কুমিল্লা-১০ আসনের দৈর্ঘ্য প্রায় ৯০ কিলোমিটার। নাঙ্গলকোট, সদর দক্ষিণ ও লালমাই উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসন। ভোটার সংখ্যা ৫ লাখের বেশি। এ আসনের সীমানা পরিবর্তনের দাবি দীর্ঘদিনের। মামলাও রয়েছে। শুধু কুমিল্লা-১০ আসন নয়, তিনটি উপজেলা নিয়ে গঠিত সুনামগঞ্জ-১ আসন। এ আসনে ধর্মপাশা, তাহিরপুর এবং জামালগঞ্জ উপজেলা; সিলেট-৩ আসনে দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত। আবার ঠাকুরগাঁও-১ আসন গঠিত হয়েছে শুধু সদর উপজেলা নিয়ে। কিন্তু এ জেলার রাণীশংকৈল উপজেলাকে ভেঙে ঠাকুরগাঁও-২ ও ৩ আসনে দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া ঢাকা জেলায় এখন ২০টি সংসদীয় আসন। ২০১১ সালে ঢাকার জনসংখ্যা ছিল ১ কোটি ২০ লাখ। এবারের জনশুমারিতে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৪৭ লাখ। বর্তমানে প্রতিটি আসনের জনসংখ্যা গড়ে ৭ লাখ ৩৫ হাজার। এর বিপরীতে দক্ষিণের জেলা ঝালকাঠিতে সংসদীয় আসন মাত্র দুটি। নতুন শুমারিতে এ জেলায় লোকসংখ্যা ৬ লাখ ৬১ হাজার। প্রতিটি আসনের বিপরীতে জনসংখ্যা গড়ে ৩ লাখ ৩০ হাজার ৫০০।
বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বিদ্যমান সীমানায় ১৫০টি আসনে ভোটারের ভারসাম্য নেই। ৩৭টি আসনে আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষা হয়নি। এক উপজেলাকে খণ্ড-খণ্ড করে বিভিন্ন আসনে দেওয়া হয়েছে। ফলে একই উপজেলায় একাধিক সংসদ সদস্য থাকায় জনগণ অবহেলার শিকার হচ্ছে। বিগত একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ৬৪ জেলার অধিকাংশ আসন নিয়েই পক্ষে-বিপক্ষে আবেদন করেছিলেন নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। সংসদ সদস্য থেকে শুরু করে সাধারণ নাগরিকরাও ছিলেন আবেদনকারীর তালিকায়। তবে বিগত নির্বাচন কমিশন মাত্র ১২ জেলার ২৫টি আসনের সীমানা আংশিক পরিবর্তন করে। বিশ্লেষকরা বলছেন, সংসদীয় আসনের সীমানা সংকটের নিরসন দীর্ঘদিনেও হয়নি। বিদায়ী হুদা কমিশনও সীমানা জটিলতা জিয়ে রেখে বিদায় নিয়েছে। সীমানা জটিলতা নিয়ে অনেক মামলা-অভিযোগ জমা পড়েছিল। কিন্তু কিছুই আমলে নেয়নি তারা। অনেক এলাকার আসন পরিবর্তনের দাবি দীর্ঘদিনের। এখনো অনেক আসনের সীমানা ৯০ কিলোমিটার রয়েছে। তিন-চারটি উপজেলা নিয়েও রয়েছে একটি আসন। আবার একটি উপজেলা ও স্বল্প সংখ্যক ভোটার নিয়ে রয়েছে অনেক আসন। বিশ্লেষকরা বলেছেন, নির্বাচন কমিশন আসনের সীমানা নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রশাসনিক অখণ্ড তাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়ায় ১৫০টি আসন ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছে। কোনো কোনো আসনের জনসংখ্যার তারতম্য ২৫ শতাংশের বেশি। এ আসনগুলোর পরিবর্তন এসেছিল ২০০৮ সালে। পরে আসনের সীমানায় তেমন পরিবর্তন আসেনি। এদিকে পুরনো সীমানা বহাল রেখে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সুযোগ রয়েছে সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণের নতুন আইনে। তাই আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে সংসদীয় আসনের সীমানা জটিলতা নিরসন হবে কি না তা নিয়ে অনেকেই দ্বিধায় রয়েছেন। বিশেষজ্ঞারা বলছেন, আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে যদি সীমানা জটিলতা নিরসন না করা হয় তবে নির্বাচন নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। আর সীমানা জটিলতা নিরসন না করলে আসনভিত্তিক জনসংখ্যায় বেশি তারতম্য থাকলে সরকারের উন্নয়ন বরাদ্দ থেকে জনগণ বঞ্চিত হবে। ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, বিদ্যমান সীমানায় ১৫০টির মতো আসনে ভোটার ভারসাম্য নেই। কুমিল্লা ও ময়মনসিংহ জেলায় রয়েছে ১১টি করে সংসদীয় আসন। নতুন শুমারিতে কুমিল্লার জনসংখ্যা ৫৩ লাখ ৮৭ হাজার এবং ময়মনসিংহের জনসংখ্যা ৫১ লাখ। ৪০ লাখ জনসংখ্যার টাঙ্গাইলে আছে আটটি আসন। অন্যদিকে গাজীপুরে ৫২ লাখ ৬৩ হাজার এবং নারায়ণগঞ্জে ৩৯ লাখ জনসংখ্যায় উভয় জেলায় সংসদীয় আসন পাঁচটি করে। একইভাবে চুয়াডাঙ্গায় ১২ লাখের বেশি জনসংখ্যায় আসন রয়েছে দুটি। এ ছাড়া বিদ্যমান সীমানায় ৩৭টি আসনে আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষা করা হয়নি। এসব আসনে এক উপজেলার এক বা একাধিক ইউনিয়নকে অন্য উপজেলার সঙ্গে যুক্ত করে একটি সংসদীয় আসন করা হয়েছে। ফলে এসব ইউনিয়নের বাসিন্দারা স্থানীয় সংসদ সদস্যদের নানা অবহেলার শিকার হন বলে অভিযোগ রয়েছে। এমন সংসদীয় আসনের মধ্যে রয়েছে- সিরাজগঞ্জ-১ ও ২, পাবনা-১ ও ২, চুয়াডাঙ্গা-১ ও ২, ঝিনাইদহ-২ ও ৪, যশোর-৩ ও ৪, নড়াইল-১ ও ২, খুলনা-৩ ও ৪, সাতক্ষীরা ৩ ও ৪, মানিকগঞ্জ-২ ও ৩, ঢাকা-২ ও ১৯, গাজীপুর-২ ও ৫, নরসিংদী ১ ও ২, ফরিদপুর-৪, গোপালগঞ্জ-২ ও ৫, মাদারীপুর-২ ও ৩, নোয়াখালী-১ ও ২ এবং চট্টগ্রাম-৭, ১৪ ও ১৫, ঠাকুরগাঁও-২ ও ৩ আসন। ২০০১ সালের নির্বাচনের সময় ১৯৯৫ সালের সীমানার গেজেট বহাল রাখা হয়েছিল। তবে ১৯৮৪, ১৯৯১ ও ২০০৮ সালে ১৩৩ সংসদীয় আসনে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছিল। দশম সংসদে ছয়টি নীতিমালা অনুসরণ করে ৫০টি আসনে ছোটখাটো পরিবর্তন করে আসন পুনর্বিন্যাস করা হয়। সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণের বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা প্রাথমিক কিছু কাজ করছি। জনশুমারির প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে। চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশের পরই কমিশন বৈঠকে বসে এ বিষয়ে করণীয় নির্ধারণ করবে।