বৃহস্পতিবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

ব্যালটে ভোটে লুটতরাজ হয়

নিজস্ব প্রতিবেদক

ব্যালটে ভোটে লুটতরাজ হয়

নির্বাচন কমিশনে গিয়ে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ভুল-ত্রুটি প্রমাণ করার জন্য চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান হাবিব খান। তিনি বলেছেন, চ্যালেঞ্জ যদি করতেই হয়, সংবাদ সম্মেলনে কেন? আমাদের (ইসিতে) এখানে এসে চ্যালেঞ্জ করুক। আমরা তো চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিলাম। গতকাল ইভিএমে ভোট গ্রহণের ত্রুটি নিয়ে সুজনের সংবাদ সম্মেলনের বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তিনি এসব কথা বলেন। এ ছাড়া ব্যালট পেপারে ভোট হলে লুটতরাজ-গ-গোল ও লোকজন মারা যায় বলেও উল্লেখ করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের অনেকেই থাকে যারা ঘোলা পানিতে শিকার করতে চায়। একটা সংকট তৈরি করতে চায়। সরকারি দল এবং বিরোধী দল থেকে অনেকেই তাদের আসনে ইভিএমে ভোট দেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছেন বলে জানান এই নির্বাচন কমিশনার। নির্বাচনে অনিয়ম, অবিচার, সন্ত্রাসীপনার প্রমাণ পেলে নির্বাচন বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।

গত ২৮ আগস্ট এক সংবাদ সম্মেলনে সুজনের পক্ষ থেকে বলা হয়- ইভিএমের অডিট কার্ড পরিবর্তন করে ভোটের ফলাফল পাল্টে দেওয়া সম্ভব। এ ছাড়া আঙুলের ছাপ না মিললে ভোট গ্রহণ কর্মকর্তার আঙুলের ছাপ দিয়ে ওভাররাইট করে ব্যালট ইউনিট ওপেন করার বিষয়টি নিয়েও প্রশ্ন থেকে যায়। ইভিএম নিয়ে সুজনের অভিযোগের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান হাবিব খান বলেছেন,  আমরা ইভিএম নিয়ে জাতীয় টেকনিক্যাল কমিটি, রাজনৈতিক দলের টেকনিক্যাল কমিটির সঙ্গে বসেছি। তাদেরও ডেকেছি। তারা কিন্তু আসেননি। আমরা পাঁচ মাস ধরে সময় দিয়েছি। কেন হঠাৎ করে এ সংবাদ সম্মেলন, উদ্দেশ্যটা কী?

তিনি বলেন, ‘তাদের (সুজনসহ অন্যরা) জন্য আমাদের দরজা সব সময় খোলা। তারা এক দিন না দশ দিন আসবেন, ভীতি কোথায়? আমি বুছতে পারি না। চ্যালেঞ্জ যদি করতেই হয়, সংবাদ সম্মেলনে কেন, আমাদের এখানে এসে চ্যালেঞ্জ করুক। আমরা তো চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিলাম। এত দেরিতে রিঅ্যাকশন কেন? আমার চেয়ে অনেক শিক্ষিত, অনেক অভিজ্ঞ ব্যক্তি তারা। অবশ্যই তারা যদি অনুভব করে, আমাদের এখানে এসে দেখাক। আমরা প্রমাণ করব এখানে কোনো কিছু নেই, বা আছে (তারা) দেখাক। সেই সৎ সাহস কেন থাকবে না? যে কোনো সময় কেউ আসতে পারেন।’ এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘একটা পর্যায় আছে না? আমরা পাঁচ মাস ধরে সুযোগ দিলাম এবং আমরা চ্যালেঞ্জ করছি। যারা প্রস্তুত কারক প্রতিষ্ঠান তারা চ্যালেঞ্জ করছে এবং কেউ আসল না। হঠাৎ করে কেন? উদ্দেশ্যটা কী? এটা আমি বুঝতে পারি না।’ তিনি বলেন, ‘আমরা এত সৎ সাহস নিয়ে যখন যাচ্ছি। আপনারা এটাও দেখেছেন- যখন ব্যালটে হয়, তখন কীভাবে লুটতরাজ-গ-গোল, কতজন মারা যায়। ৪০০ নির্বাচন করলাম কয়জন মারা গেছে? কোথাও খবর পেয়েছেন, অরাজকতার কথা, সন্ত্রাসীপনার কথা? পাননি।’ 

তিনি বলেন, আমাদের মধ্যে অসততা, অস্বচ্ছতা, পক্ষপাতিত্ব যদি চোখে পড়ে, প্লিজ লেট মি নো। আমাকে জানান, তার প্রতিকার, জবাব দিয়ে তৃপ্ত করে ছাড়ব। কাজ করতে গেলে ভুল হতে পারে। একটা ইচ্ছাকৃত ভুল, আরেকটা হচ্ছে অনিচ্ছাকৃত ভুল। তিনি বলেন, আপনারা আমাদের পর্যবেক্ষণ করেন। সুন্দর, স্বচ্ছ, সব দলের অংশগ্রহণে একটি ভালো নির্বাচন দিতে পারি কি না।

