সোমবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

চলে গেলেন গানের কবি

সাংস্কৃতিক প্রতিবেদক

চলে গেলেন গানের কবি

গাজী মাজহারুল আনোয়ার

সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন একুশে পদক ও স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত কিংবদন্তি গীতিকার, কাহিনিকার এবং চলচ্চিত্র নির্মাতা গাজী মাজহারুল আনোয়ার। গতকাল সকাল ৬টায় নিজ বাসায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর। এই বরেণ্য সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী                 শেখ হাসিনা। শোকবার্তায় তাঁরা মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। গাজী মাজহারুল আনোয়ার স্ত্রী জোহরা গাজী, মেয়ে দিঠি আনোয়ার এবং ছেলে সরফরাজ আনোয়ার উপলসহ অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তিনি দীর্ঘদিন বার্ধক্যজনিত নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন। আজ বাদ আসর বনানী কবরস্থানে মায়ের কবরে সমাহিত করা হবে তাঁকে। এর আগে বেলা ১১টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মৃতদেহ রাখা হবে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য। এরপর বাদ জোহর বিএফডিসিতে প্রথম জানাজা ও গুলশানের আজাদ মসজিদে দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। তাঁর মৃতদেহ ইউনাইটেড হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়েছে। পারিবারিক সূত্র জানায়, মেয়ে দিঠি আনোয়ার আমেরিকা থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন।

গাজী মাজহারুল আনোয়ারের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের। মৃত্যুর খবর শুনে গুলশানে ইউনাইটেড হাসপাতালে ছুটে আসেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, সাবেক মন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, চলচ্চিত্র নায়ক উজ্জ্বল, বাপ্পারাজ, শাকিব খান, অনন্ত জলিল, সম্রাট, কণ্ঠশিল্পী মনির খানসহ চলচ্চিত্র ও সংগীতাঙ্গনের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।

১৯৪৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লার দাউদকান্দির তালেশ্বর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন কিংবদন্তি এই সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। বর্ণিল কর্মময় জীবনের অধিকারী গাজী মাজহারুল আনোয়ার সংগীত ও চলচ্চিত্রসহ শিল্প-সংস্কৃতির প্রায় প্রতিটি সেক্টরে পেয়েছেন বিস্ময়কর সাফল্য। ১৯৬৪ সালে তৎকালীন পাকিস্তান রেডিওতে গীতিকার হিসেবে তাঁর পথচলা শুরু হয়। ১৯৬৮ সালে ‘পিচ ঢালা পথ’ ছায়াছবির মধ্য দিয়ে তিনি চলচ্চিত্রের গান লেখার সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। পরবর্তীতে এ দেশের চলচ্চিত্রের অতুলনীয় ও অপরিহার্য  গীতিকারের কাতারে নিজের নাম লেখান গাজী মাজহারুল আনোয়ার। তিনি প্রায় ২০ হাজার গান রচনা করেছেন। এর মধ্যে বিবিসি বাংলা নির্বাচিত সর্বকালের সেরা ২০টি বাংলা গানের তালিকায় স্থান পেয়েছে গুণী এই গীতিকারের ৩টি গান।  ‘জয় বাংলা, বাংলার জয়’, ‘একতারা তুই দেশের কথা বল রে এবার বল’, ‘একবার যেতে দে না আমার ছোট্ট সোনার গাঁয়’ ও ‘গানের খাতায় স্বরলিপি লিখে’ ‘আকাশের হাতে আছে একরাশ নীল’ ইত্যাদি গান তাকে কিংবদন্তির কাতারে উন্নীত করেছে। গীতিকারের পরিচয় ছাপিয়ে ১৯৮২ সালে ‘নান্টু ঘটক’ ছায়াছবির মাধ্যমে চলচ্চিত্র নির্মাণ শুরু করেন গাজী মাজহারুল আনোয়ার। গাজী মাজহারুল আনোয়ার দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৭২ সালে প্রেসিডেন্ট স্বর্ণপদক, ২০০২ সালে একুশে পদক ও ২০২১ সালে স্বাধীনতা পদক অর্জন করেন। এ ছাড়া পাঁচবার পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, বাচসাস পুরস্কারসহ অনেক সম্মাননা। তিনি ছিলেন একাধারে প্রযোজক পরিবেশক সমিতির সভাপতি, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের জুরি বোর্ডের সদস্য, সেন্সর বোর্ড সদস্য, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ও বিএনপির সাংস্কৃতিক সংগঠন জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা জাসাসের উপদেষ্টা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর