

১. বিভিন্ন সেবাখাতে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের অবস্থান ও পরিচয় নির্বিশেষে আইনানুগভাবে জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। ২. সেবাগ্রহীতার সঙ্গে সেবাদাতার প্রত্যক্ষ যোগাযোগ হ্রাসে সব সেবা ডিজিটালাইজড করতে হবে। সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানে ‘ওয়ানস্টপ সার্ভিস’ চালু করতে হবে এবং তার প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। ৩. সেবাপ্রদানকারী প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে সেবাপ্রদানকারীদের আচরণগত বিষয়গুলো জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশলের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রণয়ন ও কার্যকর করতে হবে। ৪. বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সেবাদানের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পেশাগত মানদন্ডের ওপর ভিত্তি করে পুরস্কার ও শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের শুদ্ধাচার পুরস্কার দেওয়া বন্ধ করতে হবে। ৫. সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বৃদ্ধির লক্ষ্যে গণশুনানির মতো জনগণের অংশগ্রহণমূলক কার্যক্রম নিশ্চিত করতে হবে। ৬. সংশ্লিষ্ট সেবাখাতে নাগরিক সনদে সেবামূল্য সম্পর্কিত তথ্য হালনাগাদ করতে হবে এবং তা দৃষ্টিগোচর স্থানে স্থাপন করতে হবে। প্রতিষ্ঠানের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কার্যকর করতে হবে, যেখানে সাধারণ সেবাগ্রহীতার সক্রিয় অংশগ্রহণ থাকবে। ৭. সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ নিরসন প্রক্রিয়া (জিআরএস) সম্পর্কে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে। ৮. যেসব খাতে জনবল, অবকাঠামো ও লজিস্টিকসের কারণে সেবাদান ব্যাহত হয়, সেসব খাতে বিদ্যমান ঘাটতি দূর করতে হবে। ৯. দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনগণের সচেতনতা ও অংশগ্রহণ বাড়াানোর জন্য সামাজিক আন্দোলনের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। ১০. দুর্নীতি প্রতিরোধে সব পর্যায়ে রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও তার কার্যকর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।

সর্বশেষ খবর