তিনি বলেন, জনগণের আস্থা অবশ্যই আসবে। রাজনৈতিক দল বা জনগণের দুটি কারণে অনাস্থা হতে পারে। একটি হচ্ছে রাজনৈতিক কারণে। অন্যটি অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে হতে পারে। আমি অতীত নিয়ে কথা বলছে চাই না। অতীত থেকে আমরা শিক্ষা নেব। ভবিষ্যৎ সুন্দর হবে, এটা গ্যারান্টেড। আগামীতে সব সিটি করপোরেশন এবং গাইবান্ধায় উপ-নির্বাচনসহ যেখানে ইভিএম হবে। সেখানেই ভোটাররা একে ভালো বলবে বলেও মনে করেন তিনি।

এক প্রশ্নের জবাবে এই কমিশনার বলেন, ‘আমাদের দেশের অনেকেই থাকে যারা ঘোলা পানিতে শিকার করতে চায়। একটা সংকট তৈরি করতে চায়। আমার কাছে ব্যক্তিগতভাবে সরকারি দল এবং বিরোধী দল থেকে অনেকেই অনুরোধ জানিয়েছে তাদের আসনে ইভিএমে ভোট দেওয়ার জন্য। আবার কেউ কেউ আমাকে ইভিএম ‘দিয়েন না, আমার এলাকার লোকজন অশিক্ষিত।’ বিদেশের সন্তানের সঙ্গে মোবাইলে ভিডিও কলে যদি কথা বলতে পারে, তাহলে দুটি বোতাম টিপে ইভিএমে ভোট দিতে পারবে না, এটা বিশ্বাস করি না। কাজেই এটা (ইভিএম না চাওয়াটা)  অসৎ উদ্দেশ্য। আহসান হাবিব খান বলেন, ইভিএমে আঙুলের ছাপ না মিললেও ভোটারের পরিচয় শনাক্তের ব্যবস্থা আছে। অনেক সময় কিছুটা ভোট স্লো হয়, আঙুলের ছাপ না মিলতে পারে। আঙুলের ছাপ না মিললেও যখন নম্বরটা দেওয়া হয়, তখন কিন্তু ভোটারের পরিচয় মেলে। আঙুলের ছাপ না মিললে অভাররাইট করার জন্য একটা ছোট্ট ক্ষমতা দেওয়া হয়। তা কিন্তু সংরক্ষিত থাকছে। নির্বাচনে প্রযুক্তি নিয়ে আমাদের চলতে হবে।

আহসান হাবিব বলেন, ‘অনেক শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিবর্গ তারা। তাদের সন্দেহ থাকলে কাছে আসেন, দেখেন। প্রত্যেকটা পর্বে পর্বে আমরা ইভিএম দেখার ব্যবস্থা করেছি, তাদের থাকতে বলেছি।’ ইভিএমে কারচুপি প্রমাণ করতে পারলে কী হবে প্রশ্নে তিনি বলেন, কারচুপির প্রমাণ করতে পারলে তখন সিদ্ধান্ত হবে। প্রমাণ করুক, তখন দেখা যাবে। তিনি বলেন, ‘হাতের পাঁচ আঙুল যেমন সমান না, সেরকম কেউ ঘোলা করতেও পারেন।

রিটার্নিং অফিসার কারা হবেন প্রশ্নে তিনি বলেন, যারা সততার সঙ্গে, ইমানের সঙ্গে কাজ করবে তাদের নিয়োগ দেব। অবশ্যই ডিসিরা থাকবেন, আর কিছু হবেন আমাদের (ইসি) নিজস্ব কর্মকর্তা, কিছু হবেন অন্যান্য ক্যাডারের কর্মকর্তারা। সংসদ নির্বাচনে সিসিক্যামেরা বিষয় তিনি বলেন, সিসিক্যামেরা হচ্ছে সন্ত্রাসীদের জন্য ত্রাস। সিসিক্যামেরা রাখার আমাদের ঐকান্তিক ইচ্ছা। আমাদের ইচ্ছা আছে সব কেন্দ্রে বসানোর। এ জন্য বিশাল অর্থের প্রয়োজন হবে। এত ক্যামেরা সাপোর্ট দেওয়ার মতো আছে কি না আমরা যাচাই-বাছাই করছি। ৩০০ আসনে সিসিক্যামেরা দেওয়ার জন্য বাজেট তৈরি করে সরকারের কাছে প্রস্তাব দেওয়া হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। তিনি বলেন, প্রত্যেকটি জনগণের মোবাইল আমাদের ক্যামেরা। শুধু প্রমাণসহ কেউ পাঠাক- কোনো প্রকার অনিয়ম, অবিচার, সন্ত্রাসীপনার (তথ্য), তবে নির্বাচন বন্ধ। টোটাল স্থগিত থাকবে। পরে একটা একটা করে নির্বাচন হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর