সোমবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
প্রধানমন্ত্রী আজ দিল্লি যাচ্ছেন

আসবে সম্পর্কের দিকনির্দেশনা, হবে সাত চুক্তি-সমঝোতা

জুলকার নাইন, নয়াদিল্লি থেকে

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের উষ্ণতা বাড়াতে আজ নয়াদিল্লি আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে এই চার দিনের সফরের জন্য ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতি শেষ করেছেন ঢাকা-দিল্লির কর্মকর্তারা। স্বাক্ষরের জন্য প্রস্তুত হয়েছে সাত চুক্তি ও সমঝোতা। অফিশিয়াল প্রস্তুতির পাশাপাশি দিল্লির গুরুত্বপূর্ণ সড়কে হয়েছে সাজসজ্জাও। প্রধানমন্ত্রীর সফর নিয়ে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর সফরে বাংলাদেশের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন অনিষ্পন্ন বিষয়ে সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা অর্জন করা যাবে বলে প্রতীয়মান হয়। চূড়ান্ত সফরসূচি অনুসারে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ দুপুর ১২টায় দিল্লির বিমান বাহিনীর ঘাঁটিতে বিশেষ বিমানে অবতরণ করবেন। বিকালে তাঁর সঙ্গে হোটেলে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর সাক্ষাৎ করবেন। রাতে বাংলাদেশ হাইকমিশনে বিশেষ মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামীকাল রাষ্ট্রপতি ভবনে প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা দেওয়া হবে। মহাত্মা গান্ধীর প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন রাজঘাটে। এরপর হায়দরাবাদ হাউসে হবে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে আনুষ্ঠানিক দ্বিপক্ষীয় বৈঠক ও চুক্তি স্বাক্ষর। মোদির দেওয়া রাষ্ট্রীয় মধ্যাহ্নভোজে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যোগ দেবেন। পরে হবে ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এবং উপ-রাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ। পরদিন কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রিজ (সিআইআই) ও বাংলাদেশের এফবিসিআইর যৌথ আয়োজনে অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি তিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় শহীদ ও গুরুতর আহত ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর ২০০ জন সদস্যের বংশধরদের জন্য বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে মুজিব বৃত্তি প্রদান করবেন। ৮ সেপ্টেম্বর আজমির শরিফে হজরত খাজা মাঈনুদ্দিন চিশতি (রহ.)-এর মাজার জিয়ারত করবেন। ওইদিন বিকালেই তিনি দেশে ফিরে যাবেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিদ্যমান সুসম্পর্ক গভীর হওয়াসহ সার্বিকভাবে এ সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে নতুন নতুন উদ্যোগ গৃহীত হবে। এ সফর বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যকার পারস্পরিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি ও বিদ্যমান গতিশীল সম্পর্ককে আরও সুসংহত করবে বলে আশা করা যায়। সফরের প্রেক্ষাপট বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, চলমান কভিড মহামারি, ইউক্রেন সংকট এবং বিশ্বমন্দার প্রেক্ষাপটে এ সফর দুই দেশের পারস্পরিক সমঝোতা ও সাহায্যের মাধ্যমে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম বা নীতি নির্ধারণে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে প্রতীয়মান হয়। নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রেস মিনিস্টার শাবান মাহমুদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরকে ঘিরে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে গভীর আন্তরিকতা দেখা যাচ্ছে। ভারত এ সফরকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। এ সফরের মধ্য দিয়ে দ্বিপক্ষীয় অনেক ইস্যুর সন্তোষজনক সমাধান সম্ভব হবে। বহুল প্রতীক্ষিত তিস্তা চুক্তিরও অগ্রগতি আসতে পারে এবারের সফরে। এ ছাড়াও দুই দেশের জন্যই থাকবে চমক।

গুরুত্ব পাচ্ছে যেসব বিষয় : প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে বাণিজ্য, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও পানিসহ অন্যান্য বিষয় এ সফরে বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে। দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে দুই দেশের পারস্পরিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি যেমন- দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্প্রসারণ, বিনিয়োগ বৃদ্ধি, বিদ্যুৎ জ্বালানি খাতে সহযোগিতা, জনযোগাযোগ, অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন, নদীর অববাহিকাভিত্তিক পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা, সীমান্ত সুরক্ষা, নিরাপত্তা সহযোগিতা, মাদক চোরাচালান ও মানব পাচার রোধ প্রভৃতি অধিক গুরুত্ব পাচ্ছে। এ ছাড়াও গুরুত্ব পাচ্ছে নিরাপত্তা ইস্যু, আন্তঃসংযোগ, বিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতা, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্প্রসারণ, জনযোগাযোগ, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক, আন্তঃদেশীয় বাস চলাচল, রেল ও নৌপথে যোগাযোগ ইত্যাদি ক্ষেত্রে সহযোগিতা।

সফরসঙ্গী যারা থাকছেন : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১৭০ জনের সফরসঙ্গীর তালিকায় রয়েছেন ১২ জন মন্ত্রী-উপদেষ্টা। তারা হলেন- পররাষ্ট্রমন্ত্রী, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী, রেলমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী। সঙ্গে থাকছেন ৫৪ সদস্যের ব্যবসায়িক প্রতিনিধি দল। এতে আছেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান, এফবিসিসিআইর প্রেসিডেন্ট জসিম উদ্দিন, সাবেক সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ প্রমুখ। বিশিষ্ট ব্যক্তি হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর সফর তালিকায় স্থান পেয়েছেন মানু মজুমদার এমপি, লে. কর্নেল কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বীরপ্রতীক, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন, বাসসের এমডি আবুল কালাম আজাদ ও সংবাদ সম্পাদক আলতামাস কবির। এ ছাড়া আছেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তারা।

সর্বশেষ খবর