সোমবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

লক্ষ্য আরও উন্নয়ন : প্রধানমন্ত্রী

বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব সেতু উদ্বোধন - বরিশাল-খুলনা দূরত্ব ১ ঘণ্টা কমল

নিজস্ব প্রতিবেদক

লক্ষ্য আরও উন্নয়ন : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের লক্ষ্য দেশকে আরও উন্নয়নের দিকে নিয়ে যাওয়া। দেশে উন্নয়নের যে অদম্য গতি সেটা অব্যাহত রাখতে চাই। সে জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করে একটি সমন্বিত যোগাযোগব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় সরকার কাজ করছে।

গতকাল সকালে পিরোজপুরের কচা নদীর ওপর নির্মিত বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব অষ্টম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁর কার্যালয়ের চামেলী হল থেকে অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সেতুটির উদ্বোধন ঘোষণা করেন। গতকাল (রবিবার) রাত ১২টা ১ মিনিটে সেতুটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। এই সেতু উদ্বোধনের ফলে বরিশালের সঙ্গে খুলনা বিভাগের সড়ক পথে যোগাযোগের আরেকটি দুয়ার খুলল। দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হওয়ায় সেতুটি ঘিরে উচ্ছ্বাসে ভাসছেন দুই তীরের মানুষ। সেতু হওয়ায় চলাচলে মানুষের ভোগান্তি শেষ হওয়ার পাশাপাশি ফেরি পারাপারে বাঁচবে সময়। অনুষ্ঠানে সেতুর দুই প্রান্তে পিরোজপুর সদর উপজেলার কুমিরমারা ও কাউখালী উপজেলার বেকুটিয়ায় দুটি প্যান্ডেলে উপস্থিত মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করেন প্রধানমন্ত্রী।   

অনুষ্ঠানে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং বাংলাদেশে চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বক্তৃতা করেন। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নূরী অনুষ্ঠানে একটি পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন করেন। প্রকল্পের ওপর একটি ভিডিও চিত্রও অনুষ্ঠানে প্রদর্শিত হয়। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।

এ উপলক্ষে বঙ্গমাতা সেতু এলাকায় পশ্চিম এবং পূর্বপাড়ে দুটি সমাবেশের আয়োজন করা হয়। পশ্চিমপাড়ে পিরোজপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম ও পূর্বপাড়ে সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রী পিরোজপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন মঞ্জু উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা জানি যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন, বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি একটি দেশের অগ্রগতির জন্য অপরিহার্য। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে আমরা এই বিষয়গুলো মাথায় রেখে কাজ করে যাচ্ছি। দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে তাঁর সরকারের উদ্যোগের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, আমরা চাই দেশের উন্নয়নের গতি অব্যাহত থাকুক। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চিত ছিল। কারণ তাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অনেক খরস্রোতা বড় বড় নদী পাড়ি দিয়ে জীবিকা ও চিকিৎসার জন্য রাজধানীতে আসতে হতো। আমি ১৯৯৬ সালে বরিশালের সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগের জন্য শিকারপুর-দোয়ারিকা সেতু নির্মাণ করে দিই এবং কীর্ত্তনখোলার ওপর ব্রিজ নির্মাণের কাজ হাতে নিই। শেখ হাসিনা বলেন, গাবখান ব্রিজও আমাদের সরকারেরই করা। পাশাপাশি উত্তরবঙ্গের সঙ্গে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নেও একের পর এক সেতু আমরা করে দিয়েছি। তিনি বলেন, পিরোজপুরের বেকুটিয়ায় কচা নদীর ওপর বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব অষ্টম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু উদ্বোধনের ফলে ঢাকার সঙ্গে পিরোজপুরের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে। তিনি বলেন, জনগণ পিরোজপুরের তাজা পেয়ারা এবং আমড়া রাজধানীতে বসেই পাবে। এ অঞ্চলের শীতল পাটিও বিখ্যাত।

 জেলার বাসিন্দারা অন্যদের পাশাপাশি খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প স্থাপন করতে পারে; যা জেলা ও অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিবর্তনে ব্যাপক অবদান রাখবে। দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার জন্য সরকারের পদক্ষেপের অংশ হিসেবে তারা পায়রা বন্দরের উন্নয়ন করবেন জানিয়ে তিনি বলেন, অর্থনৈতিক অগ্রগতি বাড়াতে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে আধুনিক পরিবহনব্যবস্থা গড়ে তোলাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে সরকার। দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ত্বরান্বিত করতে আমরা আধুনিক পরিবহনব্যবস্থার উন্নয়ন করছি।

চীনের অর্থায়নে সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ হওয়ায় দেশটির সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, চীন আমাদের সবসময় বন্ধুপ্রতীম দেশ। তাদের সহযোগিতায় সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ করতে পেয়েছি। তিনি আরও বলেন, ‘জাতির পিতা যেভাবে চেয়েছিলেন, একদিকে যোগাযোগব্যবস্থা অপরদিকে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আজকে তার সুফল আপনারা পাচ্ছেন। আমাদের লক্ষ্য দেশকে আরও উন্নয়নের দিকে নিয়ে যাওয়া। কারণ ২০০৮ সালে ভোট দিয়ে আপনারা জয়যুক্ত করেছেন। কাজেই দেশে মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা আমাদের কর্তব্য বলে মনে করি।

 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আর্থসামাজিক উন্নতিতে অনেক দূর এগিয়েছি। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে এবং বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিও অর্জন করতে পারবে। মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, কর্ণফুলী টানেলসহ বিভিন্ন উন্নয়ন পদক্ষেপের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, আমরা আধুনিক পরিবহনব্যবস্থা গড়ে তুলছি। এগুলো যখন কার্যকর হবে তখন আমাদের অর্থনীতি আরও গতিশীল হবে বলে মনে করি। দক্ষিণাঞ্চলের পর্যটন শিল্পের বিকাশে সাগর এবং বড় বড় নদীর পাশের যে সব সৌন্দর্যমি ত জায়গা রয়েছে সেগুলোকেও কাজে লাগানোর জন্য তাঁর সরকার পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অবহেলিত এই অঞ্চলের আর কোনো মানুষ অবহেলিত থাকবে না। তাদের আর্থ-সামাজিক উন্নতি হবে এবং নিজের পায়ে তারা দাঁড়াবে। তিনি বলেন, আপনাদের কাছে আমার অনুরোধ থাকবে এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে এবং আপনাদের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষকে আরও উৎপাদন মুখী হতে হবে। আমাদের গবেষণালব্ধ তরিতরকারি, ফল, মূল ও সবজি এখন সারা বছর উৎপাদিত হয়। সেগুলোর যেন আরও ব্যাপকভাবে উৎপাদন হয়, মৎস্য সম্পদ উৎপাদন বৃদ্ধি এবং বাজারজাত করারও বড় একটা সুযোগ আপনারা পেয়ে যাচ্ছেন। বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম এবং পণ্য আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় আমাদের নিজেদের ব্যবস্থা নিজেদেরই করতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের যুবসমাজকে বলব চাকরির পেছনে না ছুটে স্বপ্রণোদিত ব্যবসা-বাণিজ্য আপনাদের গড়ে তুলতে হবে, যাতে করে আপনারাই অপরকে চাকরি দিতে পারেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদ্যুৎ, পানি, জ্বালানির ব্যবহারে অনেক উন্নত দেশ যেখানে হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে আমাদেরও সতর্ক থাকতে হবে। বিদ্যুৎ ও পানির ব্যবহারে সবাইকে সাশ্রয়ী হতে হবে। এতে করে বিল যেমন কম আসবে তেমনি দেশের জন্যও মঙ্গলজনক হবে।

সর্বশেষ খবর