সোমবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

ইভিএমে ৮ হাজার কোটি টাকা

গোলাম রাব্বানী

ইভিএমে ৮ হাজার কোটি টাকা

আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে সর্বোচ্চ ১৫০ আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট গ্রহণের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন। এ জন্য আরও ২ লাখ নতুন ইভিএম ক্রয়ে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকার নতুন প্রকল্প হাতে নিচ্ছে সাংবিধানিক এ প্রতিষ্ঠানটি। এ প্রকল্পের আওতায় কেনা হবে নতুন ২ লাখ ইভিএম। প্রতিটি ইভিএম মেশিনের দাম হবে প্রায় আড়াই লাখ টাকার বেশি। এ ছাড়া ইভিএম সংরক্ষণে প্রকল্পের অধীনে ১০ অঞ্চলে ৬০-৬৫ হাজার স্কয়ার ফিটের ওয়্যারহাউস নির্মাণ; ১০০০ থেকে ১২০০ জন জনবল নিয়োগ; গাড়ি ক্রয়, ইভিএম পরিচালনায় ২ থেকে আড়াই লাখ দক্ষ জনবল তৈরির প্রশিক্ষণ ও দেশব্যাপী ইভিএমের ব্যাপক প্রচারণার জন্য বরাদ্দ রাখা হচ্ছে এ প্রকল্পে। ৮ সেপ্টেম্বর এ প্রকল্পের খসড়া নির্বাচন কমিশনের কাছে উপস্থাপন করা হবে। কমিশন অনুমোদন করলে তা পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হবে।  

ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, বিগত সময়ে প্রতিটি ইভিএম কেনা হয়েছিল ২ হাজার ৩৮৭ ডলারে। তখন ডলারের মূল্য ৮৪ টাকা হিসেবে একটি ইভিএম ইউনিটের মূল্য ছিল ২ লাখ ৫ হাজার টাকা (ভ্যাট-ট্যাক্সসহ)। এ ছাড়া একটি ইভিএম ইউনিটের অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে হয়েছিল আরও ২৫ হাজার টাকার। সব মিলে তখন একটি ইভিএমের মূল্য ছিল ২ লাখ ৩০ হাজার টাকার বেশি। এবারও প্রতিটি ইউনিটের সম্ভাব্য মূল্য ধরা হচ্ছে ২ হাজার ৩৮৭ ডলার। এক্ষেত্রে ডলারের মূল্য ৯৫-৯৬ টাকা হিসাবে প্রতি ইউনিটের মূল্য হতে পারে ২ লাখ ২৬ হাজার ৭৬৫ টাকা অথবা ২ লাখ ২৯ হাজার ১৫২ টাকা। আর প্রতিটি ইউনিটের সঙ্গে অন্যান্য জিনিস প্রয়োজন হবে আরও প্রায় ২৫ হাজার টাকার। এর বাইরে প্রতি ইউনিটের মূল্যের সঙ্গে যুক্ত হবে ভ্যাট-ট্যাক্স। সব মিলে একটি ইভিএম মেশিন তথা প্রতিটি ইভিএম ইউনিটের মূল্য আড়াই লাখ টাকার বেশি হতে পারে। ইভিএমের নতুন প্রকল্পের সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হচ্ছে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ২ লাখ ইভিএম ক্রয়ে খরচ হবে ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি। এ ছাড়া ১০টি ওয়্যারহাউস নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণ-ভবন নির্মাণ, জনবল নিয়োগ, গাড়ি ক্রয় ও দেশব্যাপী ইভিএমের ক্যাম্পেইন, ইভিএম পরিচালনায় দক্ষ জনবল তৈরির প্রশিক্ষণ বাবদ খরচ হবে আরও প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা। তবে সব মিলে এ প্রকল্পের চূড়ান্ত ব্যয় কমতে ও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।  ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) কর্নেল সৈয়দ রাকিবুল হাসান বলেছেন, ইসি সচিবালয় থেকে একটি ডিপিপি প্রস্তুত করতে বলেছে। আমরা প্রস্তুত করছি। ইভিএমের ইউনিট মূল্য আগেরটাই থাকছে। তবে তার সঙ্গে ডলারের মূল্য বেড়েছে সেটা এবং ভ্যাট-ট্যাক্স অ্যাড হবে। সব মিলে অল্প কিছু মূল্য বাড়বে।  প্রকল্পে কী কী থাকছে প্রশ্নে তিনি বলেন, ইসি সচিবালয় যাতে নিজস্ব জনবল ও ক্যাপাসিটিতে ইভিএমের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ, ইভিএম সংরক্ষণ করতে পারে সে বিষয়গুলো থাকছে। এ জন্য জনবল প্রয়োজন, ওয়্যারহাউস প্রয়োজন হবে। তিনি বলেন, আগের দেড় লাখ এবং নতুন প্রকল্পে কেনা হবে ২ লাখ, সব মিলে সাড়ে ৩ লাখ ইভিএম হবে ইসির হাতে, তা সংরক্ষণ করতে হবে। এ জন্য ১০ অঞ্চলে ১০টি ওয়্যারহাউস নির্মাণের প্রাথমিক চিন্তা রয়েছে। একটি ওয়্যারহাউসে ৪০-৪৫ হাজার ইভিএম সংরক্ষণ করা যাবে, সেরকম নকশা করা হচ্ছে। এ জন্য গাড়িও প্রয়োজন হবে। তবে কত গাড়ি প্রয়োজন হবে তা পরে নির্ধারণ হবে। সম্ভাব্য ব্যয়ের বিষয়ে তিনি বলেন, বিগত প্রকল্পের বরাদ্দ ছিল ৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। এবার তার চেয়ে কিছু টাকা বাড়বে। ইউনিট মূল্য নির্ধারণে বাজার কমিটি কাজ করছে। বিগত প্রকল্পে ইউনিট (প্রতিটি ইভিএম) মূল্য ছিল ২ লাখ ৫ হাজার টাকা। এটাকে বর্তমান বাজারমূল্যের সঙ্গে সমন্বয় করা হবে। এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১৫০ আসনে ইভিএমে ভোট করতে হলে আরও ২ লাখ ইভিএম কিনতে হবে। ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, সংসদে মোট সাধারণ আসন রয়েছে ৩০০টি। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনে ছয়টি আসনে ইভিএমে ভোট গ্রহণ হয়েছিল। বর্তমানে নির্বাচন কমিশনের হাতে দেড় লাখ ইভিএম রয়েছে, যা দিয়ে ৭০-৭৫টি আসনে ভোট গ্রহণ সম্ভব হবে। তবে ১৫০ আসনে ইভিএমে ভোট করতে হলেও আরও ২ লাখ ইভিএম ক্রয় করতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। আগামী বছরের ডিসেম্বর বা ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে নির্বাচন কমিশন। এক্ষেত্রে আগামী বছরের নভেম্বরের মাঝামাঝিতে তফসিল ঘোষণা হতে পারে। ইসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, বিগত একাদশ সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনে দেশে ভোট কেন্দ্র ছিল ৪০ হাজার ১৮৩টি। ভোটকক্ষ ছিল ২ লাখ ৭ হাজার ৩১২টি। এ প্রক্রিয়ায় ভোট গ্রহণ করতে প্রতি ভোটকক্ষের জন্য একটি ইভিএম প্রয়োজন হয়। যান্ত্রিক ত্রুটি বিবেচনায় রেখে প্রতি কেন্দ্রের জন্য মোট কক্ষের অর্ধেকসংখ্যক ইভিএম অতিরিক্ত সংরক্ষণ করা হয়। তবে প্রতি বছর ২ দশমিক ৫ শতাংশ হারে দেশে ভোটার বাড়ছে এবং পাঁচ বছরে প্রায় ১২ দশমিক ৫০ শতাংশ ভোটার বাড়তে পারে। এ ক্ষেত্রে কেন্দ্র ও ভোটকক্ষের সংখ্যাও বাড়বে আগামী সংসদ নির্বাচনে। ইসির প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী সংসদ নির্বাচনে ১৫০ আসনে ভোট গ্রহণের জন্য সাড়ে ৩ লাখ ইভিএমের প্রয়োজন হবে। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আর প্রথম সংসদ অধিবেশন বসে ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি। সংবিধান অনুযায়ী, সংসদের মেয়াদ প্রথম অধিবেশন থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর। সে হিসেবে ২০২৪ সালের ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত বর্তমান সংসদের মেয়াদ রয়েছে। নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে সংবিধানে সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের নব্বই দিনের কথা বলা হয়েছে। সেই হিসেবে ২০২৪ সালের ৩০ জানুয়ারির পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

কেনা সম্ভব না হলে ইভিএমে ভোট ৭০-৮০ আসনে : নতুন প্রকল্পের অধীনে যথাসময়ে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) কেনা সম্ভব্য না হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ৭০-৮০টি আসনে ইভিএমে ভোট হতে পারে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর। তিনি বলেছেন, সচিবালয় যথাসময়ে ইভিএম দিতে পারলে সর্বোচ্চ ১৫০ আসনে ভোটগ্রহণ করা হবে। না হলে ৭০-৮০টি আসনে ইভিএমে ভোট হবে। গতকাল নির্বাচন ভবনের নিজ দফতরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন তিনি।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর