শনিবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

জেলা পরিষদ ভোটে ব্যস্ত আওয়ামী লীগ

♦ জেলা শহর ছেড়ে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা এখন ঢাকায়, করছেন লবিং তদবির ♦ ১০ সেপ্টেম্বর জানা যাবে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী।

রফিকুল ইসলাম রনি

জেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করায় জমজমাট হতে শুরু করেছে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়। আগামী ৪ সেপ্টেম্বর থেকে দলীয় মনোনয়ন ফরম বিতরণ ও গ্রহণ শুরু করার কথা থাকলেও সারা দেশ থেকে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতারা এখন ঢাকায় অবস্থান করছেন। কেন্দ্রীয় নেতারাও ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন জেলা পরিষদ ভোট নিয়ে। সম্ভাব্য প্রার্থীদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ দেওয়ার পাশাপাশি যোগ্য প্রার্থীর তালিকা করছেন তারা।

দলীয় সূত্রমতে, এবার জেলা পরিষদ নির্বাচনে দলের দুঃসময়ের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের মূল্যায়ন করা হবে। পুরনোদের পাশাপাশি আসবে অনেক নতুন মুখ। বর্তমান জেলা পরিষদের প্রশাসক, যারা এর আগে গত পাঁচ বছর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং যাদের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে, তারাই দলীয় মনোনয়ন পেতে যাচ্ছেন। আর যারা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে বিতর্কিত হয়েছেন, তারা মনোনয়ন বঞ্চিত হবেন। 

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে যাদের মনোনয়ন দেওয়া হবে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা তাদের সবাইকে দীর্ঘদিন থেকে চেনেন ও জানেন। যাদের বিভিন্ন সময়ে এমপি মনোনয়ন দেওয়া সম্ভব হয়নি, অথবা দলেও ভালো মূল্যায়ন করা যায়নি, কিন্তু তাদের ত্যাগ ও যোগ্যতা রয়েছে, এমন ব্যক্তিকেই চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন দেওয়া হবে। তিনি বলেন, ‘যারা চেয়ারম্যান ছিলেন কিন্তু নানা কারণে দলের আস্থা হারিয়েছেন তাদের কোনোভাবে আর মনোনয়ন দেবেন না দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা।’  আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আগামী ৪ সেপ্টেম্বর থেকে ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জেলা পরিষদে চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন ফরম বিতরণ ও জমা গ্রহণ করা হবে। আগামী ১০ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবনে দলের সংসদীয় বোর্ড ও স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের সভায় নাম চূড়ান্ত করা হবে।’

নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী, ১৭ অক্টোবর ৬১ জেলায় চেয়ারম্যান পদে ভোট গ্রহণ হবে। এসব জেলায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট গ্রহণ করা হবে। নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ১৫ সেপ্টেম্বর। বাছাই ১৮ সেপ্টেম্বর। বাছাইয়ের বিরুদ্ধে আপিল করা যাবে ১৯ থেকে ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর। প্রতীক বরাদ্দ ২৬ সেপ্টেম্বর। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কয়েকজন প্রভাবশালী নেতার বাসা ও অফিস ঘুরে দেখা গেছে, জেলা পরিষদের সম্ভাব্য প্রার্থীদের ভিড় লেগে আছে। জেলার প্রবীণ-নবীন নেতারা দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে ধরনা দিচ্ছেন। অতীতে আওয়ামী লীগে তার কী কী অবদান সেগুলো তুলে ধরছেন। বিশেষ করে ধানমন্ডি আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিকাল থেকে জমজমাট হতে শুরু করেছে। সারা দেশ থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা ভিড় করছেন সেখানে। কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে দেখা করার পাশাপাশি জীবন বৃত্তান্ত জমা দিচ্ছেন কেউ কেউ। গতকাল সন্ধ্যায় ধানমন্ডি কার্যালয়ে লক্ষ্য করা যায়, অন্য দিনের তুলনায় নেতা-কর্মীর সংখ্যা দ্বিগুণ থেকে তিন গুণ। অধিকাংশ বিভিন্ন জেলা থেকে আগত। দলবল নিয়ে দলীয় সভানেত্রীর কার্যালয়ে আসছেন তারা। মনোনয়নপ্রত্যাশী একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভোটের আগে তারা দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত হতে চান। দলীয় মনোনয়ন পাওয়া গেলেই চেয়ারম্যান পদে বিজয় অনেকটা নিশ্চিত। সে কারণেই তারা এখন লবিং করছেন। কেউ কেউ জেলার যারা ভোটার রয়েছেন, তাদের স্বাক্ষর নিয়ে দলের মনোনয়ন পেতে দলীয় সভানেত্রীর কাছে আবেদন করছেন। এ রকম একাধিক আবেদন জমা পড়েছে বলে দলীয় সভানেত্রীর কার্যালয় সূত্র জানায়। গতকাল ধানমন্ডি আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে দেখা হয় সিরাজগঞ্জ জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপ্রত্যাশী ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট কে এম হোসেন আলী হাসানের সঙ্গে। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছি। জাতির পিতার হত্যার পর কঠিন দুঃসময়ে দলের হাল ধরেছি। জিয়া-এরশাদ-খালেদা জিয়ার নির্যাতন, অনেক কষ্ট সহ্য করেছি। এখন শেষ বয়সে বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে দলের মনোনয়ন চাইব। সব দিক বিবেচনা করে নেত্রী যে সিদ্ধান্ত দেবেন তা মাথা পেতে মেনে নেব।’   

বরগুনা জেলা পরিষদ থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মোতালেব মৃধা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমার বাবা একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা। আমি নিজেও বীর মুক্তিযোদ্ধা। ৫০ বছর ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। জাতির পিতার হত্যার পর বরগুনায় প্রথম প্রতিবাদ করে দীর্ঘদিন জেল খেটেছি। তিনি বলেন, ‘স্থানীয় সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তর হচ্ছে জেলা পরিষদ। এখানে কাজ করার অনেক সুযোগ রয়েছে। মানুষের জন্য কাজ করতে চাই। এ জন্য দলীয় সভানেত্রীর কাছে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন চাইব।’ আইন অনুযায়ী, সংশ্লিষ্ট জেলার উপজেলা পরিষদ, ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা জেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করে থাকেন। তাদের প্রত্যক্ষ ভোটেই নির্বাচিত হন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান।

৭টি উপজেলা নিয়ে গঠিত দক্ষিণের অন্যতম জেলা পিরোজপুর, যেখানে জেলা পরিষদ নির্বাচনে মোট ভোটার রয়েছেন ৭৪৭ জন। এর মধ্যে ৭০৪ জন ভোটারই জেলা পরিষদের বর্তমান প্রশাসক মো. মহিউদ্দিন মহারাজের পক্ষে স্বাক্ষর দিয়ে লিখিতভাবে সমর্থন জানিয়েছেন। আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেতে দলের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে স্বাক্ষর সংবলিত একটি বই পাঠিয়েছেন বলেও ধানমন্ডি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে দক্ষ ও যোগ্য ব্যক্তিকেই মনোনয়ন দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতির পিতার হত্যার পর যারা দলের হাল ধরে ছিলেন, নির্যাতন, কষ্ট সহ্য করেছেন, যারা বুকে পাথর বেঁধে দল করেছেন সেসব নেতা জীবিত থাকলে এবং শারীরিকভাবে সক্ষম হলে দলীয় মনোনয়নে প্রাধান্য দেবেন তিনি। জেলা পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষে ব্যস্ততা বেড়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, জেলায় যারাই মনোনয়ন চান তারা অধিকাংশই প্রবীণ ব্যক্তি। প্রত্যেককেই দলীয় সভানেত্রী চেনেন। তারপরও তারা কেউ কেউ আমাদের কাছে দেখা-সাক্ষাৎ করতে আসেন। নেতা-কর্মীরা আসবেন- এটাই স্বাভাবিক।

 

সর্বশেষ খবর